খবর৭১ঃ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি কমলেও মৃত্যু থামছে না। চলতি বছর এ পর্যন্ত রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) ডেঙ্গু সন্দেহে ২০৩ জনের মৃত্যুর তথ্য এসেছে। তন্মধ্যে আইইডিসিআর ১০১টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে ৬০ জনের মৃত্যু ডেঙ্গুজনিত বলে নিশ্চিত হয়েছে। বেসরকারি হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা আরো অনেক। এদিকে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮০ হাজার ৪০ জন। একই সময়ে হাসপাতাল থেকে সেবা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭৬ হাজার ৯৩৭ জন।
এছাড়া এবারের ডেঙ্গুতে শিশু মৃত্যুর হারও সর্বোচ্চ বলে জানা যায় আইইডিসিআর সূত্রে। সরকারের এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির মতে, ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত মৃত্যু ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশের বয়সই ১৮ বছরের নিচে। যাদের মধ্যে ১২ জনের বয়স ৫ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। যা মোট মৃত্যুর ২৩ দশমিক ১ শতাংশ। ডেঙ্গুতে নিশ্চিত মৃত ৬০ জনের তথ্য বিশ্লেষণ করে আইইডিসিআরের বিশেষজ্ঞরা জানান, ৬০ জনের মধ্যে ৪০ জনের ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম এবং সাত জনের হেমোরেজিক জ্বর ছিল। ২৩ জনের মধ্যে এর আগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া মৃতদের মধ্যে ২১ জনের বয়সই ১৮ বছরের নিচে।
চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপে চিকিত্সা ব্যয়েই প্রায় ৩৪৬ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। হাসপাতাল ভেদে একেক জন রোগী খরচ করেছেন প্রায় ১১ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত। বিভিন্ন শ্রেণির ১২টি হাসপাতালের রোগীদের তথ্য পর্যবেক্ষণ করে এ গবেষণাটি প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট। পরবর্তীতে হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে চিকিত্সা নেওয়া বিপুলসংখ্যক রোগী ও সরকারের অর্থনৈতিক ক্ষতির হিসাব প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট। যে কোনো রোগে স্বাস্থ্যহানির পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষতিরও মুখোমুখি হন আক্রান্ত ব্যক্তি।
এ বছর ডেঙ্গুর ব্যাপক বিস্তারে সে ক্ষতির মাত্রা ছাড়িয়েছে। আর সে হিসাব করতেই সমীক্ষা চালায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগ। সমীক্ষা বলছে, চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভর্তি ফি, শয্যা ভাড়া, পরীক্ষা ফি, ডাক্তার ফি, ওষুধ ও খাবার খরচ মিলে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালেই একজন ডেঙ্গু আক্রান্তের খরচ হয়েছে ১০ হাজার ৯৫২ টাকা। রেফার হয়ে আসা রোগীর খরচ হয়েছে ২০ হাজার ৪৯৩ টাকা। অন্যদিকে অভিজাত বেসরকারি হাসপাতালে ২ লাখ ১৭ হাজার ১৪ ও সাধারণ হাসপাতালে খরচ হয়েছে ৪১ হাজার ৩১৯ হাজার টাকা। রোগীদের সঙ্গে আসা স্বজনদের থাকা-খাওয়া, যাতায়াত, কর্মঘণ্টাসহ মোট পরোক্ষ ব্যয় ২২৬ কোটি টাকার কথা বলছে সমীক্ষাটি। স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, হয় তো কারো জ্বর হয়েছে। চিকিত্সক হয় তো এজন্য তাকে ডেঙ্গুর টেস্ট দিয়েছেন। এ কারণে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা আমাদের হিসাবে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা। অপ্রত্যাশিত এ ক্ষতি এড়াতে এখনই যুগোপযোগী মহাপরিকল্পনা গ্রহণের তাগিদ অর্থনীতিবিদদের।
আবদুল হামিদ বলেন, কাউকে দায়ী না করে একটা পরিকল্পনা করে আগালে একটা ভালো ফল পাওয়া যাবে। সরকারি হিসাবে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৬০, যাদের গড় বয়স ৩০। মাথাপিছু আয়ের নিরিখে যে ৬০ জন মারা গেছেন তাদের আর্থিক ক্ষতি ধরা হয়েছে সাড়ে ৩৯ কোটি টাকা। ভবিষ্যতে এ ধরনের ক্ষতি এড়াতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ গবেষকদের।