খবর৭১ঃ
জাতীয় পার্টিতে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচন ও দলীয় চেয়ারম্যান পদ নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের অবসান হয়েছে। এতে দলের প্রয়াত চেয়ারম্যান এরশাদের ভাই জি এম কাদেরকে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে মেনে নেওয়া এবং স্ত্রী রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে রাজধানীর বারিধারার কসমোপলিটন ক্লাবে উভয় পক্ষের মধ্যে এক বৈঠকে এ সমঝোতা হয়।
বৈঠকের পর জাতীয় পার্টির দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য এ এস এম ফয়সাল চিশতী ও কাজী ফিরোজ রশীদ এ তথ্য জানিয়েছেন। তাঁরা আরো জানিয়েছেন, দুই পক্ষের আরেক বিরোধ রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনে দলের প্রার্থী নিয়ে বৈঠকে সমঝোতা হয়নি। আজ রবিবার জি এম কাদের ও জাপা মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
গত রাতের সমঝোতা বৈঠকে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের পক্ষে কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও মেজর জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এবং রওশনের পক্ষে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ফকরুল ইমাম, মুজিবুল হক চুন্নু ও ফয়সাল চিশতী উপস্থিত ছিলেন।
শক্তি পরীক্ষাঃ এর আগে আজ রবিবার শুরু হতে যাওয়া জাতীয় সংসদের চতুর্থ অধিবেশনকে সামনে রেখে নিজেদের শক্তি পরীক্ষায় গতকাল শনিবার দিনভর দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন জি এম কাদের ও রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন দুই পক্ষ। সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচন নিয়েই ছিল এ দৌড়ঝাঁপ। দলের বেশিসংখ্যক এমপি নিজেদের পক্ষে রেখে স্পিকারের কাছে নিজেদের অবস্থানের প্রমাণ প্রতিষ্ঠা করতে তারা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছিলেন। বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচন করতে আজ সকাল ১১টায় জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার কক্ষে সংসদীয় দলের সভা ডেকেছেন রওশন এরশাদ। অন্যদিকে জি এম কাদেরও দলের সংসদ সদস্যদের সঙ্গে লাগাতার বৈঠক করছেন।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, নিজেদের মধ্যে শেষ পর্যন্ত সমঝোতা করতে না পারলে কাদের-রওশন দুজনই হেরে যেতে পারেন। জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্যসংখ্যা ২০-এর নিচে নেমে এলে বিধি অনুযায়ী বিরোধী দলের মর্যাদা হারাবে দলটি। সে ক্ষেত্রে বিরোধীদলীয় নেতা, উপনেতা, চিফ হুইপ কোনো পদই থাকবে না জাতীয় পার্টির। এ অবস্থায় গতকাল রাতে দুই পক্ষের সমঝোতায় আপাতত সেই আশঙ্কা দূর হলো।
সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। গত ১৪ জুলাই তাঁর মৃত্যু হয়। জাপা চেয়ারম্যানের মৃত্যুতে শূন্য হয় জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার আসন। এখন কে বসবেন বিরোধীদলীয় নেতার আসনে, এ নিয়ে জাতীয় পার্টিতে বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। বিরোধীদলীয় নেতার পাশাপাশি জাপার চেয়ারম্যান পদ নিয়েও শুরু হয় চরম বিরোধ। এ নিয়ে এরই মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছে জাতীয় পার্টি। জাপার গঠনতন্ত্রের ২০ ধারার ১ উপধারার ক-তে প্রদত্ত পার্টি চেয়ারম্যানের ক্ষমতা অনুসারে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দেওয়া চিঠির বলে এবং পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার অনুমোদনে এরশাদের ছোট ভাই গোলাম মোহাম্মদ কাদের জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে অধিষ্ঠিত আছেন। তবে শুরু থেকেই জি এম কাদেরকে জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে মেনে নেননি রওশন এরশাদ। গত ৪ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে দলীয় গঠনতন্ত্রের কথা উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান, সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদকে পাল্টা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়। এর আগে ৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে জি এম কাদেরকে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা উল্লেখ করে দলের ১৫ জন সংসদ সদস্যের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি স্পিকারকে দেওয়া হয়। ওই চিঠি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রওশন এরশাদ স্বাক্ষরিত আরেকটি চিঠি স্পিকারকে দেওয়া হয়। রওশন এরশাদের চিঠিতে বলা হয়, জি এম কাদেরকে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা করা বিধিসম্মত হবে না। চিঠিতে জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতার স্বীকৃতি না দেওয়ারও অনুরোধ জানানো হয়।
অন্যদিকে জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ কালের কণ্ঠকে বলেন, আলোচনায় দুই পক্ষকে একমত করতে না পারলে দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যের আস্থা যাচাই করতে পারেন স্পিকার। সে ক্ষেত্রে বিরোধীদলীয় নেতা হতে হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্য যাঁর পক্ষে থাকবেন, তিনিই বিরোধীদলীয় নেতা হবেন। তিনি জানান, বর্তমান সংসদে জাতীয় পার্টির আসন ২২টি। বিরোধী দলের মর্যাদা পেতে প্রয়োজন কমপক্ষে ২৫টি আসন। বিশেষ বিবেচনায় জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দলের মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল।
তবে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যসহ জাপার এমপি ২৫ জন। এর মধ্যে ১৯ জন রয়েছেন জি এম কাদেরের সঙ্গে, বাকি ছয়জন রওশন এরশাদের সঙ্গে। এ অবস্থায় বিরোধী দলের মর্যাদা হারাতে পারে দলটি। সে ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি একটি সংসদীয় গ্রুপের মর্যাদা পাবে।