খবর৭১ঃ
মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর থেকেঃ সৈয়দপুরে রেলভূমিতে বসবাসকারী অধিকার সংগঠনের বক্তারা বলেছেন, মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। তার ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে সারাদেশে গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অথচ রেলওয়ে ভ‚-সম্পদ কর্তৃপক্ষ সৈয়দপুরে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে উচ্ছেদ অভিযানের নামে লক্ষাধিক মানুষকে গৃহহীন করার পাঁয়তারা করছে। আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে রেলওয়ের ভূমি নীতি পরিবর্তন করে অপ্রয়োজনীয় রেলভূমিতে বসবাসকারীদের মাঝে জমি বন্দোবস্ত প্রদান করতে হবে। গত বৃহস্পতিবার রাতে সৈয়দপুর শহরের শেরে বাংলা সড়কে অনুষ্ঠিত বিশাল জনসভায় এসব কথা বলেন অধিকার সংগঠনের বক্তারা। জনসভায় অধিকারের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন সভাপতিত্ব করেন।
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য বলেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আজমল হোসেন, সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন বাদল, সৈয়দপুর পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাবু ও সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক, সৈয়দপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক অ্যাড. এসএম ওবায়দুর রহমান, সৈয়দপুর সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও পৌর আ’লীগ নেতা সাখাওয়াৎ হোসেন খোকন, বাম দলের নেতা অ্যাড. তুষার কান্তি রায়, বিএনপি নেতা শওকত হায়াৎ শাহ, শামসুল আলম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উপজেলা কমান্ডার একরামুল হক, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সানজিদা বেগম লাকী, সৈয়দপুর প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাপ্তাহিক পত্রিকা আলাপন সম্পাদক আমিনুল হক, অধিকারের সাধারণ সম্পাদক হাজী তাসলিম, অধিকার’র নেতা আশরাফুল হক বাবু, সাবেক পৌর কমিশনার মো. কায়সার, সাবেক পৌর কাউন্সিলর আখতার হোসেন ফেকু, সাবেক কমিশনার আবুল কাশেম দুলু সরকার, জাপা নেতা আলতাফ হোসেন, যুব সংহতি নেতা রওশন মাহানামা, ক্যাম্পবাসীদের নেতা মাজিদ ইকবাল, মাইক্রোপিকআপ শ্রমিক নেতা মানিক মিয়া, রেল শ্রমিক নেতা আনোয়ার হোসেন বাঙালী প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন, রেলওয়ের পরিত্যক্ত জমিতে বসবাসকারীদের আশ্রয়হীন করা যাবে না। রেলভূমিতে বসবাসকারীদের ৭২ বছরের পঞ্জিভূত সমস্যার সমাধান করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি এবং সংবাদ সম্মেলন করে উচ্ছেদ অভিযানের তৎপরতা বন্ধ করে সমস্যার সমাধানের দাবি জানিয়েছি। অধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে রেলভূমিতে বাসকারীদের উচ্ছেদ বন্ধে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর মানববন্ধন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। মানববন্ধন থেকে রেলভূমি বন্দোবস্ত দেয়ার দাবি জানানো হবে। এতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অবস্থান পরিবর্তন না হলে আরও কঠিন কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়া হবে। বক্তারা বসবাসকারীদের বিভ্রান্ত না হয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান। বক্তারা আরও বলেন, অধিকার রেলওয়ের প্রয়োজনীয় জমি দখল মুক্ত করতে কোন বাধা দেবে না, বরং রেল তার প্রয়োজনীয় জমি চিহ্নিত করলে অধিকারের পক্ষ থেকে দখলমুক্ত করতে সক্রিয় সহযোগিতা করা হবে।
তবে উচ্ছেদের নামে অপ্রয়োজনীয় জমি থেকে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ মেনে নেয়া হবে না। অপ্রয়োজনীয় জমি চিহ্নিত করে বসবাসকারীদের মাঝে বরাদ্দ বা বন্দোবস্তের ব্যবস্থা করতে হবে, কাউকে গৃহহীন করা হলে তা হবে সরকারের ঘোষিত নীতির পরিপন্থি। বক্তারা বলেন, একটি মহল অসৎ উদ্দেশ্যে বাস্তুহারা সংগঠনের নামে রেলভূমিতে বসবাসকারীদের মাঝে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছে। ওই মহলটি আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী বানচাল করতে মানুষের মাঝে গুজব ও উস্কানীমূলক বক্তব্য দিয়ে সৈয়দপুরকে অশান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বক্তারা রেলভূমিতে বসবাসকারীদের সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, ওই নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী মহলকে প্রশ্রয় দেবেন না। বরং তাদের অপরাজনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।
অধিকারের আন্দোলনকে ক্ষতি করতে তারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।বক্তারা বাস্তুহারা নামধারী চিহ্নিত মহলের উদ্দেশ্যে বলেন, তার অনুসারীদের নিয়ে বৈঠক করে সৈয়দপুর শহরকে অশান্ত করার মদদ দিচ্ছেন। বক্তারা বলেন মেয়র সাহেবকে বলবো আপনি রাজনীতি করতে চাইলে জনগণের কাতারে এসে রাজনীতি করুন, আপনাকে কেউ বাধা দেবে না। এর অন্যথা করা হলে জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। সভায় বক্তারা পৌর মেয়রের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি সত্যি সত্যি যদি রেলভূমিতে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ বন্ধ চান, তাহলে অধিকার সংগঠনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে আমাদের সংগঠনের সঙ্গে সামিল হোন।
এ সংগঠন সকলের, এ সংগঠনে আপনার থাকতে আপত্তি কোথায়? অথচ আপনি রেলভূমিতে বসবাসকারীদের মাঝে বিভক্তি তৈরী করে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করছেন। শান্তিপূর্ণ সৈয়দপুর শহরে আইন-শৃঙ্খলা বিরোধী উত্তেজনা ছড়িয়ে সন্ত্রাস ও নাশকতাকে উসকে দিচ্ছেন। এসব অপরাজনীতি বন্ধ না করলে জনগণই আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। সভাটি সঞ্চালন করেন অধিকার সংগঠনের নেতা জোবায়দুর রহমান শাহীন ও মীর সানোয়ার আলী। গভীর রাত পর্যন্ত চলা জনসভায় রেলভূমিতে বসবাসকারী বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষসহ সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন।