খবর৭১ঃ
অ্যাকনে, ত্বকের সমস্যা কিংবা সূর্যের রোদ থেকে হওয়া দাগছোপ সুন্দর ত্বকের চিরশত্রু। একবার এলে আর যেতেই চায় না। দাগছোপ দূর করার ১০ টি ঘরোয়া সমাধান নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন-
ত্বকের খুঁত ঢাকতে আমরা কত কিছুই না করি। ত্বকের সঙ্গে রং মিলিয়ে ফাউন্ডেশন, কনসিলার, কারেক্টর, একগাদা প্রডাক্ট ব্যবহার করি। এতে সমস্যা সাময়িকভাবে গা ঢাকা দেয় ঠিকই, কিন্তু কমে না। তাছাড়া যেখানে সময়ের অভাবে নিশ্বাসও গুণে নেওয়ার জোগাড়, সেখানে সাজগোজের এত ঘটা মেনে চলাও অসম্ভব। অন্যদিকে পেপারে, টিভিতে বিজ্ঞাপনে ঝকঝকে মুখ দেখে সব ধরনের ক্রিম, লোশনও ব্যবহার করে ফেলেছেন। কিন্তু সমস্যার তাতে কাঁচকলা! সে যেখানে থাকার সেখানেই রয়ে গেছে। মূলত সূর্যের তাপ বা রোদ থেকেই পিগমেন্টেশনের সমস্যা হয়।
তাই বলে যদি আপনাদের বলি, সূর্যের রোদ পুরোপুরি এড়িয়ে চলতে, সেটা তো সম্ভব নয়। অর্থাৎ দাগছোপ সম্পূর্ণভাবে আটকানোর রাস্তা নেই। না, না, গালে হাত দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলার কিছু নেই। দাগছোপ আটকানোর পথ না থাকলেও, তা হালকা করার উপায় কিন্তু রয়েছে। আর তা কার্যকরী করতে বেশি কাঠ-খড় পোড়ানোরও প্রয়োজন নেই। রান্নাঘরে একটু উঁকি মেরে দেখুন, দেখবেন ঝুলি থেকে একটা নয়, একগাদা অস্ত্র বেরিয়ে এসেছে। গুণে গুণে দশটা উপকরণের খোঁজ দিলাম। সবক’টাই যে ব্যবহার করতে হবে, তা নয়। নিজের পছন্দ আর সুবিধে মতো একটা বা দু’টো উপাদান ব্যবহার করুন। তবে তা নিয়মিত হওয়া চাই। খুবই পরিচিত উপাদান এবং তাদের উপকারিতা সম্পর্কেও সকলেই অবগত। শুধু একটু সময় বের করে সেগুলো ব্যবহার করতে হবে। তাহলেই দেখবেন দাগছোপ চিরতরে দূর হয়েছে।
পাতিলেবুঃ
পাতিলেবুতে রয়েছে সাইট্রিক অ্যাসিড যার ব্লিচিং প্রপার্টি সম্পর্কে আমরা সকলেই জানি। তাই ত্বকের দাগ-ছোপ নিয়ে যাঁরা চিন্তিত, তাঁরা পাতিলেবুকে কাজে লাগাতে পারেন। পুরনো, জেদী দাগ-ছোপ হালকা করতেও পাতিলেবুর বেশ সুনাম রয়েছে। টাটকা পাতিলেবু চিপে রস বের করে নিন। তুলো সরাসরি এই রসে ভিজিয়ে দাগের উপর লাগাতে পারেন। যদি সেনসিটিভ স্কিন হয়, সেক্ষেত্রে সামান্য পানি মিশিয়ে রস পাতলা করে নিন। অথবা লেবুর রসের সঙ্গে সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে নিন। ১০-১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহার করলে ১৫ দিনেই পার্থক্য দেখতে পাবেন।
আলুঃ
দাগছোপ দূর করতে আলুও কিন্তু ভীষণ কার্যকরী। হাইপারপিগমেন্টেশন বা মেচেতার সমস্যা থাকলেও আলু ব্যবহার করে দেখতে পারেন। আলুতে রয়েছে ক্যাটেকোলেজ় নামক এক ধরনের উৎসেচক, যা ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। আলুর খোসা ছাড়িয়ে একটু মোটা করে স্লাইস করে নিন। একটা স্লাইসের উপর কয়েক ফোঁটা জল দিয়ে তা ত্বকে সার্কুলার মোশনে ঘষুন। ৫-১০ ঘষার পর ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন দু’বেলা এই পদ্ধতি রিপিট করলে একমাসেই দেখবেন দাগছোপ গায়েব হয়েছে। খুব ভাল হয় যদি এর সঙ্গে লেবুর রস ব্যবহার করেন। আলু কুরিয়ে তাতে লেবুর রস মিশিয়ে মাস্ক হিসেবে মুখে লাগিয়ে রাখুন। আধঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন।
অ্যাপল সিডার ভিনিগারঃ
দাগছোপের প্রসঙ্গ উঠলে অ্যাপল সিডার ভিনিগারকে ভুললে চলবে না। দাগছোপ দূর করতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে এই উপাদান। ত্বক উজ্জ্বল করতেও এর জুড়ি মেলা ভার। সমপরিমাণ অ্যাপল সিডার ভিনিগার এবং পানি মিশিয়ে নিন। তুলোয় করে এই মিশ্রণ প্রয়োজনীয় অংশে লাগান। কয়েক মিনিট রেখে ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দিনে দু’বার করে কয়েক সপ্তাহ এই রুটিন মেনে চলুন। উপকার পাবেন। অনেক সময় শরীরে জমে থাকা টক্সিনের কারণেও মুখে দাগছোপ দেখা দেয়। সেক্ষেত্রেও কিন্তু কাজে লাগাতে পারেন অ্যাপল সিডার ভিনিগার। কারণ এটি শরীর থেকে টক্সিন ফ্লাশ আউট করতেও অব্যর্থ। আধ গ্লাস ঈষদুষ্ণ পানিতে দু’ চা-চামচ অ্যাপল সিডার ভিনিগার এবং এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে নিন। সকালে ও রাতে এই মিশ্রণ খেলেও উপকার পাবেন।
ভিটামিন ইঃ
ত্বক ভাল রাখতে ভিটামিন-ই-এর ভূমিকা সম্পর্কে নিশ্চয়ই সকলে জানেন। ত্বকে নতুন কোষ তৈরি করতে এই ভিটামিন আবশ্যক। আর দাগছোপ দূর করতে চাইলে ত্বকের নতুন কোষ তৈরির দিকে নজর না দিয়ে উপায় নেই। কারণ দাগছোপ সাধারণত ত্বকের উপরের স্তরেই থাকে। ত্বকের সেল রিনিউয়াল যত তাড়াতাড়ি হবে, ততই দ্রুত হ্রাস পাবে দাগছোপ। এটি সূর্যের রোদ থেকে ত্বকের ক্ষতি হওয়াও কমায়। যে কোনও স্কিনকেয়ার অয়েল বা ময়শ্চারাইজের সঙ্গে একটা বা দু’টো ভিটামিন ই ক্যাপসুলের মিশ্রণ মিশিয়ে নিন। রাতে শুতে যাওয়ার আগে প্রতিদিন এই মিশ্রণ মুখে লাগান। পরদিন সকালে মুখ ধুয়ে ফেলুন। হাতে সময় থাকলে মাস্ক বানিয়েও ব্যবহার করতে পারেন। আধকাপ মুলতানি মাটি, এক টেবলচামচ পেঁপে এবং দু’টো ভিটামিন ই ক্যাপসুল একসঙ্গে মিশিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। এটি মুখে লাগিয়ে রাখুন। ২০ মিনিট রেখে ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এছাড়া ভিটামিন ই অয়েলও সরাসরি মুখে লাগাতে পারেন। ১০ মিনিট রেখে মুখ ধুয়ে নিন। উপকার পাবেন।
হলুদঃ
রান্নাঘরের অতিপরিচিত উপাদান হলুদেরও ব্লিচিং প্রপার্টি রয়েছে, যা হাইপারপিগমেন্টেশন থেকে শুরু করে ত্বকের যে কোনও দাগছোপ হালকা করতে এবং ত্বক উজ্জ্বল করতে অব্যর্থ। অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ক্ষমতাসম্পন্ন হলুদ ত্বককে বিভিন্ন জীবাণুর হাত থেকেও রক্ষা করে। এক চা-চামচ করে হলুদগুঁড়ো এবং লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে দাগের উপর লাগান। ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এই মিশ্রণ ব্যবহার করার পর অন্তত একঘণ্টা রোদে বেরনো চলবে না। স্নানের আগে এই প্যাক ব্যবহার করতে পারলে সবথেকে ভাল। পাতিলেবুর রসে সমস্যা থাকলে তার পরিবর্তে দুধও ব্যবহার করতে পারেন। ৫ মিনিট ত্বকে ভালভাবে মাসাজ করে ধুয়ে নিন।
অ্যালোভেরাঃ
মিউসিলোজোস পলিস্যাকারাইড থাকার দরুণ অ্যালোভেরা জেলও হয়ে উঠতে পারে দাগছোপ তাড়ানোর মোক্ষম দাওয়াই। এটি ত্বকের উপরে স্তরে থাকা মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে এবং নতুন কোষ তৈরির প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত করে। বাজার চলতি অ্যালোভেরা জেলের পরিবর্তে টাটকা অ্যালোভেরা জেলই এক্ষেত্রে বেশি কার্যকরী হবে। পুরো মুখে লাগিয়ে সারারাত রেখে সকালে মুখ ধুয়ে ফেলুন। কয়েক সপ্তাহ প্রতিদিন এই পদ্ধতি রিপিট করুন।
কমলালেবুর খোসাঃ
ভিটামিন ই-এর মতো ভিটামিন সিও ত্বকের দাগছোপ দূর করতে সাহায্য করে। কমলালেবুতে সাইট্রিক অ্যাসিডের পাশাপাশি ভিটামিন সিও থাকে। আর কমলালেবুর খোসা স্ক্রাব হিসেবে খুব ভাল। এটিও ত্বকের সেল রিনিউয়াল পদ্ধতি ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে। কমলালেবুর খোসা রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিন। এর সঙ্গে সামান্য পাতিলেবুর রস, দুধ এবং মধু মিশিয়ে স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করুন। হালকা হাতে সার্কুলার মোশনে স্ক্রাব করে ২০ মিনিট রেখে দিন। এই মিশ্রণ প্রতিদিন ব্যবহার করলে দাগছোপ দূর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বক কোমল হবে এবং ত্বকের জেল্লাও বাড়বে।
অ্যাভোকাডোঃ
ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ওলেইক অ্যাসিডের মতো ত্বকের উপকারী একাধিক উপাদানে সমৃদ্ধ অ্যাভোকাডো দাগছোপ দূর করতে খুবই কার্যকরী। একটা পাকা অ্যাভোকাডোর ক্বাথ বের করে চটকে নিন। এই মিশ্রণ সরাসরি ত্বকে লাগাতে পারেন। আধঘণ্টা রেখে ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। অথবা পাকা অ্যাভোকাডোর ক্বাথের সঙ্গে সামান্য দুধ এবং মধু মিশিয়ে প্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। দাগের উপর লাগিয়ে শুকোনো অবধি অপেক্ষা করুন। একমাস নিয়মিত এই প্যাক ব্যবহার করলেই ফল গ্যারান্টিড।
চন্দনঃ
অনেকসময় অ্যাকনে চলে গেলেও তার জেদী দাগ কিছুতেই যেতে চায় না। সেই ধরনের দাগছোপের জন্য ব্যবহার করতে পারেন চন্দন। এটি কমপ্লেকশন উজ্জ্বল করতেও সাহায্য করে। পাশাপাশি অ্যাকনে হওয়া প্রতিরোধ করে এবং অ্যাকনের দাগ ত্বকে বসতে দেয় না। এটি ত্বককে ঠান্ডা রাখতেও সাহায্য করে। ত্বক প্রাণবন্ত এবং যৌবনোচ্ছ্বল রাখতে নিয়মিত চন্দন ব্যবহার করতে পারেন। ২ টেবলচামচ চন্দনগুঁড়ো খানিকটা গোলাপজলের সঙ্গে মিশিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। আধঘন্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার বা দু’বার এই মিশ্রণ ব্যবহার করুন।
আমন্ডঃ
এটিও স্ক্রাব হিসেবে দারুণ কার্যকরী। আর যেহেতু এতে ভিটামিন ই রয়েছে, তাই দাগছোপ হালকা করতেও অনায়াসে ব্যবহার করা যায়। কয়েকটা আমন্ড সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে সেই জলসহ আমন্ড বেটে নিন। অল্প দুধ এবং পাতিলেবুর রস মেশাতে পারেন। এই মিশ্রণ দাগের উপর সার্কুলার মোশনে ঘষুন। রাতে শুতে যাওয়ার আগে লাগাতে পারেন। সারারাত রেখে পরদিন সকালে ধুয়ে ফেলুন।
দেখলেন তো, দাগছোপ দূর করার কত উপায়। যে দশটা উপকরণের কথা বললাম, প্রত্যেকটাই খুবই সহজলভ্য আর খুব একেবারেই সময়সাপেক্ষ নয়। সুতরাং কোনও অজুহাতই কিন্তু খাটবে না। সুন্দর দাগহীন ত্বকের জন্য এটুকু তো করাই যায়।