খবর৭১ঃ
চোট খেলতে দেয়নি বিশ্বকাপে। পরে শ্রীলংকা সিরিজে দলে থাকলেও খেলা হয়নি একটি ম্যাচও। সাদা পোশাকে দুই বছর পর তাসকিন আহমেদকে আবারও দেখা যাবে কিনা সেটা ম্যাচ শুরু হলেই বোঝা যাবে। এই পেসারকে দলে রেখেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের জন্য ১৫ সদস্যের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। চমক হচ্ছে, দলে রাখা হয়নি বাঁ-হাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানকে। নতুন কোনো ক্রিকেটারকে এই সিরিজে সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। ব্যাটসম্যান কোটায় অভিজ্ঞ সব ক্রিকেটারকেই রাখা হয়েছে।
তাসকিন আহমেদ, আবু জায়েদ রাহী ও এবাদত হোসেন-এই তিন পেসারকে দলে রাখা হয়েছে। তাসকিন সবশেষবার টেস্ট খেলেছিলেন ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে দকিষণ আফ্রিকা সফরে। এরপর অবশ্য রঙিন পোশাকে তাকে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু চোট আর অফ ফর্মের কারণে এ স্পিড স্টার ছিলেন মাঠের বাইরে। তবে ঘরোয়া ও বয়সভিত্তিক দলগুলোর হয়ে ভালো করায় ফের ফিরলেন টাইগারদের সাদা পোশাকে।
ইনজুরির জন্য সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের সর্বশেষ টেস্ট সিরিজে খেলেননি। সাকিব আল হাসানকে অধিনায়ক রেখে শুক্রবার দল ঘোষণা করে বিসিবি। স্পিনার হিসেবে সাকিবের সঙ্গে থাকছেন মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসান। শ্রীলংকা ইমার্জিং দলের বিপক্ষে চারদিনের ম্যাচে এক ইনিংসে ৭ উইকেট পাওয়ার পুরস্কার পেলেন নাঈম হাসান।
নিউজিল্যান্ডের মাঠে সর্বশেষ যে টেস্ট দল খেলেছিল, সেটার ওপরেই মোটামুটি ভরসা রেখেছেন নির্বাচকেরা। সেই দলে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ছিলেন না, তিনি এসেছেন এবার। মোসাদ্দেক ২০১৭ সালে শ্রীলংকায় অভিষেক টেস্টে দারুণ করেছিলেন। এরপর গত বছর চট্টগ্রামে সেই শ্রীলংকার বিপক্ষে টেস্টে খেলেছিলেন, যদিও বেশি কিছু করতে পারেননি। গত কিছুদিনে আবার সীমিত ওভারে থিতু হয়েছেন, সেটিরই পুরস্কার পেলেন টেস্ট দলে ডাক পেয়ে। সর্বশেষ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চলতি বছরের টেস্ট সিরিজে যে দলটি খেলেছিলো সেই দলের মধ্যে থেকে তামিম ইকবাল, পেসার খালেদ আহমেদ এবং মুস্তাফিজুর খেলছেন না আফগানিস্তানের বিপক্ষে এক ম্যাচের টেস্ট সিরিজে।
মূলত একটা পজিশন নিয়েই ছিল জল্পনা কল্পনা। তামিম ইকবাল না থাকায় ওপেনিংয়ে সাদমান ইসলামের সঙ্গী কে হবেন, সেটা নিয়ে ছিল আলোচনা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শান্ত, সাইফ হাসান বা জহুরুল ইসলামদের কাউকেই নেওয়া হলো না। সেখানে তাই সাদমানের সঙ্গে ওপেন করবেন সৌম্য সরকার বা লিটন দাসদের মধ্যেই হয়তো কেউ। তামিম ইকবাল বিশ্রাম চেয়ে ছুটিতে আছেন। খালেদ আহমেদ ভুগছেন ইনজুরি সমস্যায়। কিন্তু মুস্তাফিজুর রহমানের টেস্ট দল থেকে বাদ পড়াটা সত্যিকার অর্থেই অবাক করার মতোই সিদ্ধান্ত।
পারফরমেন্স নয়, ইনজুরির কারণে মুস্তাফিজুর রহমান আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের সিরিজে নেই। অনুশীলন ক্যাম্পে হঠাৎ করে পিঠের ইনজুরিতে পড়েন মুস্তাফিজ। চট্টগ্রাম টেস্টে তাকে পুরোমাত্রায় ফিট অবস্থায় পাওয়া যাবে কি না- সেই সংশয় আছে, তাই নির্বাচকরা ঝুঁকি নেননি। তাকে দলে রাখেননি। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু শুক্রবার দল ঘোষণার পর সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান। তবে মুস্তাফিজের পিঠের চোটের কথা বলা হলেও বৃহস্পতিবার বিসিবি একাডেমির মাঠে তিনি বেশ লম্বা সময় ধরে প্রায় কোনো সমস্যা ছাড়াই ব্যালেন্সিং এক্সারসাইজ চালিয়ে যান!
সাধারণত পিঠের চোটে পড়া কোনো ক্রিকেটারকে ট্রেনার এত লম্বা সময় ধরে এমন কঠিন ব্যায়াম করার অনুমতি দেন না। কিন্তু এক্সারসাইজ সেশনে ট্রেনার ইফতিখারুল ইসলাম প্রায় বিশ মিনিট ধরে মুস্তাফিজকে এক পায়ে ভারসাম্য রাখার কঠিন এক্সারসাইজ করান। এক্সারসাইজের পুরোটা সময় মুস্তাফিজ বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই কাটিয়ে দিলেন!
মুস্তাফিজের ইনজুরির ব্যাখায় মিনহাজুল আবেদিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘কন্ডিশনিং ক্যাম্পের অনুশীলন চলাকালেই মুস্তাফিজের হালকা ইনজুরিতে ছিল। বৃহস্পতিবার তার সেই ইনজুরিটা আরেকবার পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। যেহেতু এক টেস্টের সিরিজ এটা, তাই আমরা বাড়তি কোনো ঝুঁকি নিচ্ছি না। সামনে আমাদের আরও অনেক টেস্ট ম্যাচ আছে। ভারতের মাটিতে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ আছে। তা ছাড়া এখানে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শেষে তিন জাতি টি২০ সিরিজ আছে। সেই ম্যাচগুলোতে তাকে যাতে পুরো ফিট অবস্থায় পাওয়া যায়, সেজন্যই আমরা তাকে এখন বিশ্রামে রাখছি, এই সিরিজে।’
ক্রিকেট দলের আরেক নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন জানান-‘মুস্তাফিজের ইনজুরির এমআরআই করা হয়েছে। পিঠে ব্যথা আছে। তবে এমআরআই রিপোর্টে বড় কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি।’ তামিম ইকবাল এই টেস্ট সিরিজে বিশ্রামে আছেন। তার জায়গায় অন্তত অভিজ্ঞতার হিসেবে ইমরুল কায়েসের নামও নির্বাচকদের বিবেচনায় ছিল। কিন্তু ছেলের ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে ইমরুলকে এখন হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে।
মিনহাজুল বলছিলেন, ‘তামিম এই সিরিজে নেই। তাই ইমরুল কায়েসের কথাও আমরা চিন্তা করেছিলাম। কিন্তু আমাদের তো ব্যাক আপ ওপেনার আছে। সৌম্য সরকার আছে। লিটন দাসও ওপেনার। কিন্তু ইমরুলের ছেলে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত। ছোট বাচ্চা ছেলেটা হাসপাতালে। তাই ইমরুল তো এখন অনুশীলন ক্যাম্পেও নেই। আশা করছি দ্রম্নত তার ছেলে সুস্থ হয়ে উঠবে। ইমরুলও ক্রিকেটে ফিরবে। মূলত এই কারণেই চূড়ান্ত বিবেচনায় তাকে রাখা সম্ভবপর হয়নি।’
বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মধ্যকার একমাত্র টেস্ট ম্যাচ শুরু হবে ৫ সেপ্টেম্বর, চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। আফগানিস্তান দল শুক্রবার সকালে ঢাকায় পৌছে বিমান বন্দর থেকেই চট্টগ্রামে চলে যায়।
টেস্ট ম্যাচের আগে আফগানিস্তান চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে একটি দুদিনের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে। যে ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ বিসিবি একাদশ।