খবর৭১ঃ
চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে ৬৮ হাজার ৪১০ জন ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১ আগস্ট সকাল ৮টা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৪৯ হাজার ৯৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। যা ২০১৮ সালে সারা বছরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যার প্রায় পাঁচগুণ।
এদিকে গতকাল ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরো তিন জন মারা গেছেন। নতুন ডেঙ্গু রোগী কমে এলেও ঢাকার বাইরে এখনো তা বেশি। দুই সপ্তাহ ধরে প্রতিদিনই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার বাইরের হাসপাতালে বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপের শুরুতে আক্রান্ত রোগীদের অধিকাংশই ছিল ঢাকার। পরে ঢাকার বাইরে স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়তে থাকে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার জানান, মাস অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩৮ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৮, মার্চে ১৭, এপ্রিলে ৫৮, মে মাসে ১৯৩, জুনে ১ হাজার ৮৮৪, জুলাইয়ে ১৬ হাজার ২৫৩ এবং আগস্টে (২৯ আগস্ট পর্যন্ত) ৪৯ হাজার ৯৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৬৩ হাজার ২০০ জন অর্থাৎ ৯২ শতাংশ রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সরকারি হিসেবে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৫২ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে এপ্রিলে ২, জুনে ৫, জুলাইয়ে ২৮ ও চলতি আগস্ট মাসে ১৭ জন মারা গেছেন।
আরো ৩ জনের মৃত্যু: বুধবার রাতে পাবনার বেড়ায় মোহাম্মদ আলী মকো (৫০) নামের এক ব্যক্তি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তিনি উপজেলার আমিনপুর থানার দীঘলকান্দি গ্রামের মৃত আছাদ প্রামাণিকের ছেলে। এক সপ্তাহ আগে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হলে কাশীনাথপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে টেস্ট করলে ডেঙ্গু পজেটিভ ধরা পড়ে। ঐ দিনই তাকে সিরাজগঞ্জ খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়।
দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মনিষা নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের বন্ধুগাঁও গ্রামের মো. মোকবুল হোসেন স্ত্রী-কন্যাসহ সম্প্রতি ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে যান। ঢাকা থেকে আসার পর মনিষা আকতার (১৩) ও তার মা মেরিনা আকতার জ্বর মাথাব্যথা নিয়ে বোচাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হলে সেখানেই মা ও কন্যার ডেঙ্গু জ্বর শনাক্ত করা হয়।
উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের দিনাজপুরে এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে মা মেরিনা বেগম কিছুটা সুস্থ হলেও কর্তব্যরত চিকিৎসক কন্যা মনিষা আক্তারকে আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। বুধবার দিবাগত রাত ৩টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মনিষা মারা যায়।
এছাড়া রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে গতকাল ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে শারমিন আক্তার (৩০) নামে একজন মারা গেছেন। বুধবার রাত ৮টার দিকে তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে এ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তার আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন ছিল। আইসিইউতে থাকা অবস্থায়ই তিনি গতকাল ভোর চারটার দিকে মারা যান।
ঢাকার বাইরে বেশি রোগী: স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে রাজধানীর চেয়ে ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী বেশি ভর্তি হচ্ছেন। গত ২৩ আগস্ট থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তিকৃত মোট সংখ্যা ৮ হাজার ৮২০ জন। তাদের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৪ হাজার ১২৬ জন ও ঢাকার বাইরে ৪ হাজার ৬৯৪ জন ভর্তি হয়েছেন। সেই হিসেবে ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ৫৬৮ জন বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের হাসপাতালে মোট ১ হাজার ১৮৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন। তাদের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৫২৪ জন এবং ঢাকার বাইরে ৬৬৫ জন ভর্তি হন।