দুদকে ৫৩ এজেন্সির ফাইল

0
594
দুদকে ৫৩ এজেন্সির ফাইল

খবর৭১ঃ
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ভুয়া টিকিট বুকিং বাতিল করে বছরে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া সংক্রান্ত কারসাজির ফাইল যাচ্ছে দুদকে। প্রাথমিকভাবে তদন্তের জন্য ৩ গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম (জিডিএস) ও ৫৩ ট্রাভেল এজেন্সির ফাইল পাঠানো হবে দুদকে। চুক্তির মারপ্যাঁচে ফেলে এই খাত থেকে গত ১০ বছরে অবৈধভাবে ১২শ’ কোটি টাকার বেশি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেট।

শুধু বিমানকেন্দ্রিক এই বুকিং বাতিল করার অনৈতিক কাজে ৫৩ থেকে ১০০টি ট্রাভেল এজেন্সি গড়ে তোলা হয়েছে। বুকিং বাতিলের কর্মযজ্ঞে শুধু দেশে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এগুলোর অধিকাংশের মালিকানার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৩ জিডিএস কোম্পানি ও বিমানের শীর্ষস্থানীয় একাধিক ব্যক্তি এবং প্রভাবশালী কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সি জড়িত। বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের তদন্ত রিপোর্টের সুপারিশ অনুযায়ী যেসব এজেন্সির ৭৫ শতাংশের ওপরে বুকিং বাতিল হয়েছে তাদের দুদকের তদন্তের আওতায় আনা হবে। মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রাথমিকভাবে ৩ জিডিএস কোম্পানি ও ৫৩ ট্রাভেল এজেন্সির তথ্য-উপাত্ত দুদকে পাঠানো হবে। এসব এজেন্সির মাধ্যমে কিভাবে ভুয়া বুকিং হতো এবং জিডিএস কোম্পানি সেসব বুকিং বাতিল করে গত ১০ বছরে কত টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তা খুঁজে বের করা হবে। একই সঙ্গে কারা এই সেক্টরের গডফাদার তাদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনা। মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত সচিব আতিকুল হক বলেন, এটি হচ্ছে বিমানের নীরব ঘাতক। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে বিমানের পরিকল্পনা শাখা, মার্কেটিং বিভাগ, রেভিনিউ ইন্টিগ্রেটেড সফটওয়্যার শাখা, অডিট বিভাগের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা সরাসরি জড়িত। কিছু কিছু এজেন্সি গড়ে তোলা হয়েছে শুধু ভুয়া বুকিং দেয়ার জন্য। তাদের প্রাথমিক তদন্তে আর্থিক অনিয়মের যে তথ্য পাওয়া গেছে প্রকৃতপক্ষে এই অঙ্ক আরও অনেক বড় হবে। এর সঙ্গে অনেক প্রভাবশালী রাঘববোয়াল জড়িত। তিনি অবিলম্বে ৩ জিডিএসের সঙ্গে করা চুক্তি বাতিল কিংবা সংশোধন করার আহ্বান জানান। দায়ীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনার আহবান জানান।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত শুধু ১০ মাসে টিকিট বুকিং বাতিলের জন্য ৩টি জিডিএসকে ৯৩ কোটি ৯৩ লাখ ৯ হাজার ৮৮৮ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। যার বেশির ভাগ বুকিং ছিল ভুয়া ও উদ্দেশ্যমূলক। আলোচ্য সময়ে ৫টি দেশের ২২ জন এজেন্ট ৮০ শতাংশ বুকিং বাতিল করেছে এবং ৭টি দেশের ৩১ জন এজেন্ট ৭৫ শতাংশ টিকিট বুকিং বাতিল করেছে।

বিশাল এই অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়া ৩ জিডিএ কোম্পানি হল অ্যামাডিউস, অ্যাবাকাস-সাবরি ও গ্যালিলিও। বর্তমানে অ্যাবাকাস ও সাবরি একীভূত হয়ে অ্যাবাসকাস নামে কাজ করছে। এর মধ্যে অ্যাবাকাস ও গ্যালিলিওর মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি বুকিং বাতিল হয়েছে। অভিযোগ আছে এই সেক্টরের গডফাদার হচ্ছে গ্যালিলিও। জানা গেছে, দেশের একটি প্রভাবশালী গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান গ্যালিলিওর একজন শীর্ষ ব্যক্তি বিমানের সঙ্গে পুরো ব্যবসাটি নিয়ন্ত্রণ করছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই দুটি কোম্পানির সঙ্গে বিমানের যে চুক্তি হয়েছে তাতে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। চুক্তির অধিকাংশ শর্তই রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিমানের বিরুদ্ধে গেছে। বড় ধরনের আন্ডারহ্যান্ড ডিলিং ছাড়া এমন চুক্তিতে স্বাক্ষর করার কথা না বিমানের কোনো কর্মকর্তার।

যেসব এজেন্সি ৮০ শতাংশের ওপর বুকিং বাতিল করেছে সেগুলোর নাম আবুধাবির আল তারেক আল মুমতাজ (৯৪ শতাংশ), গোল্ডেন ট্রাভেল এলএলসি (৮১ শতাংশ), গোল্ডেন ট্রাভেল (৮১.৩ শতাংশ), আহমেদ ট্রাভেল (৮৪.৪৭ শতাংশ), বাংলাদেশের ঊর্মি ট্রাভেল এজেন্সি (৮২.৭২ শতাংশ), মাদারল্যান্ড ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেল (৮০.৮৯ শতাংশ), চৌধুরী ইন্টারন্যাশনাল (৮১.৬৯ শতাংশ), মুনা ট্রাভেলস ট্যুর (৭৯.৫০ শতাংশ), দারুল ইমান ইন্টা. ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর (৮২.৯২ শতাংশ), বিপ্লব ইন্টারন্যাশনাল (৮০.৭৯ শতাংশ), ট্রাভেল সেন্টার (৮২.১১ শতাংশ)। মালয়েশিয়ার জেএমকে হলিডে ট্রাভেল (৮৩.৬৬ শতাংশ), ওমানের জামাল নাসের ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম (৯০.০৬ শতাংশ), যাওহার বাহার আল আরব ট্রাভেল (৮০.৬৮ শতাংশ)। সৌদি আরবের সুপিরিয়র টিকিটস অ্যান্ড ট্রাভেল (৮২.৫৪ শতাংশ), ইরাদ ইন্টারন্যাশনাল ট্যুর এন্ড ট্রাভেল (৮১.৫৭ শতাংশ), ইন্টারন্যাশনাল টিকিট ফর ট্যুর (৮৩.৪৩ শতাংশ), ফুরসান ট্রাভেল (৮০.৫১ শতাংশ), ট্রানওয়াল্ড ট্যুরিজম অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট (৮৪.৭৬ শতাংশ), দিপা হলিডে অ্যান্ড ট্যুর (৮৭.৬৭ শতাংশ)।

৭৫ শতাংশের ওপরে যারা বুকিং বাতিল করেছে তারা হল- আবুধাবির টাইম ট্রাভেল (৭৭.৪৯ শতাংশ), তারেক আল বার মেরিন কার্গো (৭৫.৪০ শতাংশ)। এয়ার গাইড ট্রাভেল (৭৯.৭৮ শতাংশ), শামস এয়ার ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেল (৭৯.৭৭ শতাংশ), বাংলাদেশের স্কাই ট্রাভেলস (৭৪.৪৯ শতাংশ), বি ফ্রেস ট্রাভেল (৭৬.৬৭ শতাংশ), সাদিয়া ট্রাভেল (৭৬.৯৩ শতাংশ), সাফা এয়ার ট্রাভেল (৭৪.৮৫ শতাংশ), জেএস ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর (৭৪.৫৪ শতাংশ), ময়ূরী এয়ার ইন্টারন্যাশনাল (৭৯.২০ শতাংশ), ওয়ান স্টার ট্রাভেল (৭৭.০৭ শতাংশ), গাউসিয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর (৭৭.২০ শতাংশ), আল আবরার ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেল (৭৭.০৯ শতাংশ), বনানাজ (৭৫.৮২ শতাংশ), এয়ার কনফিডেন্স ইন্টারন্যাশনাল (৭৫.৯৫ শতাংশ), ডিএফ ফ্লাইট পয়েন্ট (৭৪.৯৮ শতাংশ), ট্রাভেল ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিস (৭৬.২২ শতাংশ), গোল্ডেন বেঙ্গল ট্যুর (৭৯.৪৮ শতাংশ), দেশ ব্রাহ্মণ প্রাইভেট লি. (৭৬.৬৩ শতাংশ), কুশিয়ারা ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর (৭৫.১২ শতাংশ)। যুক্তরাজ্যের ইমরান ট্রাভেল (৭৮.৭২ শতাংশ), সুরমা ট্রাভেল প্রাইভেট (ইউকে) লি. (৭৭.৯৫ শতাংশ), মাইফা ট্রাভেলস (৭৬.৪৫ শতাংশ), প্রাইম এক্সপ্রেস (৭৬.৪৬ শতাংশ), সোনার বাংলা ট্রাভেল (৭৮.৭৯ শতাংশ), আলামীন ট্রাভেলস (৭৮.১১ শতাংশ), কুয়েতের ইতারনাইট ইন্টারন্যাশনাল (৭৫.১৪ শতাংশ), জারাল্লা ট্রাভেলস (৭৯.০৭ শতাংশ), আল খালিজ ট্রাভেল (৭৬.৯৩ শতাংশ)। নেপালের কাই ওয়ে ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুর (৭৫.৪৭ শতাংশ), ওমানের ওয়াহিদ ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর (৭৬.১১ শতাংশ), সৌদি আরবের রাবেল ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম (৭৫.৯০ শতাংশ), কিংডম অব ট্রাভেল (৭৫.৩৭ শতাংশ)। এসব এজেন্সির সঙ্গে গত ১০ বছরে বিমানের যে লেনদেন হয়েছে দুদক তা খতিয়ে দেখবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ১০ মাসে বাংলাদেশের ১৫০টি ট্রাভেল এজেন্সি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৯০৭টি টিকিট বুকিং দিয়েছে। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে ২ লাখ ৯০ হাজার ৫৩৩টি টিকিট। এজন্য বিমানকে গুনতে হয়েছে ১০ কোটি ২০ লাখ টাকা। সৌদি আরবের ২৯টি এজেন্সি বুকিং দিয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৬৮৮টি। এর মধ্যে বাতিল হয়ে গেছে ২ লাখ ৭৯ হাজার ৬৮৫টি। এজন্য বিমানকে গুনতে হয়েছে ৮১ হাজার ৩৮ লাখ টাকা। যুক্তরাজ্যের ২১টি এজেন্সি এ সময়ে বুকিং দিয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৭৬১টি এজেন্সি। এজন্য বিমানকে গুনতে হয়েছে ৫৭ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। আবুধাবিতে এ সময় ৩৬টি এজেন্সি বুকিং দিয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার, বাতিল হয়ে গেছে ১ লাখ ১২৭৯টি। এজন্য বিমানকে গুনতে হয়েছে ২৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। মালয়েশিয়ার ৭টি এজেন্সি এক বছরে বুকিং দিয়েছে ১৬ হাজার ৫৩৪টি। বাতিল হয়ে গেছে ১২ হাজার ১১৫টি। বিমানের গচ্চা ৪ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। কুয়েতের ৯টি এজেন্সি বুকিং দিয়েছে ২৬ হাজার ২২১টি, বাতিল হয়ে গেছে ১৯ হাজার ৩৪৩টি। বিমানকে গুনতে হয়েছে ৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা। ওমানের ৯টি এজেন্সি এক বছরে বুকিং দিয়েছে ১৯ হাজার, বাতিল হয়েছে ১৪ হাজার। নেপালের ৩টি এজেন্সি বুকিং দিয়েছে ৯ হাজার ৪২২টি, বাতিল হয়েছে ৬৬১৫টি। কাতারের ২টি এজেন্সি বুকিং দিয়েছে ৩৩৪৯টি, বাতিল হয়েছে ২২৭০টি। সব মিলিয়ে ২৭১টি এজেন্সি ১ বছরে বুকিং দিয়েছে ১৩ লাখ ৫৫ হাজার ২৫১টি। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৩৪৯টি। এজন্য বিমানকে ১০ মাসে গচ্চা দিতে হয়েছে ২৮ কোটি ২১ লাখ টাকা।

জিডিএস কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২০১৮ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ১০ মাসে ৪টি কোম্পানিকে বুকিং বাতিলের জন্য বিল বাবদ বিমানের গুনতে হয়েছে ৯৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে অ্যামাডিউসকে ২৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা, অ্যাবাকাসকে ১৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, গ্যালিলিওকে ৩১ কোটি ১২ লাখ টাকা ও সাবিরিকে ১৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। মাসওয়ারি ২০১৮ সালের জুলাই মাসে অ্যামাডিউসকে বুকিং বাতিলের জন্য পরিশোধ করতে হয়েছে ২৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা, অ্যাবাকাস ১১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা, গ্যালিলিও ২৩ লাখ ৭ হাজার টাকা, সাবারি ১৭ লাখ ১৬ হাজার টাকা। আগস্ট মাসে অ্যামাডিউস ২০ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, অ্যাবাকাস ১২ লাখ ৯ হাজার টাকা, গ্যালিলিও ২০ লাখ ২২ হাজার টাকা, সাবারি ১৪ লাখ ৭ হাজার টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে অ্যামাডিউস ২২ লাখ ৬২ হাজার টাকা, অ্যাবাকাস ১৫ লাখ ৭৯ হাজার টাকা, গ্যালিলিও ২৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা, সাবারি ১৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। আক্টোবর মাসে অ্যামাডিউস ৪০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, অ্যাবাকাস ১৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকা, গ্যালিলিও ২৭ লাখ ৭৮ হাজার টাকা, সাবারি ১৭ লাখ ৫১ হাজার টাকা। নভেম্বর মাসে অ্যামাডিউস ২৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা, অ্যাবাকাস ১৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকা, গ্যালিলিও ২৭ লাখ ৮৩ হাজার টাকা, সাবারি ১৫ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। ডিসেম্বর মাসে অ্যামাডিউস ২৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা, অ্যাবাকাস ১৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকা, গ্যালিলিও ৩১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা, সাবারি ১৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে অ্যামাডিউস ৩৫ লাখ ১৭ হাজার টাকা, অ্যাবাকাস ১৮ লাখ ৬১ হাজার টাকা, গ্যালিলিও ৩৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকা, সাবারি ২২ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। ফেব্রুয়ারি মাসে অ্যামাডিউস ৩১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা, অ্যাবাকাস ১৯ লাখ ৯২ হাজার টাকা, গ্যালিলিও ৩৩ লাখ ৫৮ হাজার টাকা, সাবারি ১৭ লাখ ৫২ হাজার টাকা। মার্চ মাসে অ্যামাডিউস ২৭ লাখ ৬ হাজার টাকা, অ্যাবাকাস ২৫ লাখ ৬৬ হাজার টাকা, গ্যালিলিও ৩৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা, সাবারি ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এপ্রিল মাসে অ্যামাডিউস ২৯ লাখ ৬৮৮ টাকা, অ্যাবাকাস ৩১ লাখ ২১ হাজার টাকা, গ্যালিলিও ৪৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা, সাবারি ১৫ লাখ ১৩ হাজার টাকা। বর্তমানে অ্যাবাকাস ও সাবারি একীভূত হয়ে কাজ করছে।

এছাড়া ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর মধ্যে আবুধাবির আল তারেক আল মুমতাজ গত ১০ মাসে ১৫ হাজার ৩৯টি টিকিট বুকিং দিয়েছে। এর মধ্যে ১৪ হাজার ৩৫৮টি টিকিট বাতিল হয়ে গেছে। এজন্য ওই এজেন্সিকে ২ লাখ ৯২ হাজার টাকা দিতে হয়েছে বিমানকে। গোল্ডেন ট্রাভেল এই সময়ে ১৪ হাজার ৪৪টি বুকিং দিয়েছে, এর মধ্যে বাতিল হয়েছে ১১ হাজার ৬৬০টি। এই বাতিলের জন্য তাদের দিতে হয়েছে ২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। এয়ার গাইড ট্রাভেল এই সময়ে বুকিং দিয়েছে ৪১৫১টি। বাতিল হয়ে গেছে ৩৩৫৩টি। মাত্র ৭৯টি টিকিট বিক্রি করেছে তারা। এরপরও তাদের ৭১ হাজার টাকা গুনতে হয়েছে। ঊর্মি ট্রাভেল এক বছরে ৩৪ হাজার ৮৩৬টি টিকিট বুকিং দিয়েছে। কিন্তু বাতিল হয়ে গেছে ৩০ হাজার টিকিট। এজন্য বিমানকে গুনতে হয়েছে ৯ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। মাদারল্যান্ড ট্রাভেল বুকিং দিয়েছিল ৪১৬৮টি। বাতিল হয়েছে ৩৪৪৮টি। বিমানকে অর্থ গুনতে হয়েছে সাড়ে ১ লাখ ৩ হাজার টাকা। জেএমকে হলিডেজ ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর ১০ মাসে বুকিং দিয়েছে ৬৭৪৮টি টিকিট। বাতিল হয়ে গেছে ৫৭৬৮টি। এই অনৈতিক কাজের জন্য বিমানকে অর্থ গুনতে হয়েছে ২ লাখ ১৩ হাজার টাকা। সুপিরিয়র ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর ১০ মাসে বুকিং দিয়েছে ২৫ হাজার ৬০৭টি। বাতিল হয়ে গেছে ২১ হাজার ৬২৭টি। বিমানকে গুনতে হয়েছে ৬ লাখ ১২ হাজার টাকা। এভাবে ইরাদ ইন্টারন্যাশনালের ১০ হাজার বুকিংয়ের মধ্যে ৮২৫৫টি বাতিল হয়ে গেছে। টাকা গচ্চা গেছে ২ লাখ ২৮ হাজার টাকা। ইন্টারন্যাশনাল টিকিট ফর ট্যুরের ৬৩২১টি বুকিংয়ের মধ্যে ৫৩২১টি বাতিল হয়ে গেছে। গচ্চা গেছে ১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। টাইম ট্রাভেল ১০ মাসে ১৬৪৩০টি টিকিট বুকিং দিলেও ১২৮৫৪টি বুকিং বাতিল হয়ে যায়। এজন্য বিমানকে গুনতে হয়েছে ২ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। তারেক আল বার মেরিনের ৭৯৫৫টি বুকিংয়ের মধ্যে বাতিল হয় ৬৩২১টি। গচ্চা গেছে ১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। স্কাই ট্রাভেল ৬৩৭৮টি টিকিট বুকিং দিলেও বাতিল হয়ে গেছে ৪৭৭৯টি। এজন্য বিমানের ক্ষতি ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। বি ফ্রেস এক বছরে ৬৫২০টি বুকিং দিলেও বাতিল হয়ে গেছে ৫০২৩টি। সাদিয়া ট্রাভেল ৫২২২টি বুকিং দিলেও বাতিল হয় ৪০৭০টি। দুই এজেন্সিতে দিতে হয়েছে ২ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। সাফা এয়ার ট্রাভেল ৪০১১টি বুকিং দেয়, বাতিল হয় ৩০৫০টি। জেএস ট্রাভেল বুকিং দেয় ৩৩১০টি, বাতিল হয় ২৬৬৬টি। দুই এজেন্সিকে বিমান ২ লাখ ১৭ হাজার টাকা দেয়। ময়ূরী এয়ার বুকিং দেয় ৩৫৭৫টি, বাতিল হয় ২৮৪২টি। ওয়ান স্টার বুকিং দেয় ২৮৭৭টি, বাতিল হয় ২২৩৮টি। গাউছিয়া ট্রাভেল বুকিং দেয় ৩৫৫৮টি, বাতিল হয় ২৬২৫টি। আল আবরার ট্যুর বুকিং দেয় ২৮১৩টি, বাতিল হয় ২১৮৮টি। এই ৪টি এজেন্সিকে বিমান পরিশোধ করেছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। ইমরান ট্রাভেল বুকিং দিয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার টিকিট। বাতিল হয়ে গেছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৬৯৫টি। এজন্য বিমানকে গুনতে হয়েছে ২৬ লাখ টাকা। সুরমা ট্রাভেল ১০ মাসে বুকিং দিয়েছে ৬২ হাজার ২৪৫টি। বাতিল হয়ে গেছে ৪৭ হাজার ৬২১টি। বিমানকে গুনতে হয়েছে ৯ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। প্রাইম এক্সপ্রেস বুকিং দিয়েছে ১৫ হাজার ৯৭২টি, বাতিল হয়ে গেছে ১৩৪১০টি। এজন্য বিমানকে গুনতে হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। সোনার বাংলা ট্রাভেল বুকিং দিয়েছে ১৬ হাজার ৫২৯টি, বাতিল হয়ে গেছে ১২ হাজার ৯৯২টি। বিমানকে গুনতে হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ইতারনাইট ইন্টারন্যাশনাল বুকিং দিয়েছে ৬২৯৫টি, বাতিল হয়েছে ৪৭১৬টি। এজন্য বিমানকে গুনতে হয়েছে ৮৮ হাজার টাকা। জারাল্লা ও আল খালিজ মিলে বুকিং দিয়েছে ৮৮৪৭টি, বাতিল হয়েছে ৬৮৭৭টি। বিমানকে গুনতে হয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা। রাবেল ইন্টারন্যাশনাল বুকিং দিয়েছে ৪৪ হাজার ৭৩০টি, বাতিল হয়ে গেছে ৩৪ হাজার ৬৬২টি। বিমানকে পরিশোধ করতে হয়েছে ৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা।

অভিযোগ আছে টিকিট বুকিং দেয়ার জন্য জিডিএস কোম্পানির সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে তাতে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি। বিমানের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নেয়া হয়নি। তাছাড়া ৩টি জিডিএসের সঙ্গে অনেক আগে চুক্তি করা হয়েছে। অ্যামাডিউসের সঙ্গে ২০১০ সালে, অ্যাবাকাসের সঙ্গে ১৯৯২ সালে, গ্যালিলিও’র সঙ্গে ১৯৯৩ সালে চুক্তি করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন পরও এসব অসম চুক্তি রিভিউ কিংবা বাতিল করা হয়নি। উল্টো প্রতি বছর বুকিং বাতিলের জন্য রেট বাড়ানো হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here