খবর৭১ঃ ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাচার বন্ধে লেনদেনে কড়াকড়ি আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর অংশ হিসাবে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও এলসি খোলার ক্ষেত্রে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যাতে বেনামি হিসাব খোলা না যায় সেজন্য ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্প্রতি পণ্য আমদানির নামে অর্থ পাচারের ঘটনা ধরা পড়ার পর থেকে এলসি খোলার আগে গ্রাহকের প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব সম্পর্কে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনার পর এ সংক্রান্ত কার্যক্রম জোরদার হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, ব্যাংকিং চ্যানেলে বা ব্যাংকের বাইরে হুন্ডির মাধ্যমেও অর্থ পাচারের ঘটনা ধরা পড়েছে। মিথ্যা ঘোষণা দিয়েও পণ্য আমদানির নামে অর্থ পাচার হচ্ছে। হুন্ডিসহ নানাভাবে অর্থ পাচার বন্ধে সতর্ক রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।
এ প্রসঙ্গে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুছ ছালাম আজাদ বলেন, অর্থ পাচার মূলত আমদানি-রফতানির মাধ্যমে বেশি হয়। বিশেষত আমদানিতে মূল্য বেশি দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং) এবং রফতানি মূল্য কম দেখানোর (আন্ডার ইনভয়েসিং) মাধ্যমে অর্থ পাচার হয়। এ কারণে ঋণপত্র (এলসি) ও ব্যাংকে হিসাব খোলায় কড়াকড়ি করা হচ্ছে। অর্থাৎ (কেওয়াইসি মেইনটেইন) গ্রাহক সম্পর্কে বিস্তারিত জানার ব্যবস্থার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। কোনো হিসাব সন্দেহজনক হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দা ইউনিট-বিএফআইইউকে জানানো হয়।
এছাড়া অতিরিক্তি অর্থায়নের মাধ্যমেও অর্থ পাচারের সুযোগ সৃষ্টি হয়। সেটি বন্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন ঋণ বিতরণে সম্পদের মান যাচাই, পণ্য অতি মূল্যায়িত হয়েছে কিনা এসব দেখা হচ্ছে। সব মিলিয়ে মনিটরিং বাড়ানো হয়েছে। এদিকে ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পাচারের তথ্য জানতে সরকারি ব্যাংকগুলোতে বিশেষ অডিট শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে অগ্রণী ব্যাংকে বিশেষ অডিট শেষ হয়েছে। অন্য ব্যাংকগুলোতে বিশেষ অডিট চলছে।
জানা গেছে, ব্যাংকের মাধ্যমে বা ব্যাংকের বাইরে থেকে কারা কিভাবে মুদ্রা পাচার করছে সেসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ ধরনের বড় কয়েকটি ঘটনা ধরা পড়েছে। এগুলোর কৌশল সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ব্যাংকে নতুন হিসাব খুলতে গেলে এখন গ্রাহকের তথ্য যাচাইয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এজন্য জাতীয় পরিচয়পত্র, আয়কর শনাক্তকরণ নম্বর, ভ্যাট নিবন্ধন নম্বরসহ নানা ধরনের কাগজপত্র দিতে হয়। ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কে নিশ্চিত না হতে পারলে হিসাব খুলছে না।
জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত যুগান্তরকে বলেন, অর্থ পাচার বন্ধে ব্যাংকগুলো এখন অনেক বেশি সতর্ক। সরকারও এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এখন পর্যন্ত অর্থ পাচারসংক্রান্ত বড় কোনো ঘটনা অগ্রণী ব্যাংকে ঘটেনি।
জানা গেছে, ২২ জুলাই সরকারি ৮ ব্যাংকের এমডি-চেয়ারম্যানদের সঙ্গে একটি মতবিনিময় সভা করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সভায় ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন আর্থিক সূচক মূল্যায়নের পাশাপাশি মানি লন্ডারিং ও অর্থ পাচার রোধের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য ৬টি নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
এর মধ্যে দুটি অর্থ পাচারসংক্রান্ত বিষয়ও আছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যাংক খাত থেকে যাতে কোনো প্রকার মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনা না ঘটে এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে যারা বিদেশে পাচার কিংবা অন্য কোথাও সরিয়ে রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া অব্যাহত রাখতে হবে।
ওই বৈঠকে তিনি এ বিষয়ে কাউকে ছাড় না দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলোর এমডি ও চেয়ারম্যানদের প্রতি নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আতাউর রহমান প্রধান যুগান্তরকে বলেন, অর্থ পাচার বন্ধে আগে থেকেই সতর্ক রয়েছে ব্যাংকগুলো। এসব নির্দেশনা পাওয়ার পর এখন আরও বেশি গুরুত্বের সঙ্গে কাজগুলো করা হবে।
ব্যাংকের এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান এবং ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, পণ্যমূল্য যাচাই, ঋণপত্র খোলাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ব্যাংকগুলো সতর্ক রয়েছে। এখন মাত্রা আরও বাড়বে। বিশেষ করে হিসাব খোলায় কেওয়াইসি ভালোভাবে দেখা হবে। এটি আগেও ছিল। বর্তমানে তা শক্তভাবে দেখা হবে বলে জানান তিনি।