খবর৭১ঃ
সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ এবার চাঁদাবাজির এক মামলায় ছাত্রলীগ সৈয়দপুর উপজেলা শাখার সাবেক সভাপতি মো. আহসান হাবিব সরকার ওরফে সোহাগ সরকারকে (৩৫) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্থানীয় এক বিনোদন পার্ক পাঁতাকুঁড়ির মালিকের করা চাঁদাবাজির মামলায় গতকাল (বৃহস্পতিবার) তাকে গ্রেপ্তার করে সৈয়দপুর থানা পুলিশ। গতকালই তাকে আদালতের মাধ্যমে নীলফামারী কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলার আরজিতে বলা হয়, শহরের চাঁদনগর এলাকার বাসিন্দা মো. জয়নাল আবেদীন সরকার। গেল ২০১৮ সালে তিনি সৈয়দপুর শহরের উপকন্ঠে কয়াগোলাহাট এলাকায় পাঁচ একর ১৫ শতক জমিতে পাতাকুঁড়ি নামে একটি বিনোদন পার্কটি গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। বর্তমানেও পার্কটির নির্মাণ কাজ অব্যাহত রয়েছে। পার্কটির কাজ শুরুর পর থেকে একই এলাকার বাসিন্দা মৃত. আব্বাস আলী সরকারের ছেলে আহসান হাবিব সরকার ওরফে সোহাগ সরকার বিনোদন পার্কের মালিক মো. জয়নাল আবেদীন সরকারের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। সেই সঙ্গে পার্কে প্রতিদিন আসা দর্শানার্থীর কাছে বিক্রি করার টিকিটের শতকরা ৩০ টাকাও দাবি করে। আর দাবিকৃত চাঁদা ও টিকিট বিক্রির ৩০% টাকা না পেয়ে এর মালিক জয়নাল আবেদীন সরকারকে জীবননাশের হুমকি-ধমকি প্রদর্শন করা ছাড়াও দর্শনার্থীদের পার্কের অভ্যন্তরে প্রবেশে নানা রকম বাঁধা বিঘেœর সৃষ্টি করে আসছিল। এ অবস্থায় গত ১১ আগস্ট ঈদের আগে দিন সকার ১০ টায় সাবেক ছাত্র লীগ সোহাগ সরকার তাঁর সঙ্গীয় ৪/৫জনকে নিয়ে বিনোদন পার্ক পাতাকুঁড়িতে যায়। এ সময় তারা পার্কের অভ্যন্তরে জোরপূর্বক প্রবেশ করে অফিস কক্ষে ঢুকে ম্যানেজার উমর ফারুক সবুজের কাছে ৫০ টাকার টাকা চাঁদা দাবি করে বসে। এ অবস্থায় পার্কের ম্যানেজার উমর ফারুক সবুজ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং তাদের জানায় ওই মুর্হুতে তাঁর নিকট উল্লিখিত পরিমাণ টাকা নেই।
এ সময় তারা পার্কের কাউন্টারের ড্রয়ার হতে জোরপূর্বক ১০ হাজার টাকা বের করে নেয়। ম্যানেজার তাৎক্ষণিক ঘটনাটি মোবাইল ফোনে পাঁতা কুঁড়ি পার্কের মালিককে অবহিত করেন। আর এ ঘটনাটি জানার পর পরই মালিক জয়নাল আবেদীন সরকার তাঁর ছেলে রফিকুল ইসলাম বিদ্যূৎকে সঙ্গে নিয়ে পার্কে ছুঁটে যান। এ সময় তাদের পার্কের অফিস কক্ষে ঢুকতে দেখে চাঁদা দাবিকারী সোহাগ সরকার তাঁর কোমর হতে একটি ছোট আগ্নেয়াস্ত্র সদৃশ্য বস্তু বের করে এবং পার্কের মালিকের দিকে উঁচিয়ে ধরে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি ছাড়াও দৈনিক টিকিট বিক্রির ৩০ % টাকা দাবি করে। এ সময় তাঁর দাবিকৃত চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে পার্কের মালিক জয়নাল আবেদীন সরকার এর প্রতিবাদ করেন। এ সময় চাঁদা দাবিকারী সোহাগ সরকার ও তাঁর সঙ্গীয়রা পার্কটির ভাঙচুর করে চিরতরে ধ্বংস করে দেওয়াসহ পার্কের মালিককে এবং তাকে (মালিক) ও তাঁর ছেলেকে গুলি করে হত্যার হুমকি প্রদর্শন করেন। পরবর্তীতে চাঁদা দাবিকারি সোহাগ ও তাঁর সঙ্গীয়রা পার্কের ভেতর থেকে ম্যানেজার ও কর্মচারীদের তাড়িয়ে দিয়ে পার্কের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়। এছাড়াও তারা পার্কের প্রবেশের রাস্তা কেটে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং পাতাকুঁড়ি পার্ক বন্ধ লেখা একটি ব্যানার টাঙিয়ে দিয়ে মালিককে নানা রকম হুমকি ধমকি দিয়ে চলে যায়। এ অবস্থায় পাতাকুঁড়ি পার্কের মালিক মো. জয়নাল আবেদীন নিরুপায় হয়ে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আহসান হাবিব সরকার ওরফে সোহাগ সরকারকে প্রধান আসামী করে পাঁচজনের বিরুদ্ধে গত রবিবার সৈয়দপুর থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন।
মামলা নং-৮, তারিখঃ ১৯/০৮/২০১৮ইং। আর সৈয়দপুর থানায় উপ-পরিদর্শক (এসআই) দীলিপ কুমার রায়কে এ মামলাটির তদন্তের দায়িত্বভার দেওয়া হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক দীলিপ কুমার রায় গতকাল (বৃহস্পতিবার) দুপুরে সৈয়দপুর- নীলফামারী বাইপাস সড়কের কয়াগোলাহাট এলাকা থেকে চাঁদাবাজির মামলার প্রধান আসামী আহসান হাবিব সরকার ওরফে সোহাগ সরকারকে গ্রেপ্তার করেছে। সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহজাহান পাশা,চাঁদাবাজির মামলায় আহসান হাবিব সরকার ওরফে সোহাগকে গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিতত করেন। তিনি বলেন আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত তাকে নীলফামারী কারাগারে পাঠানো নির্দেশ দেন।