খবর৭১ঃ একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হয়নি বলে দাবি করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আওয়ামী লীগ একুশে আগস্ট বোমা হামলা মামলা নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনীতি করছে। মূলত: ২১ আগস্টের ঘটনা ছিল গভীর নীল নকশার অংশ, যে নীল নকশার সাথে ক্ষমতাসীনরা জড়িত কি-না তা নিয়ে জনমনে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এই মামলার সামগ্রিক সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত হলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসতো।
তিনি বলেন, কিন্তু তা না করে সুপরিকল্পিত নীলনকশা অনুয়ায়ী এই ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক কায়দায় সম্পূর্ণ রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করে আসছে আওয়ামী লীগ। তার বড় প্রমাণ হলো কথিত সম্পূরক চার্জশীটের নামে এই মামলায় তারেক রহমানকে জড়িয়ে ফরমায়েশী রায়ে সাজা দেয়া। যা ছিল সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, গভীর ষড়যন্ত্রমূলক ও দীর্ঘদিনের মাস্টারপ্ল্যানের ফসল।
রিজভী আরও বলেন, এই হামলার ঘটনায় তারেক রহমান ও বিএনপি সরকারকে জড়িত করার কাহিনি যে অসত্য, তা সর্বজনীনভাবে প্রতিপন্ন হয়েছে। আওয়ামী লীগের এই হীন রাজনীতি দেখে দেশের মানুষ বিস্মিত ও হতভম্ব। ২১ আগস্টের বিচারাধীন মামলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী-নেতারা নির্বিঘ্নে এবং ক্রমাগত এমন বক্তব্য রেখে যাচ্ছেন, যা মামলার রায়কে প্রভাবিত করে আসছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন রিজভী।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সমালোচনার জবাবে রুহুল কবীর রিজভী বলেন, যেকোন সরকারের আমলে কখনও কখনও অনাকাঙ্খিত এমন কিছু ঘটনা ঘটে যার জন্য সেই সরকার দায়ী হতে পারে না। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বহুমুখী চক্রান্তকারীদের এজেন্টরা দেশে-দেশে নানা নাশকতা করেছে। ২১শে আগস্টের জন্য যদি বিএনপি সরকার দায়ী হয়, তাহলে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের জন্য কেন আওয়ামী লীগ সরকার দায়ী হবে না? কেন মুক্তচিন্তার ব্লগার, যাজক-পুরোহিত-ইমাম-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-লালন সাধকদের হত্যাকাণ্ডের জন্য আওয়ামী সরকার দায়ী হবে না ? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীনই তো যশোরের উদীচির অনুষ্ঠানে, খুলনার কাদিয়ানী মসজিদে, ঢাকায় সিপিবি’র সমাবেশে, রমনায় ছায়ানটের অনুষ্ঠানে, গোপালগঞ্জে ক্যাথলিক গীর্জায়, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ অফিসে, বাগেরহাটের কলেজ মাঠে আক্রমণ ও বোমা হামলা হয়েছে এবং গোপালগঞ্জে দুটি শক্তিশালী তাজা বোমা উদ্ধার হয়েছে। তাহলে কি এর দায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী সরকারের ওপর বর্তায় না ? এসব ঘটনাতো তাদের আমলেই হয়েছে।
রিজভী বলেন, কেবল প্রধানমন্ত্রী বা ক্ষমতাসীন দলের নেতারাই নন, আমরা বিস্মিত হয়েছি যখন দেখেছি দু-একটি পত্রিকা এবং সরকারি নেতাদের মালিকানাধীন টেলিভিশনে ইনিয়ে বিনিয়ে বেসামাল ভাষায় বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের ওপর দোষ চাপাতে অক্লান্ত চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু প্রকৃত সত্য, প্রকৃত ঘটনা এভাবে মিথ্যাচার আর অপপ্রচারের মাধ্যমে জনগণের কাছে বিশ্বাসযাগ্য করা যাবে না। জাতীয়তাবাদী নেতাদের বিরুদ্ধে এহেন মিথ্যা অপপ্রচার অতীতেও হয়েছে। নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে সাম্রাজ্যবাদীরা ‘অন্ধকূপ হত্যা’ কাহিনি রচনা করেছিল। পরে গবেষণামূলক গ্রন্থেও এ কাহিনির অসত্যতা ও অবাস্তবতা বেরিয়ে এসেছে। এটি তৎকালীন সাম্রাজ্যবাদী শাসকগোষ্ঠীর মিথ্যা প্রচার বলে প্রমাণিত হয়েছে। দেশে দেশে দখলদার সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী ও তাদের স্থানীয় অনুচররা সব সময় প্রহসন, মিথ্যাচার ও অন্তর্ঘাতকেই হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে।
রিজভী বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলায় হতাহতের ঘটনা মর্মস্পর্শী ও হৃদয়বিদারক। আইভি রহমানসহ অনেক নারী- পুরুষের জীবননাশ ও আহত হওয়ার নৃশংস ঘটনায় আমরা তখনও নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছি- এখনও জানাই।
তিনি বলেন, তারেক রহমানসহ বিএনপি সরকারের মন্ত্রী ও নেতাদের নাম চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্দোলনের ফসল মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারের সময়ও এ মামলার চার্জশিটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম ছিল না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাদের একান্ত অনুগত, বিশ্বস্ত ও দলীয় লোক আব্দুল কাহ্হার আকন্দকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয় শুধু বিএনপি নেতাদের বিপদাপন্ন করার জন্য। তার আগেই কাহ্হার আকন্দ পুলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে অবসরে গিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এমনকি ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও প্রতিহিংসা পূরণের জন্য তাকে পুলিশ বিভাগে ফের ২০০৯ সালে নিয়োগ দিয়ে এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা করা হয়। দলীয় চেতনার তদন্ত কর্মকর্তা কাহ্হার আকন্দকে নিয়োগ দেয়ার উদ্দেশ্যই ছিল এ মামলায় তারেক রহমানকে জড়ানো।
রিজভী বলেন, যখন প্রধানমন্ত্রী বলছেন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান জড়িত তাহলে এতো বড় ঘটনার পর তাদেরতো দেশ থেকে সরে যাওয়ার কথা। অপরাধ করলে তারেক রহমান সাহেব দেশ থেকে সরে যেতেন। কিন্তু তিনি তো দেশ থেকে কোথাও যাননি। বেগম খালেদা জিয়া শেষদিন পর্যন্ত গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। তার যে সংগ্রাম এ সংগ্রাম হচ্ছে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম। আজ তার পর্বতসম জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে শুধুমাত্র প্রতিহিংসাপরায়ণতায় ৫৬১ দিন কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রী ও তার দলের কতিপয় নেতা নির্জলা মিথ্যাচার প্রপাগান্ডায় জনগনকে বিভ্রান্ত করার নিষ্ফল চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে সত্য চেপে রাখা যায় না।