খবর৭১ঃ
সুলতান আহমেদ, নওগাঁ প্রতিনিধিঃ নওগাঁর মান্দা উপজেলার ১০ নং নুরুল্যাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মন্ডলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম,দূর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও অসদাচরণের অভিযোগ এনেছেন ওই ইউপির ৮ সদস্য।
এ ঘটনায় গত ২০ আগষ্ট জেলা প্রসাসকের (ডিসি ) বরাবর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ওই ইউপি সদস্যরা একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে বলা হয়, গোয়ালমান্দায় এলজিএসপি-৩ এর ২টি ব্রিজ নির্মানের জন্য ২ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা উত্তোলন করে মাত্র ৩০ হাজার টাকা কাজ করে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য তারা বেগম সম্পূন্ন টাকা আত্মসাৎ করেন। টিআর প্রকল্পের বিশেষ বরাদ্দ পরিষদের আমতলা মোড় হতে বারিল্যা মাদ্রাসা মোড় পর্যন্ত কাজ করার কথা থাকলেও ৫ টন গম আত্মসাৎ করেন এবং জোতবাজার রামপ্রসাদের বাড়ি হতে কালিদাসের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা হেয়ারিংয়ের কাজ না করে চেয়ারম্যানের জোগসাজসে ইউপি সদস্য ছাবিনা ইয়াসমিন কাবিখার ৮টন চাল আত্মসাৎ করেন। পরবর্তীতে সেখানে ৪০ দিনের কর্মসূচীর লোক দিয়ে দায়সারা ভাবে কাজ সম্পূন্ন করেন। তার সকল কর্মকান্ড অগণতান্ত্রিক। তিনি সরকারী বিধি অনুযায়ী ইউপি সদস্যদের জন্য বরাদ্দকৃত সম্মানীভাতা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে টালবাহানা করে অদ্যবধি পর্যন্ত সম্পূন্ন পরিশোধ না করা, বিভিন্ন প্রকার উন্নয়নমূলক কাজ যেমন-(টিআর, কাবিখা) প্রকল্পের ভূয়া রেজুলেশন করে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ সহ ইত্যাদি কাজের বিল পাশ করার জন্য ভয়ভীতি দেখায় এমনকি রেজুলেশনে সহি না করিলে সম্মানীভাতা-এর টাকা না দেওয়ার হুমকি-ধামকি দেয়।
কর্মসূচির লোক দ্বারা টিআর কাবিখা এর কাজ করে থাকে। এমনকি ভিজিএফ এর চাল কোন সদস্যের সহিত মতবিনিময় ছাড়াই একা তার নিজ ইচ্ছানুযায়ী বন্টন করে। ফলে প্রকৃত যোগ্য ব্যাক্তি চাল থেকে বঞ্ছিত হয়। বিগত ২০১৮/১৯ অর্থ বছরের এলজিএসপি বাজেট প্রনয়ন কালে কোন সদস্যের সাথে মতবিনিময় করে নাই। এমনকি কোন ওয়ার্ড সভাও করে নাই। নিজের সেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে প্রকল্প গ্রহণ করে। তাছাড়াও ৫০% টাকা ইউপি সদস্যকে দিয়ে প্রকল্পের কাজ করার পায়তারা করছে। বয়স্কভাতা, প্রতিবন্ধিভাতা, বিধবাভাতা এবং মাতৃত্বকালীনভাতা এর কার্ড করার সময় কোন ইউপি সদস্যকে না জানিয়ে ঝাড়–দারের মাধ্যমে সাধারণ লোকের কাছ থেকে গোপনে টাকা নিয়ে নিজের তাদের উল্লেখিত কার্ড করে দেওয়া। কর্মসূচির ১০% টাকার কোন কাজ না করা।
জন্মসদন,মৃত্যুসদন, ওয়ারীশান সদনসহ যেকোন সনদের জন্য সরকারী নিয়ম তোয়াক্কা না করে সাধারণ জনগণের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে নেওয়া, গ্রাম্য আদালতে স্থানীয় মহৎ মাতব্বরগণকে ইউনিয়ন পরিষদে প্রবেশে বাধা প্রদান করে তাদের লাঞ্ছিত করে এবং কোন সালিশ নিষ্পত্তি না করে থানার মাধ্যমে টাকা নেওয়ার নেশায় সালিশগুলো পাঠিয়ে দেয়। ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যেদের বসার জন্য কোন জায়গা রাখেন নাই এবং তিনি সদস্যদের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষ সর্বদা তালাবদ্ধ রাখেন, এডিবি ১%সহ সকল বরাদ্দ কোথায় কিভাবে বাস্তবায়ন করে তাহা কোন সদস্যদেরকে অবগত করেননা। সকল জাতীয় দিবস (শোক দিবস, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস) পালন করেনা। কেন পালন করা হবেনা জানতে চাইলে বা দিবস পালন করার অনুরোধ জানালে ইউপি সদস্যদেরকে জনসম্মুখে অপমান অপদস্থ করা হয়। উল্লেখিত অভিযোগের কারনে বিগত সময়ে সকল সদস্য মিলিত বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা করেন। সে মামলার সুরাহা আজও হয় নাই। এনিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তার খুটির জোর কোথায়? এতকিছুর পরেও বহাল তবিয়তে চালিয়ে যাচ্ছেন তার কার্যক্রম।
এসব অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করতে গেলে তিনি ইউপি সদস্যদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। অভিযোগে আরও বলা হয়, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত তাঁরা (ইউপি সদস্য) ইউপির দৈনন্দিন কাজ করবেন না ও চেয়ারম্যানকে কোনো কাজে সহযোগিতা করবেন না। তবে ইউপি চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মন্ডল তাঁর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি অসৌজন্যমূলক আচরন করে বলেন, “আমি কোন সাংবাদিকদের সাথে কথা বলি না। আপনারা এলাকায় থেকে আমার বিষয়ে জানতে পারেন। আর যতকিছু করার আছে করেন। তাতে আমার কোন সমস্যা নেই। আমি চারবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। আমি এসব অভিযোগকে তোয়াক্কা করি না।”
মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) এস এম হাবিবুল হাসান বলেন, ‘নুরুল্যাবাদ ইউপি সদস্যদের লিখিত অভিযোগের অনুলিপি পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা প্রশাসক হারুন-অর-রশিদ বলেন, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।