খবর৭১ঃ
কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। আর এই পরিস্থিতিতে মুখ খুললেন ভারতের সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত। তিনি জানিয়েছেন, পুলওয়ামার বদলায় বালাকোটই শুধু নয়, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পুরোদমে যুদ্ধের জন্য মুখিয়ে ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। পাকিস্তানি ভূখণ্ডে ঢুকে শিক্ষা দেওয়ার সমস্ত প্রস্তুতিই সারা হয়ে গিয়েছিল। সেই সঙ্গে বিকল্প একাধিক পথও ভেবে রাখা হয়েছিল। বালাকোট দিয়ে আকাশপথে হামলাও সেই বিকল্প ভাবনার মধ্যেই ছিল এবং তা দিয়েই পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটাতে চেয়েছিল ভারতীয় সেনা।
সোমবার দিল্লিতে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে নিজেদের স্ট্র্যাটেজির কথা এভাবে শেয়ার করলেন সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত। আর তারপরই ভারত ও পকিস্তানের মধ্যে ফের যুদ্ধ নিয়ে উত্তেজনার চোরাস্রোত বইতে শুরু করেছে।
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে নানা বিষয়ে চাপে রাখলেও, যুদ্ধের মতো বড়সড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিস্তর ভাবতে হয় ভারতকে। সে দেশের পক্ষে উসকানি একেবারে চরম পর্যায়ে না পৌঁছলে ভারতও সরাসরি রণক্ষেত্রে নামবে না। কারণ, যুদ্ধের ভয়াবহতা তার চেনাজানা। পাকিস্তানেরও ধর্ম, বাইরে শান্তিস্থাপনের কথা বলে চিরকাল চুপিসারে সন্ত্রাসবাদকে লালন করা। আর তাকে ভারতের ক্ষতিসাধনে সর্বপ্রকারে প্রয়োগ করা। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের এই প্রবণতা এতটাই বেড়েছে যে বারবার সন্ত্রাসে দীর্ণ হতে হয়েছে ভারতের মাটিকে। তারই একটা বড় উদাহরণ, ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ের ওপর ভয়ংকর আত্মঘাতী জঙ্গি হামলা। কাশ্মীর উপত্যকার তুষারাবৃত পথঘাট এক লহমায় ভেসে গিয়েছিল ৪৯ জন নিহত জওয়ানের রক্তে।
এরপর আর স্থির থাকতে পারেননি কেউ। শুরু হয়ে যায় শিক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি। সিআরপিএফ জওয়ানদের মৃত্যুর বদলা নিতে পাকিস্তানের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে মরিয়া হয়েছিল ভারতীয় সেনারা। পাকিস্তানকে শিক্ষা দিতে একেবারে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল।
ভারতের সেনাসূত্রে খবর, পাকিস্তানের পক্ষে গত কয়েক বছর ধরে যে আক্রমণ এসেছে ভারতের মাটিতে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই একটু একটু প্রস্তুতি চলছিল। ১১হাজার কোটি টাকার আগ্নেয়াস্ত্র মজুত করা ছিল সেনাশিবিরে, যা কিনা মোট প্রয়োজনের ৯৫ শতাংশ। পুলওয়ামা হামলার পর আরও ৭ হাজার কোটি টাকা বিশেষ আগ্নেয়াস্ত্রের বরাত দেওয়া হয়েছিল, যাতে যুদ্ধক্ষেত্রে একেবারে পূর্ণ শক্তি নিয়ে লড়াই চালাতে পারে। আর এসব নিয়েই যুদ্ধেই ঝাঁপিয়ে পড়তে চেয়েছিল সেনাবাহিনী। তৈরি ছিল বিকল্প পদক্ষেপের নীল নকশাও।
শেষমেশ অবশ্য সরাসরি যুদ্ধে যাওয়ার দরকার হয়নি। হামলার ১২দিন পর, ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোরে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বালাকোট সীমান্তে ঢুকে বিমান হামলা চালিয়ে সীমান্তের জঙ্গি ঘাঁটিগুলি গুঁড়িয়ে দেয় ভারতীয় বিমানবাহিনী। প্রয়োজনে আরও অগ্রসর হওয়াই যেত, যদি পাকিস্তানের পক্ষে খুব বড় রকমের কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হতো। তবে এতো গুলো জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংসে কার্যত নড়ে গিয়েছি ইমরান সরকার। তাই বালাকোটের পালটায় বিশেষ কিছু করা সম্ভব হয়নি। তাই যুদ্ধ থেকে বিরত থেকেছে ভারতের সেনাবাহিনী ।
সোমবার বিপিন রাওয়াত নিজেই এসব প্রকাশ্যে এনেছেন। আর বুঝিয়ে দিয়েছেন, যুদ্ধে পিছপা হবে না ভারতীয় সেনা। বরং প্রয়োজনে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধই হবে।
সূত্রঃ সংবাদ প্রতিদিন