খবর৭১ঃ
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) কর্মকর্তারা দেশে ফিরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের তালিকাভুক্তির কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে আজ মঙ্গলবার শুরু করছে। রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরে যেতে মানসিকভাবে তৈরি করার জন্য উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি নিতে এনজিওসহ বিভিন্ন সংস্থাকে পরামর্শও দিয়েছে ইউএনএইচসিআর। এর আগে গতকাল সোমবার শুরু হয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রাথমিক কাজ।
এদিকে, রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মকর্তারাও রাখাইনে ফিরতে রোহিঙ্গাদের উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। টেকনাফের চারটি রোহিঙ্গা শিবিরেই গতকাল সোমবার একযোগে শুরু হয়েছে রোহিঙ্গাদের স্বদেশ ফিরতে উদ্বুদ্ধ করার কাজ। রোহিঙ্গাদের জানানো হচ্ছে, তারা যদি দেশে ফিরে না যায়, তাহলে তাদেরকে জোর করে পাঠানো হবে না। রোহিঙ্গাদের এমন ধারণা দেওয়ার কারণেই শিবিরগুলো এক প্রকার শান্ত।
টেকনাফ ২৩ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরের দায়িত্বে থাকা সহকারী ইনচার্জ মোহাম্মদ শাহজাহান গতকাল বলেন, ‘রোহিঙ্গারা আগের চেয়ে এখন অনেক সহনশীল। তারা আগে যে রকম অস্থির প্রকৃতির ছিল, সেটা অনেকটাই কেটে উঠেছে। এখন তাদের বোঝানোর চেষ্টা করলে বোঝে।’ তিনি জানান, আগে প্রত্যাবাসনের কথা শুনলেই রোহিঙ্গারা লাফিয়ে উঠত। কিন্তু এখন সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এ কারণে শিবিরগুলোতে আগে যে অস্থিরতা বিরাজ করত, সেই পরিস্থিতি এখন আর নেই।
রোহিঙ্গা শিবিরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইউএনএইচসিআর টেকনাফের চারটি শিবিরের মধ্যে ২৬ নম্বর শিবিরে আজ রোহিঙ্গাদের ফরম পূরণের কাজ শুরু করছে। ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরতে উদ্বুদ্ধ করার জন্যও চিঠি দিয়েছে এনজিও ও অন্যান্য সংস্থার দপ্তরে। চিঠিতে মিয়ানমারে ফেরার ব্যাপারে যেকোনো তথ্য জানার জন্য ইউএনএইচসিআর সার্বক্ষণিক তথ্য কেন্দ্র খুলেছে বলেও জানানো হয়েছে। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নিকারুজ্জামান ইউএনএইচসিআরের চিঠি পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, এটা প্রত্যাবাসনের জন্য শুভ লক্ষণ।
জানা গেছে, টেকনাফের চারটি শিবিরের তিন হাজার ৪৫০ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার আগামী বৃহস্পতিবার থেকে ফিরতে ছাড়পত্র দিয়েছে। টেকনাফের ২৩, ২৪, ২৬ ও ২৭ নম্বরের এই চারটি শিবিরের রোহিঙ্গাদের উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে যদিও এখনো কোনো ইতিবাচক কথা তাদের মুখ থেকে শোনা যায়নি, তবু তারা আগের কঠোর অবস্থান থেকে নমনীয় হয়েছে।
উখিয়ার ইউএনও মো. নিকারুজ্জামান জানিয়েছেন, তিনি গতকাল সারা দিনে উখিয়া উপজেলায় থাকা প্রায় ২০টি রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করে সব কটিতেই শান্ত পরিস্থিতি লক্ষ করেছেন। তবে তিনি এ রকম শুনেছেন যে মিয়ানমারের রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গারা সেখান থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া স্বজনদের দেশে ফিরতে এখনো নিরুৎসাহিত করছে।
ইউএনও তাঁর প্রাথমিক কারণ অনুসন্ধানে জানতে পেরেছেন, রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের মাঝে মিয়ানমার সরকার এনভিসি (ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড) বিলি করেছে। এসব কার্ডে নাকি রোহিঙ্গারা সহায়-সম্পদের মালিক নয় বলে উল্লেখ রয়েছে। ইউএনও বলেন, এমন আরো নানা বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরতে নিরুৎসাহ করা হচ্ছে বলে তিনি ধারণা করছেন।
মিয়ানমারের তদন্ত কমিটি কক্সবাজারে
এদিকে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের তথ্য সংগ্রহে মিয়ানমারের গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিশনের অগ্রবর্তী দল এখন কক্সবাজারে। গতকাল সকালের দিকে দলটি কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছে। দলের সদস্যরা ইনানী সৈকতের বিলাসবহুল হোটেল রয়েল টিউলিপে উঠেছেন। এরপর দুপুর ১টার দিকে তাঁরা শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালামের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিনিধিদলটি সন্ধ্যায় ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করে। দলটি আজ সকালে বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবে।