যতদিন প্রধানমন্ত্রীর হাতে দেশ; পথ হারাবে না বাংলাদেশ

0
868
মধ্য পঞ্চাশে শেখ রাসেল ও বাঙালির অধিকার
অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব চেয়ারম্যান, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ।বিশ্ববিদ্যালয়।

খবর৭১ঃ

এবারের জাতীয় শোক দিবসকে সামনে রেখে কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কার্যালয়ে দলটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দলের সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, ঢাকা উত্তর আর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ আর ঢাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এতে উপস্থিত ছিলেন। এটি ছিল দলটির নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রমের অংশ। তবে এবারের সভার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল, চোখের চিকিত্সার জন্য সে সময়ে লন্ডনে অবস্থানরত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দলের সাধারণ সম্পাদকের টেলিফোনে সরাসরি যুক্ত হয়ে নানা বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন। ডেঙ্গু থেকে শুরু করে গুজব সন্ত্রাস, সব বিষয়েই সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা ছিল তার। তার শরীরি অনুপস্থিতি দল এবং দেশকে কতটা প্রভাবিত করে তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি সেদিনই। ক্ষুদ্র এডিস মশার তাণ্ডবে দিশেহারা দল আর প্রশাসন ঐ একটি ফোন কলেই নড়েচড়ে বসলো। চারদিকে পরদিন থেকেই সাজসাজরব। ঢাকার দুই মেয়র আর মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রশাসনে যেমন নতুন উদ্যম, তেমনি দলীয় সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও রাস্তায় একসঙ্গে এডিস আর ডেঙ্গুকে ঝেটিয়ে বিদায় করার প্রত্যয়ে নেমে পড়েন। একই সঙ্গে গুজব সন্ত্রাসের বিষয়ে নেত্রীর সুনির্দিষ্ট পরামর্শ ছিল। এর পরপরই গঠিত হয়েছে গুজব মনিটরিং সেল এবং এর পর ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির আর কোনো ঘটনা দেখেনি বাংলাদেশ।

গত রোজার ঈদের ঠিক আগে ঈদের শপিং আর গ্রামমুখী মানুষের ঢল, কিংবা মহাসড়কে দীর্ঘ জ্যাম আর ট্রেনের ছাদে হাজারো মানুষের ভিড়, সব ছাপিয়ে সংবাদ শিরোনাম হয়ে ছিল একটি বড় আউটলেটের মূল্য তালিকায় অসঙ্গতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরপরই একজন সরকারি কর্মকর্তার সহসা বদলির বিষয়টি। যদিও সে সময় সরকারিভাবে বলা হয়েছিল যে, সরকারি চাকরি বিধির নিয়ম মেনেই তার এই বদলি, মানুষ সেই ব্যাখ্যা গ্রহণ করেনি। ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। পরবর্তীকালে অর্ডারটি পরিবর্তনও হয়। তবে শোনা যায়, এর পেছনেও ছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ। একইভাবে কোথাকার কোন অর্বাচীন একজন ব্যক্তি মার্কিন রাষ্ট্রপতির কাছে দেশের বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি নিয়ে কিছু মিথ্যা অভিযোগ করা মাত্র ঝাঁপিয়ে পড়ল একদল মানুষ। তাদের মধ্যে অনেকেই অনেক দায়িত্বশীল পদেও অধিষ্ঠিত। মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্রতিক্রিয়ায় কী বলছেন শোনার দরকার নেই, মন্তব্যের আর আক্রমণের বাড়াবাড়িতে সয়লাব ফেসবুক, মিডিয়া আর সহসাই ‘কেউ না চেনা’ থেকে কেউকেটা হয়ে উঠলেন ঐ অভিযোগকারী এবং তার পর আবারও দৃশ্যপটে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আগমন। সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে দোষী বলা যাবে না। এর পরপরই ঠিকঠাক সবকিছু, আলোচনার যোগ্য নয় যে বিষয়টি, তা আমাদের আলোচনার বাইরেই থাকছে সেই থেকে।

পথ হারাবে না বাংলাদেশ

আর কেউ যদি এবারের বাজেট বক্তৃতাটা মন দিয়ে দেখে থাকেন, নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন কীভাবে অসুস্থ অর্থমন্ত্রীকে পদে পদে সাহায্য করছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। বাজেটের ইতিউতি তার যে কতটা নখদর্পণে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছিল। একপর্যায়ে নিজেই বাজেট উপস্থাপনের দায়িত্ব নেন তিনি। পাশাপাশি আরো একবার ঢুকে পড়লেন ইতিহাসের পাতায়। তিনিই বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে না থাকা সত্ত্বেও সংসদে বাজেট উপস্থাপন করলেন। এর আগে শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন, কিন্তু তখন তিনি প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি অর্থ মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্বে ছিলেন।

শুধু বাজেট কিংবা ডেঙ্গু নয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজর চারদিকেই। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যখন অসুস্থ হলেন তখন তাকে দেখেছি পরম মমতায় এগিয়ে আসতে। কোথায় গেলে ওবায়দুল কাদেরের সুচিকিত্সা হবে সে ব্যাপারে যেমন তিনিই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, তেমনি তার মমত্বের ছোঁয়া থেকে বাদ যাননি দেশের অন্যতম একটি বিরোধী রাজনৈতিক দলের মহাসচিবও। গত জাতীয় নির্বাচনে যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন, তাদের অনেকের মুখেই শুনেছি প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার রাজনীতি, দলীয় নেতাদের অবস্থান, এমনকি বিরোধী দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের অবস্থানও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নখদর্পণে ছিল। এসব বিষয়ে তার জ্ঞান স্থানীয় নেতাদের পাশাপাশি মনোনয়ন প্রত্যাশীদেরও বিস্মিত করেছে।

বাংলা আর বাঙালির সৌভাগ্য যে বঙ্গবন্ধুকে হারালেও আমরা এমন এক মহীয়সী প্রধানমন্ত্রী পেয়েছি, যিনি সর্বক্ষণ আমাদের সবকিছুতে সতর্ক দৃষ্টি রেখে চলেছেন। তার চলার পথ বন্ধুর করতে আমাদের নানা ছলচাতুরীর কিন্তু কমতি নেই। কখনো পদ্মায় মানুষের কল্লা চাই, তারও আগে চাঁদে সাইদীর কল্লা দেখার গল্প শুনিয়ে আমরা তার তথা দেশের অগ্রযাত্রাকে বিলম্বিত করেছি মাত্র। নয়তো দেশটা হয়তো আরো আগেই আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারত। তারপরও আস্থা আছে, যতদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here