খবর৭১ঃ আগের মাসের তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হলেও গত কয়েক দিনের হিসাবে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির হার কমেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশনস অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, গত দুদিন ধরে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে হাসপাতালগুলোয় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমছে।
সারাদেশে শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৬৪ জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ১৪৬০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৭২১ জন; তার আগের ২৪ ঘণ্টায় ছিল ১ হাজার ৯৩৩ জন। এদিকে শনিবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরো দুই জন মারা গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৫১ হাজার ৪৭৬ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিত্সা নিয়েছে। এর মধ্যে ৪৩ হাজার ৫৮০ জন রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। বর্তমানে চিকিত্সাধীন আছে ৭ হাজার ৮৫৬ জন রোগী। আগস্ট ডেঙ্গুর মৌসুম হলেও মশা নিধনে নানা তত্পরতায় পরিস্থিতির উন্নতি আশা করছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার। তিনি বলেন, মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া মানুষের মধ্যে সচেতনতাও বেড়েছে। এসব কারণে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি।
গত জুলাই মাসে ১৬ হাজার ২৫৩ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আগস্ট মাসের প্রথম ১৬ দিনেই সেই সংখ্যা ৩৩ হাজার ১৫ জনে দাঁড়িয়েছে। সরকারি হিসেবে চলতি বছর এপ্রিলে ৫৮ জন, মে মাসে ১৯৩ জন, জুনে ১৮৮৪ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। জুলাই মাসে তা এক লাফে ১৬ হাজার ২৫৩ জনে পৌঁছায়। অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত যে ১ হাজার ৪৬০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, তার মধ্যে ঢাকায় ৬২১ জন এবং ঢাকার বাইরে ৮৩৯ জন।
আরও পড়ুনঃ চাকমা ভাষা যুক্ত হলো ফেসবুকে
চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সরকারি হিসাবে ৪০ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করলেও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ও জেলার চিকিত্সকদের কাছ থেকে অন্তত ১৩৬ জনের তথ্য পাওয়া গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বাইরে ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোতেই সবচেয়ে বেশি—২১৯ জন নতুন রোগী ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মনোয়ারা বেগম (৪৫) নামের এক নারী গতকাল বেলা পৌনে ১১টায় মারা গেছেন। মনোয়ারা বেগমের বাড়ি কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে। তার স্বামীর নাম সাইফুল ইসলাম। স্থানীয় ভাগলপুর হাসপাতালে তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। অবস্থার অবনতি হলে গত মঙ্গলবার তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। চিকিত্সারত অবস্থায় গতকাল সকালে তিনি মারা যান।
ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় গতকাল সকালে সুমন মোল্লা (১৭) নামে এক কলেজছাত্র মারা গেছেন। সুমন মাগুরা সদর উপজেলার ধলহরা চাঁদপুর গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে।
আগামী ৭ দিন ডেঙ্গু পরিস্থিতি চ্যালেঞ্জিং: ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগামী সাত দিনকে চ্যালেঞ্জিং বলেছেন সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক সানিয়া তহমিনা। গতকাল শনিবার নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি আরো বলেন, ‘আগামী সাতটা দিন আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। আবহাওয়া আমাদের অনুকূলে নয়। আমরা যদি এডিসের দুর্গে আঘাত হানতে না পারি, তাহলে পরিস্থিতি কী হবে বলা মুশকিল।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে তা বুঝতে সপ্তাহ খানেক সময় লাগবে। গতকাল বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের এখন উচিত নিজেদের এডিস মশা থেকে দূরে রাখার সমস্ত পন্থা অবলম্বন করা।’ ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে মশক নিরোধক আমদানির ওপরও জোর দিয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘নিজেদের রক্ষা করার জন্য যেমন ফুল প্যান্ট, ফুল হাতা জামা পরিধান করা দরকার, তেমনি রিপেল্যান্ট দ্রুত আমদানি করা যায় কি না সে বিষয়েও জোর দেওয়া দরকার।’