খবর৭১ঃ
পচাত্তরের ১৫ আগস্ট কালরাত্রিতে হারানো স্বজনদের কবরে ফুল ছিটিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিন। জাতীয় শোক দিবসে বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানী কবরস্থানে শায়িত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের কবরে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান তিনি।
এসময় প্রিয়জনদের হারানোর ব্যথায় কাতর প্রধানমন্ত্রীর চেহারা মলিন হয়ে উঠে। এসময় সঙ্গে থাকা মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও দলীয় নেতারা তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে শহীদদের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান।
বৃহস্পতিবার ভোরে মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল আর দলের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসেন বনানী কবরস্থানে। পরনে সাদা খোলের কালো পাড় শাড়ি। চোখে রোদ চশমা। কিছুদিন আগেই চোখের সমস্যার কারণে অস্ত্রোপচার করে এসেছেন শেখ হাসিনা। এ কারণেই রোদ চশমা পড়েছেন তিনি। চোখে চশমা থাকায় প্রধানমন্ত্রী চোখের পানি দেখা যায়নি। এটি না হয়ত আরও ভালো করে পড়া যেত তার চোখে ফুটে ওঠা বেদনা। যে বেদনা ছড়িয়ে রয়েছে তার পুরো মুখে। তার কণ্ঠ ভারি হয়ে উঠে। সমাধির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় স্বজন হারানোর যন্ত্রণায় তার পা যেন সামনে এগোতে চাচ্ছিল না। ধীর গতিতে হেঁটে সমাধিতে গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন তিনি।
৪৪ বছর আগে আজকের রাতেই বাবাসহ পরিবারের ১৩ সদস্যকে একসঙ্গে হারিয়েছিলেনি শেখ হাসিনা। তিনি ও বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান। বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকে শুরু করে ছোটভাই শিশু রাসেল, কাউকেই ছেড়ে কথা বলেনি ঘাতকের বুলেট। শেখ হাসিনার সেই প্রিয়জনেরা শুয়ে আছেন বনানীর এই কবরস্থানে। এই সারি সারি সবুজ কবরই তার স্বজনদের চিহ্ন। সকালে নিজের মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে সেই কবরের ওপরেই তিনি ছড়িয়ে দিলেন গোলাপের নরম পাপড়ি।
এরপর প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে করে যান টুঙ্গিপাড়ায়। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সমাধি কমপ্লেক্সের ফটকে পৌঁছলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ তাকে স্বাগত জানান। তাকে তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষে জাতির পিতার সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।
বেলা ১১টায় মাজার কমপ্লেক্স মসজিদ প্রাঙ্গণে দোয়া অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, সরকারি উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন।
টুঙ্গিপাড়ার কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, কাজী জাফরউল্লাহ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব–উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, একেএম এনামুল হক শামীম, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, এসএম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, আমিরুল আলম মিলন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।