ঈদযাত্রা তবুও দুদক কর্মকর্তার জন্য ১ ঘণ্টা ফেরি আটকা ঘাটে!

0
650
ঈদযাত্রা তবুও দুদক কর্মকর্তার জন্য ১ ঘণ্টা ফেরি আটকা ঘাটে!
ছবিঃ সংগৃহীত

খবর৭১ঃ

মাত্র একদিন পরে ঈদ। ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষের ভিড় সব জায়গায়ই। এ হিসেবে পদ্মার ফেরিঘাটের যানজট পরিস্থিতি ভয়াবহ। চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ফেরিগুলো। ঠিক এ মুহূর্তে দুদকের কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খানকে পদ্মা পার করে দেওয়ার জন্য একটি ফেরি প্রায় এক ঘণ্টা সময় ঘাটে আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

শনিবার (১০ আগস্ট) সকাল ১১টার দিকে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার ৪ নম্বর ফেরিঘাটে ঘটনাটির ভিডিও ও ছবি সরবরাহ করে এই অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী। যদিও বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে কর্তৃপক্ষের একেকজন একেকভাবে বক্তব্য দিয়েছেন।

একইসঙ্গে সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ, ঈদ মৌসুমে পদ্মা পার হওয়ার জন্য মানুষ এবং যানবাহন ব্যাকুল হয়ে থাকে। এটা সবার জানা। ঠিক এ মুহূর্তে অন্য কোনো গাড়ি লোড না করে দুর্নীতি দমন কমিশনের এক কর্মকর্তার জন্য একটি ফেরি আটকে রাখা হয়েছে এক ঘণ্টা ধরে।

পদ্মার দুই পারে আটকে থাকা যানবাহনের চালকরাও এ অভিযোগ করেছেন। তারা বলছেন, বর্তমানে এমনিতেই ফেরিগুলো হিমশিম খাচ্ছে যান পারাপারে। এর মধ্যে ভিআইপি সুবিধা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এক ঘণ্টা ফেরি ঘাটে আটকে রাখাটা আমানবিক। এই সময়ে অনেক মানুষ বাড়ি যেতে পারতেন।

কিন্তু বিষয়টিকে মেজর কিছু না বলে উড়িয়ে দিয়েছেন লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এতো সময় লাগেনি। কমিশনারের প্রোগ্রাম আগে থেকেই জানানো হয়েছিল। ফেরিটি আটকে রাখা হয়নি। শুধু প্রথমে স্যারের গাড়ি উঠে ফেরিতে। তারপর অন্য সব গাড়ি উঠে। এটা মেজর কিছু না। শুধু গাড়ির সিরিয়াল মানা হয়নি। স্যার প্রটোকল অনুযায়ী এটা পান। গাড়ির সিরিয়াল অনুযায়ী না উঠাটা তার অবৈধ না। সরকারি প্রোগ্রাম নিয়ে এসেছেন তিনি। তবে হ্যাঁ, মিনিট দশেকের মতো হবে, ফেরি অপেক্ষা করানো হয়েছে। এছাড়া সবচেয়ে খারাপ ফেরিতেই স্যার পার হয়েছেন।

জানা গেছে, শনিবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান দাপ্তরিক কাজে মাদারিপুরে যান। এ জন্য তাকে প্রটোকল দেওয়ার সরকারি চিঠি পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। সে অনুযায়ী সকালে প্রায় ৫০ মিনিট আটকে রেখে কর্ণফুলী ফেরিতে পার করা হয়েছে তাকে।

এদিকে, ফোনে কর্ণফুলী ফেরির চালক মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ১০ মিনিটের মতো সময় লেগেছে ফেরিটি লোড-আনলোড করতে। তখনই কয়েকটি প্রশ্নের জবাবে তিনি উত্তর না দিয়ে লাইন কেটে দেন। এরপর একাধিক বার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি।

শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক সাফায়েত আহমেদ বলেন, দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খানকে ‘বিশেষ সম্মান’ করে ফেরিতে আগে দেওয়া হয়েছে। ভিআইপি হিসেবে নয়। ১০ মিনিটের বেশি দেরি করা হয়নি দুদক কমিশনারের জন্য।

যাত্রীদের অভিযোগ অস্বীকার করে বিআইডব্লিউটিসি’র শিমুলিয়া ঘাটের উপ-মহাব্যবস্থাপক নাসির মোহাম্মদ চৌধুরী বলেন, এতো সময় হয়নি। যেটি ঘটেছে, সেটি লোড-আনলোডের সময়। দুদক কমিশনারের জন্য আলাদা কোনো ফেরি রাখা হয়নি।

শিমুলিয়া ঘাটের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মুরাদ বলেন, ভিআইপি কেউ গেলে বিআইডাব্লিউটিসি ফেরির ব্যবস্থা করে থাকে। চিঠি দিয়ে আগে অবগত করা হয়েছে। এটি তার দাপ্তরিক সফর। যদিও বর্তমানে ঈদের ছুটি চলছে।

এর আগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তিতাস (১১) নামে এক স্কুলছাত্র গুরুতর আহত হলে তাকে উন্নত চিকিৎসা জন্য ঢাকা নেওয়ার প্রয়োজনীতা দেখা দেয়। পরে ঢাকার উদ্দেশে গত ২৫ জুলাই রাত ৮টার দিকে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌ-রুটের কাঁঠালবাড়ি ১ নম্বর ভিআইপি ফেরিঘাটে পৌঁছায় তাকে বহনকারী একটি অ্যাম্বুলেন্স। তখন কুমিল্লা নামে ফেরিটি ঘাটে যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু সরকারের এটুআই প্রকল্পের যুগ্ম-সচিব আবদুল সবুর মণ্ডল পিরোজপুর থেকে ঢাকা যাবেন- তাই ওই ফেরিকে অপেক্ষা করার জন্য জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ঘাট কর্তৃপক্ষকে বার্তা পাঠানো হয়।

তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর ফেরিতে উঠে অ্যাম্বুলেন্সটি। কিন্তু এর মধ্যে মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে মাঝপদ্মায় অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যায় স্কুলছাত্র তিতাস।

এ ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে তিতাসের পরিবারকে তিন কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। এই রিট আবেদনের ওপর শুনানিকালে গত ৩১ জুলাই হাইকোর্ট বলেন, পৃথিবীর সব জায়গায় অ্যাম্বুলেন্স, অগ্নিনির্বাপণে ফায়ার সার্ভিস ও নিরাপত্তার জন্য পুলিশের গাড়ি যেতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। আমাদের এখানে কী হয়? ভিআইপি কারা ও ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স দিয়েছেন কি?

যদিও পরে গত ০৭ আগস্ট সংবিধান, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম) ও দেশের আইন অনুসারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রটোকল দিতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে কোনো ধরনের ব্যর্থতা ছাড়াই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুসারে তাদের প্রটোকল সুবিধা চলমান রাখতে নির্দেশও দেওয়া হয়।

 

সূত্রঃ বাংলানিউজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here