পুরান ঢাকার অলিতে গলিতে পশুর হাট

0
686
পুরান ঢাকার অলিতে গলিতে পশুর হাট
পুরান ঢাকার অলিতে গলিতে পশুর হাট। ছবিঃ সংগৃহীত।

খবর৭১ঃ

বংশালের সামসাবাদ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গায় কোরবানির অস্থায়ী পশুর হাট ইজারা দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কিন্তু বাস্তবে এই মাঠের আশপাশে খালি জায়গা নেই। পশুর হাট বসছে প্রধান সড়কে ও মহল্লার গলিতে, বাসাবাড়ি ও দোকানপাটের সামনে। এতে অনেক দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। বাসাবাড়ি থেকে বের হতে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে লোকজনকে। এর মধ্যে যাঁদের ব্যক্তিগত গাড়ি আছে, তাঁরা গাড়ি নিয়ে বের হতে পারছেন না।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘনবসতিপূর্ণ পুরান ঢাকায় অধিকাংশ গলিই মাত্র ১০ থেকে ১২ ফুট চওড়া। পাশাপাশি দুটি রিকশাই ঠিকমতো চলতে পারে না। অথচ ঈদুল আজহার সাত দিন আগে থেকেই এসব গলিতে পশুর হাট বসিয়েছেন ইজারাদার। এমন অবস্থায় গলিগুলো দিয়ে হেঁটে চলাও কঠিন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া রাস্তায় পশুর বর্জ্য ছড়িয়ে থাকায় বাসাবাড়ির দরজা-জানালাও সব সময় বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

সামসাবাদের মতো ডিএসসিসি এলাকায় আরও ১০টি পশুর হাট বসছে। গত দুই দিনে ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ হাটই রাস্তা ও গলিতে বসানো হয়েছে। অথচ ২০১৭ সালে খেলার মাঠ, পার্ক, রাস্তার ওপর পশুর হাট না বসাতে নির্দেশনা দিয়েছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। কিন্তু মাঠপর্যায়ে তার কোনো মিল পাওয়া যায়নি।

তবে ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, রাস্তা ছাড়া হাট বসানোর মতো ফাঁকা জায়গা নেই দক্ষিণে। তাই বিভিন্ন এলাকার মাঠকে কেন্দ্র করে রাস্তার ওপর হাটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সামসাবাদ মাঠের পাশে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় সব কটি গলিতেই দুই সারিতে গরু বেঁধে রাখা হয়েছে। মানুষের চলাচলের জন্য এর মধ্যে দুই থেকে তিন ফুট জায়গা আছে। এমন অবস্থায় গলিগুলোতে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ। এর মধ্যে হাটের বর্জ্য গড়িয়ে নালায় পড়ছে। দুর্গন্ধে নাক-মুখ চেপে চলাচল করছেন বাসিন্দারা।

পাশের হাজি আবদুর রসিদ রোডের বাসিন্দা বিশাল হোসেন বলেন, এখন মহল্লার কেউ অসুস্থ হলে তাঁকে মাথায় করে হাসপাতালে নিতে হবে। হাটের কারণে গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্স এলাকায় ঢুকতে পারবে না। অবিলম্বে রাস্তা থেকে এই হাট সরিয়ে নিতে হবে। আবাসিক এই এলাকায় পশুর হাট বসতে পারে না।

সামসাবাদ হাটের ইজারাদার ৩২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হাসান বলেন, ‘আমাকে রাস্তার ওপরই হাট ইজারা দিয়েছে ডিএসসিসি। তবে নাগরিকদের চলাচলে যাতে সমস্যা না হয়, সেদিকে নজর রাখব।’

সামসাবাদ থেকে এক কিলোমিটার পূর্বে নারিন্দার কাউয়ারটেক। যে খোলা জায়গায় পশুর হাট ইজারা দেওয়া হয়েছে, সেখানে ৪০ থেকে ৫০টির বেশি গরু রাখার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। এমন অবস্থায় বিক্রির জন্য আনা পশু আশপাশের সব গলিতে নিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। পশ্চিমে ধোলাইখাল ট্রাকস্ট্যান্ড পর্যন্ত গরু–ছাগল রাখা হচ্ছে। এতে যাত্রাবাড়ী-সদরঘাট সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

কাউয়ারটেকের বাসিন্দা মো. তারেক বলেন, সেখান থেকে মাত্র ৫০০ মিটার পূর্বে ধূপখোলা মাঠ এলাকায় আরেকটি হাট বসছে। এত অল্প দূরত্বের মধ্যে কাউয়ারটেকে হাট বসানোর কোনো যৌক্তিকতা ছিল না। কাউয়ারটেক হাটের ইজারাদার ফরহাদ ভূঁইয়ার পক্ষে সেটি তদারক করছিলেন মো. ফাহিম। তিনি বলেন, হাট ইজারার দরপত্র সীমানার কথা উল্লেখ ছিল না। হাটে যত পশু আসবে, সীমানাও তত বাড়বে।

তিন থেকে চার দিন আগ থেকেই চকবাজারের রহমতগঞ্জ মাঠের চারপাশের গলিগুলোতে হাট বসা শুরু হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গতকালও এই হাটে পশু আসতে দেখা গেছে। গলিতে বাসাবাড়ির সামনে পশু বেঁধে রাখায় বাসিন্দাদের চলাচলে সমস্যায় পড়তে দেখা গেছে।

চকবাজারের ফড়িয়াপট্টি লেনের বাসিন্দা আজমল হোসেন বলেন, হাটটি বসার পরপরই এই এলাকার মানুষ একধরনের গৃহবন্দী হয়ে পড়েছেন। হাটের বর্জ্যে নালাগুলোও ভরে গেছে। একটু জোরে বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে।

কামরাঙ্গীরচর, ধূপখোলা, হাজারীবাগ, মেরাদিয়া বাজার, গোপীবাগ বালুর মাঠ–কমলাপুর স্টেডিয়াম, শনির আখড়া–দনিয়া হাটেও একই চিত্র দেখা গেছে। এর মধ্যে শনির আখড়া-দনিয়ার হাট বসছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জায়গায়। এতে যান চলাচলে ঝুঁকি আছে। এ ছাড়া খিলগাঁওয়ের মৈত্রী মাঠ ও পোস্তগোলা শ্মশানঘাট এলাকায় রাস্তার ওপর হাট বসাতে ইজারাদারদের প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে।

ডিএসসিসির হাটের ইজারাপ্রক্রিয়া তদারক করেছেন মো. আসাদুজ্জামান। তিনি সম্প্রতি সংস্থাটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা পদ থেকে বদলি হয়েছেন। তিনি দাবি করেন, সংশ্লিষ্ট হাট এলাকায় ফাঁকা জায়গা আছে, সেখানেই হাট বসার কথা। এর বাইরে রাস্তা বা বাসায় হাট বসলে ডিএসসিসি ব্যবস্থা নিতে পারে।

আর রাস্তায় পশুর হাট বসানোর বিষয়টি অস্বীকার করেন ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। তিনি বলেন, যদি রাস্তা বন্ধ করে পশুর হাট বসানো হয়, তা তদারক করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here