খবর৭১ঃ
রাজধানীর ২৪টি পশুর হাটে আজ বুধবার (৭ আগস্ট) শুরু হয়েছে কোরবানির পশু বেচাকেনা। চলবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সারা দেশে এ বছর দুই হাজার ৩৬২টি কোরবানি পশুর হাট বসেছে। এর মধ্যে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে বসেছে ২৪টি হাট।
যানজট এড়াতে এবার রাজধানীর চারপাশে হাট বরাদ্দ দিয়েছে ঢাকা দুই সিটি করপোরেশন। এর ২৩টি অস্থায়ী ও একটি স্থায়ী। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১০টি এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১৪টি হাট রয়েছে।
রাজধানীর উত্তর সিটি করপোরেশনে পশুর হাটগুলো হলো উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের হাট, খিলক্ষেত বনরূপা হাট, খিলক্ষেত তিনশ ফুট সড়ক সংলঘ্ন উত্তর পাশে, ভাটারা (সাঈদনগর) পশুর হাট, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট খেলার মাঠ, মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী সড়ক সংলগ্ন (বছিলা) পুলিশ লাইনসের খালি জায়গা, মিরপুর সেকশন-৬ (ইস্টার্ন হাউজিং) খালি জায়গা, হাট, মিরপুর ডিওএইচএসের উত্তর পাশের সেতু প্রপার্টি ও উত্তর খান মৈনারটেক শহিদনগর হাউজিংয়ের খালি জায়গা।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে কোরবানির পশুর হাটগুলো হলো আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি যায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘের মাঠ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ঝিগাতলা-হাজারীবাগ মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, লালবাগ রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ হাট, কামরাঙ্গীর চর ইসলাম চেয়াম্যান বাড়ি মোড়, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট হাট, শ্যামপুর বালুর মাঠসহ আশপাশের খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন আশপাশ এলাকার খালি জায়গা, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সামসাবাদ মাঠ সংলগ্ন আশপাশ এলাকার খালি জায়গা, কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, শনির আখড়া ও দনিয়া মাঠ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধূপখোলা ইস্ট অ্যন্ড খেলার মাঠ, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউয়ারটেক মাঠ সংলগ্ন আশপাশ এলাকার খালি জায়গা ও আফতাবনগর ইস্টার্ন হাউজিং মেরাদিয়া বাজার।
গত রবিবার থেকেই গরু আসতে শুরু করে পশুর হাটগুলোতে। বন্যার কারণে ব্যবসায়ীরা এবার একটু আগেই হাটে গরু নিয়ে এসেছেন। তবে হাটে লোকজন (ক্রেতা) কম, এখনো জমে ওঠেনি। ক্রেতারা হাট ঘুরে দেখলেও এখনই তারা কিনছেন না।
এদিকে, ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফের কড়াকড়ির কারণে ওপার থেকে সীমান্ত পেরিয়ে গত চার দিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জে কোনো গরু আসেনি। গরুশূন্য হয়ে আছে জেলার সীমান্তবর্তী বিট-খাটালগুলো। এ অবস্থায় সীমান্তবর্তী এই জেলার স্থানীয় চাহিদা পূরণেও ভরসা হয়ে উঠেছে দেশি গরু। আর চাহিদা বাড়ায় দামও বাড়তির দিকে।
কোরবানির ঈদ ঘিরে প্রতিবছর ভারত থেকে বিপুলসংখ্যক গরু দেশে ঢোকে। আর এর বেশির ভাগই আসে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর, শিবগঞ্জ, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত পথ দিয়ে। গত বছরও কোরবানির ঈদের আগে ভারতীয় গরুতে সরগরম ছিল জেলার সরকার অনুমোদিত বিট-খাটালগুলো। অথচ এবারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিএসএফের কড়াকড়ির কারণে ভারতীয় গরু আমদানি কমে গেছে। মাঝে এক সপ্তাহ আগে শিবগঞ্জ উপজেলার মাসুদপুর সীমান্ত দিয়ে কয়েক দিনে সাত হাজার গরু দেশে ঢোকে। ভারতের ধুলিয়ান থেকে কলাগাছের ভেলায় ভাসিয়ে পদ্মা নদী পেরিয়ে এসব গরু আনা হয় মাসুদপুর খাটালে। এর পর থেকেই গরু আসা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।
বিট-খাটালগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, চলতি বছরের শুরু থেকেই ভারতীয় গরু আমদানিতে মন্দাভাব চলছে। ভারতের গরু ব্যবসায়ীরা আগে সীমান্ত এলাকায় এসে গরু পৌঁছে দিয়ে যেত। কিন্তু বিএসএফের বাধার মুখে তারা এখন সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডের ধারেকাছেই আসতে পারছে না। ফলে গরু আমদানি একেবারেই কমে গেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিভাগীয় কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট চার লাখ ৫০ হাজার ৭৯১টি ভারতীয় গরু-মহিষ দেশে ঢোকে। ওই অর্থবছরে কোরবানির ঈদের আগের এক মাসে ঢোকে দেড় লাখেরও বেশি গবাদি পশু। অথচ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভারত থেকে এসেছে মাত্র দুই লাখ ৬২ হাজার ৭৪টি গরু, যা গত বছরের অর্ধেক।
পশুর হাটে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সর্বোচ্চ সর্তক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হাটগুলোতে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা, পুলিশের কন্ট্রোল রুম ও ওয়াচ টাওয়ার। এছাড়া হাট কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাসেবীরাও রাতদিন কাজ করছেন। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সচেতনার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ডিএনসিসির ভারপ্রাপ্ত প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম বলেন, ইজারাদারেরা হাটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর মধ্যেই অনেক ব্যবসায়ী হাটে গরু নিয়ে চলে এসেছেন। তাদের ফেরত পাঠানোর সুযোগ নেই। হাট নিয়ে যেকোনো অনিয়ম ঠেকাতে প্রত্যেক অঞ্চলের প্রধান আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান করে পর্যবেক্ষণ কমিটি করে দেওয়া আছে। কোনো অনিয়ম হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, পশুর হাটের চাঁদাবাজি ও এলাকায় রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে যাতে সংঘর্ষ না হতে পারে তার জন্য পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ কাজ করছে। হাটগুলোতে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। জোরকরে কেউ এক হাটের পশু বোঝাই ট্রাক অন্য হাটে নিলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের টার্গেট যে কোন উপায়ে কোরবানির পশুর হাটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ দমন করা। যাতে ক্রেতা-বিক্রেতা নিশ্চিন্তায় পশু কেনাবেচা করতে পারেন।