মশক নিধনের নতুন ওষুধ ক্রয়ে দুই সিটির উদ্যোগ

0
568
আগস্টে কীটনাশকশূন্য হয়ে পড়ে ভাণ্ডার

খবর৭১ঃ অবশেষে মশক নিধনের নতুন ওষুধ কেনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। শুক্রবার একটি ব্র্যান্ডের ওষুধ পরীক্ষা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। আর চীন থেকে ওষুধের স্যাম্পল আনতে প্রয়োজনীয় চাহিদাপত্র দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। কয়েকদিনের মধ্যে এই স্যাম্পল চলে আসবে বলে জানিয়েছে ডিএনসিসি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সম্প্রতি কয়েকটি বিদেশি কোম্পানির ওষুধের স্যাম্পল সংগ্রহ করেছে ডিএসসিসি। এটির প্রাথমিক পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন এই স্যাম্পল রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর) ও খামারবাড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে পাঠানো হবে।

সেখানকার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ওই ওষুধ কেনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে ডিএসসিসি। আর ডিএনসিসিও শিগগিরই ওষুধের স্যাম্পল এনে টেস্ট করবে। কোনো কারণে এই স্যাম্পল আসতে দেরি হলে সেক্ষেত্রে ডিএসসিসির যে স্যাম্পল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে, সেটিই কিনবে ডিএনসিসি। অর্থাৎ যে ওষুধ আগে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে, দুই সিটিই সেটি ক্রয় করবে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শরীফ আহমেদ বলেন, ‘আমরা কয়েকটি ব্র্যান্ডের ওষুধের স্যাম্পল সংগ্রহ করে প্রাথমিক পরীক্ষা করেছি। চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠাব। চূড়ান্তভাবে ওষুধ বাছাই হলে আপনাদের জানানো হবে।’

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ওষুধের স্যাম্পল এখনও এসে পৌঁছেনি। এ ব্যাপারে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারলে আপনাদের জানাব।’

ডিএসসিসির স্যাম্পল পরীক্ষা : শুক্রবার দুপুরে ডিএসসিসি’র নগর ভবনের বারান্দায় বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে ভারত থেকে আনা ওষুধের স্যাম্পল কতটা কার্যকর, তা পরীক্ষা করে দেখা হয়। প্রথমে ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করে দুই বর্গফুটের তিনটি মশারির খাঁচায় ৫০টি করে মশা রাখা হয়। এরপর মাত্র এক হাত দূর থেকে এর চারপাশে একবার করে বিদেশি ওষুধটি ছিটানো হয়।

এতে দেখা যায়, মাত্র এক হাত দূর থেকে ফগিং (ছিটানো) করার পরও খাঁচায় থাকা মশাগুলো মরেনি। মাত্র ২৪ শতাংশ মশা অচেতন অবস্থায় পড়েছিল। তিনটি খাঁচার প্রথমটির ৫০টি মশার মধ্যে ১৩টি, দ্বিতীয়টির ১৪টি এবং তৃতীয়টিতে ৯টি মশা জ্ঞান হারিয়েছিল। দ্বিতীয় পরীক্ষার জন্য ওষুধের নমুনাটি পাঠানো হবে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর) ও খামারবাড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে।

ভারতের বায়ার কর্পোরেশনের কাছ থেকে সংগৃহীত এই স্যাম্পল কতটা মানসম্পন্ন হবে, সেটা সরকারের এ দুই প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। এক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল এলে ওষুধ আমদানির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

যেসব ওষুধের স্যাম্পল আনবে ডিএনসিসি : ২৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে একটি সভা হয়। সভায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্যসেবা অধিদফতরের সচিবকে নিয়ে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির কাজ হবে মশার ওষুধ চূড়ান্ত করা।

ওইদিনই কমিটির বৈঠকে চীন থেকে নতুন চার ধরনের ওষুধ আমদানির সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে রয়েছে ম্যালথিয়ন ৫৭ ভাগ ইসি, ম্যালথিয়ন ৫ ভাগ আরএফইউ, ডেল্টামেথ্রিন+পিআরও ২ ভাগ ইডব্লিউ এবং পিরিমিফস-মেথিল ৫০ ভাগ ইসি। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এসব ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যেই বিমানযোগে এসব ওষুধ সিটি কর্পোরেশনের কাছে চলে আসার কথা ছিল; কিন্তু ওই ওষুধ এসেছে কি না, সেটা পরিষ্কার করছে না সংশ্লিষ্টরা। এ ওষুধ আসার সঙ্গে সঙ্গে তা খামারবাড়ি ও আইইডিসিআর-এ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। পরীক্ষায় মান সন্তোষজনক হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নতুন ওষুধ বিমানযোগে আমদানি করা হবে।

ওষুধের মান পরীক্ষার নিয়ম : ওষুধ বুঝে নেয়ার আগে ওষুধের মান প্রথমে মাঠপর্যায়ে পরীক্ষা করা হয়। মশারির ভেতরে কিছু মশা রেখে সেগুলোর ওপর স্প্রে করা হয়। ২০ শতাংশ মশা সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লে ও পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মোট ৯০ শতাংশ মশার মৃত্যু হলে সেই ওষুধের রাসায়নিক বিশ্লেষণ (কেমিক্যাল অ্যানালাইসিস) করা হয়।

এসব দায়িত্ব পালন করে খামারবাড়ির উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং এবং মহাখালীর রোগ নিরীক্ষা, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। তারা ল্যাবরেটরিতে ওষুধের জৈবিক কার্যকারিতা (বায়ো ইফিকেসি) পরীক্ষা করে। উভয় প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষায় ওষুধের মান সন্তোষজনক বলে প্রমাণিত হলে সিটি কর্পোরেশন সেটা নিয়ে থাকে।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে রাজধানীর মশক নিধন কার্যক্রমে যে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে, সেগুলো আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)-এর গবেষণায় অকার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এরপর থেকেই নতুন ওষুধ আনতে বিভিন্ন মহলের চাপ রয়েছে। যদিও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কেউ কেউ দাবি করছেন এই ওষুধ কার্যকর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here