খবর৭১ঃ কোরবানির ঈদ সামনে রেখে সপ্তাহের ব্যবধানে আরেক দফা বাড়ল আদা ও রসুনের দাম। রাজধানীর বাজারগুলোতে গত সপ্তাহে প্রতি কেজি দেশি রসুন বিক্রি হয়েছে ১২০-১৩০ টাকা।
যা শুক্রবার ২০ টাকা বেশি অর্থাৎ ১৪০-১৫০ টাকা দিয়ে ভোক্তাদের কিনতে হয়েছে। আদা বিক্রি হয়েছে ১৬০-১৮০ টাকা কেজি; যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ১৪০-১৬০।
এ ছাড়া বাজারে গত সপ্তাহের মতো সব ধরনের সবজি ও মাছ চড়া দামে বিক্রি হয়েছে। তবে সরবরাহ বাড়তে থাকায় কমছে ইলিশের দাম। আর চাল, ডাল, ভোজ্যতেল ও মাংসের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নয়াবাজার ও রামপুরা কাঁচাবাজার ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে। এদিকে চট্টগ্রামের চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জ বাজারে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে মসলার দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে এলাচের দাম কেজিতে ৫০ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া জিরা, দারুচিনি, গোলমরিচ, লবঙ্গ ও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা মো. সোনাই আলী বলেন, ‘বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মানভেদে দেশি রসুন ১২০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। কিন্তু আজ (শুক্রবার) পাইকারি বাজারে পণ্যটির দাম বেড়ে যায়। তিনি বলেন, আদার দামও বাড়ছে। কোরবানির ঈদ ঘিরে মসলাজাতীয় পণ্যের দাম পাইকারি বাজারে বেড়েই চলছে।
যে কারণে খুচরা বাজারে প্রভাব পড়ছে। অন্যদিকে তিন সপ্তাহ ধরেই সবজির দাম নিয়ে অসন্তুষ্ট ক্রেতারা। নতুন করে দাম না বাড়লেও শুক্রবার চড়া দামে বিক্রি হয়েছে সব ধরনের সবজি। এদিন পাকা টমেটো কেজি ১৩০-১৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ১৮০-২০০ টাকা, গাজর ৮০-১০০ টাকা, করলা ৭০-৮০ টাকা, ঝিঙে ও ঢেঁড়শ ৫০-৬০, পটোল ৪৫-৫০ এবং বেগুন ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। রাজধানীর নয়াবাজারের সবজি বিক্রেতা মো. সুমন বলেন, বন্যায় সবজি নষ্ট হয়েছে। বাজারে সবজির সরবরাহও কম। তাই দাম বেশি।
এদিকে রাজধানীর বাজারে ইলিশের সরবরাহ বাড়ছে। এ কারণে দামও কমতে শুরু করেছে। রাজধানীর খুচরা বাজারে ৪০০ গ্রাম ওজনের প্রতিটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছিল ৪০০-৪৫০ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ৪৫০-৫০০ টাকায়। ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৭০০-৮০০ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ৮০০-৮৫০ টাকা। আর ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলশ বিক্রি হচ্ছিল ৯০০-১০০০ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ১১০০-১২০০ টাকায়। এ ছাড়া বাজারে অন্যান্য মাছ গত সপ্তাহের মতো চড়া দামে বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি তেলাপিয়া বিক্রি হয় ১৪০-১৫০ টাকা, পাঙ্গাশ ১৫০-১৬০, চাষের রুই ৩৫০-৪০০, পাবদা ৬০০-৭০০, টেংরা ৬০০-৭০০, শিং ৪০০-৫৫০, বোয়াল ৫০০-৭০০, চিংড়ি ৬০০-৮০০ এবং চিতল মাছ ৫০০-৮০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়।
এদিন বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৩৫-১৪০ টাকা, লাল লেয়ার মুরগি ২২০-২৩০ টাকা, পাকিস্তানি কক ২২০-২৫০ টাকা কেজি, গরুর মাংস ৫৫০-৫৭০ টাকা, খাসির মাংস ৭৫০-৮৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
চট্টগ্রামে মসলার বাজার অস্থির : কোরবানির ঈদ সামনে রেখে চট্টগ্রামের চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জের একাধিক সিন্ডিকেট অকারণে এই পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে এলাচ কেজিপ্রতি দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেড়ে দুই হাজার ২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া জিরা, দারুচিনি, গোলমরিচ, লবঙ্গ ও পেঁয়াজের দামও বেড়েছে।
এভাবে মসলাপণ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। ক্যাব চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রশাসনের নির্লিপ্তিতায় বাড়ছে মসলাসহ বিভিন্ন জিনিসের দাম। অসাধু ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে বেশি মুনাফার আশায় মসলাপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে জিরা বিক্রি হয়েছে মানভেদে কেজি ২৮০-৩০৫ টাকা, এলাচ প্রতি কেজি ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ২৫০ টাকা, দারুচিনি ২৮০ টাকা থেকে ২৬০ টাকা, গোলমরিচ ৪০০ টাকা ও লবঙ্গ ১ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি আইটেমে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা দাম বেড়েছে।
পেঁয়াজ কেজি বিক্রি হয়েছে ২৮ টাকা থেকে ৩০ টাকা। আর খুচরা বাজারে কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৬ টাকায়। পেঁয়াজের দামও কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খাতুনগঞ্জে ১০-১৫ জন ব্যবসায়ী এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তারাই মসলাজাতীয় পণ্যের দাম বাড়িয়েছেন।
জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন মাহি বলেন, মসলাজাতীয় পণ্যের আমদানি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। বাজারে এর কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রভাব পড়েছে। তবে সামনে আর মূল্য বাড়ার সম্ভাবনা নেই।
ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াবে এটা স্বাভাবিক।’