খবর৭১ঃ
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) থেকে শুরু হলো বাঙালির শোকের মাস আগস্ট। এ মাসের ১৫ তারিখ অর্থাৎ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। মানবসভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের কালিমালিপ্ত বেদনাবিধূর শোকের দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে মানবতার শত্রু প্রতিক্রিয়াশীল ঘাতকচক্র নির্মমভাবে বাঙালি জাতির মুক্তি আন্দোলনের মহানায়ক ও বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে।
কালরাতে ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামাল, মেজ ছেলে শেখ জামাল। শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, শেখ জামালের স্ত্রী রোজী জামালও খুন হন তাদের হাতে।
ঘাতকের হাত থেকে রক্ষা পায়নি ছোট্ট শিশুও। সেই রাতে বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে শেখ রাসেলকেও হত্যা করে ঘাতকরা। বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসেরও রক্ষা পাননি ঘাতকদের হাত থেকে।
হত্যাকাণ্ডের শিকার হন আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণি ও তার স্ত্রী বেগম আরজু মণি, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছোট মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, ছোট ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু, শহীদ সেরনিয়াবাত, আব্দুল নঈম খান রিন্টু, বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা অফিসার কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ।
তাই জুলাইয়ের শেষ দিন ঘড়ির কাঁটা ১২টা পার হতেই শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে গোটা বাঙালি জাতি। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস হিসেবে যথাযথ মর্যাদায় পালন করা হয়। এ দিনটি সামনে রেখে প্রতিবছর মাসব্যাপী শোকের কর্মসূচি পালন করে আওয়ামী লীগ। এবারও মাসব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়েছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম বিভিন্ন সংগঠন।
ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ, সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সংস্থাসমূহের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের সব জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ সব শাখার নেতাদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে দিবসটি স্মরণ ও পালন করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের মাসব্যাপী কর্মসূচিঃ
৩১ জুলাই দিনগত রাত ১২.০১ মিনিটে (১ আগস্টের প্রথম প্রহরে) শোকের মাসের প্রথম প্রহরে আলোর মিছিল বের হবে ধানমন্ডি ৩২ নং সড়ক ধরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর অভিমুখে। এই কর্মসূচি পালন করবে স্বেচ্ছাসেবক লীগ।
১ আগস্ট বিকেলে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে কৃষক লীগের উদ্যোগে হবে রক্তদান কর্মসূচি। এতে অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
৩ আগস্ট পৃথক আলোচনা সভা করবে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ। ৪ আগস্ট বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আলোচনা সভা করবে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ।
৫ আগস্ট ধানমন্ডি আবহানী ক্লাব প্রাঙ্গণ ও বনানী কবরস্থানে শহীদ শেখ কামালের জন্মদিন: শ্রদ্ধার্ঘ্য অপর্ণ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। ৬ আগস্ট কর্মসূচি থাকছে শ্রমিক লীগের।
৮ আগস্ট বনানী কবরস্থানে বঙ্গমাতা শহীদ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন: শ্রদ্ধার্ঘ্য অপর্ণ, কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। ওই দিন বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করবে মহিলা আওয়ামী লীগ।
৯ আগস্ট বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটশনে আলোচনা সভা করবে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ। ১০ আগস্ট কর্মসূচি থাকছে যুবলীগের।
১৫ আগস্ট দিনভর থাকবে নানা কর্মসূচি। এরমধ্যে থাকছে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে সংগঠনের সবস্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন; সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ; সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন; এরপর সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনকের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ইত্যাদি। এতে কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেবেন। সেদিন সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ, মন্দির-প্যাগোডা-গির্জা, উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা; অসচ্ছল, এতিম ও দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ এবং বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজনও থাকছে।
১৬ আগস্ট বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা করবে আওয়ামী লীগ।
১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হবে আলোচনা সভা
২১ আগস্ট সকালে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আলোচনা সভা করবে বাংলাদেশ কৃষিবিদ পরিষদ।
২২ আগস্ট হবে মহিলা আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা। ২৩ আগস্ট একই ধরনের কর্মসূচি পালন করবে তাঁতী লীগ।
২৪ আগস্ট নারী নেত্রী বেগম আইভী রহমানের স্মরণে বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হবে।
২৫ আগস্ট কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা করবে বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ। ২৬ আগস্ট একই মিলনায়তনে গ্রেনেড হামলা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা করবে আওয়ামী লীগ।
২৭ ও ২৮ আগস্ট আলাদা আলোচনা সভা করবে যুব মহিলা লীগ ও কৃষক লীগ।
২৯ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে এনে বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে মানববন্ধন করবে মহিলা শ্রমিক লীগ।
৩০ আগস্ট বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আলোচনা সভার পর ৩১ আগস্ট আলোচনা সভা করবে ছাত্রলীগ।