রাকিব হাসান পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ কলাপাড়ার পায়রা বন্দরের ফোরলেন সংযোগ থেকে শেখ কামাল সেতুর সংযোগ পর্যন্ত মহাসড়ক এখন ১১ চাঁদাবাজের দখলে। দিনরাত এরা সড়কে চলাচলকারী মালামালবাহী টমটম, ভ্যান, যাত্রীবাহী মোটরসাইকেল, পর্যটকের বাস, কুয়াকাটাগামী মালবাহী যানবাহন থেকে চাঁদা আদায় করে আসছে। ফ্রি-স্টাইলে যান ভেদে ৫০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। আবার টমটম, ভ্যান থেকে মাসিক হিসেবে টাকা আদায় করা হয়।
পায়রা বন্দর ফোরলেন সড়কের লোন্দাগামী সংযোগস্থল থেকে শেখ কামাল সেতুর মহাসড়কে এখন চাঁদাবাজদের দৌরাত্মে যাত্রীসহ যানবাহনের মালিক, চালকরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মহিব্বুর রহমান মহিব প্রকাশ্যে এসব চাঁদাবাজি বন্ধে পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মুনিবুর রহমান কয়েক দফা অভিযান করেছেন। কলাপাড়া পৌরমেয়র চেষ্টা করেছেন কিন্তু চাঁদাবাজি থামেনি। এদের দৌরাত্ম আরও বেড়েছে। নতুন নতুন সড়কে চাঁদাবাজ এ চক্র মুর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। চারটি স্পটে এরা দাঁড়িয়ে হায়েনার মতো যানবাহন দাবড়ে চাঁদা আদায় করছে। প্রত্যেক চাঁদাবাজের হাতে পৌরটোলের রশিদ রয়েছে। ওই রশিদ দিয়েই আদায় করা হচ্ছে টাকা। এছাড়াও শ্রমিক সংগঠনের কল্যান ফির নামে অকল্যানকর এ কাজটি চলছে। চাঁদাবাজ এ বাহিনী এখন সরকারের ভাবমুর্তি চরমভাবে ক্ষুন্নের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ এ জিম্মিদশা দেখে পরিত্রাণে পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সওজের এবং নির্মানাধীন পায়রা বন্দরগামী ফোরলেন মহাসড়ক হলেও কলাপাড়া পৌরসভার রশিদ হাতে চাঁদাবাজ এ চক্র হামলে পড়ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে জনজীবনে। সবজি, কাঁচা মালবাহী টমটম, ভ্যান কিংবা পিকআপ আটকে হাজার হাজার টাকা চাঁদাবাজীর কারণে এসব কাঁচামালের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে হয় বিক্রেতাদের। বাধ্য হয়ে কিনছেন বেশি দামে ক্রেতারা। কোন উপায় না পেয়ে বুধবার রাতে টমটম, ভ্যানসহ নিত্যপণ্যবাহী যানের চালকরা কলাপাড়া প্রেসক্লাবে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, নাচনাপাড়া এলাকার রাজার নেতৃত্বে রাস্তায় চাঁদাবাজ নির্ধারন করে স্পটভিত্তিক চাঁদা তোলা হয়। ভ্যান. অটো, টমটমসহ সকল যানের চালকদের অভিযোগ রাজার চাদাঁবাজ চক্রের কাছে তারা এখন জিম্মি হয়ে পড়েছে। রাজার সঙ্গে সড়কে সরাসরি চাঁদা তুলছে আরও ১০ জন। চালকদের অভিযোগ, দিনভর টমটম, ভ্যান চালাই। সংসারের চাল কেনার টাকা হয়না। সেখানে পৌরসভার লেখা ২০ টাকার রশিদ দিয়ে ৫০ টাকা লিখে আদায় করা হয় ৭০ টাকা। আবার মাসিক হিসেবে আদায় করা হয় ২০০ টাকা। রাজা মিয়ার নিয়ন্ত্রণে নাচনাপাড়ার খোকন, কলোনীর মাসুম, চাকামইয়ার হানিফের নাম তারা জানেন, বাকিদের নাম বলতে পারছেনা। ফোরলেন, চৌরাস্তা, শেখ কামাল সেতুর সংযোগসড়কে ও চিঙ্গরিয়া মোড়ে যানবাহন আটকে টাকা তোলা হয়। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ৪/৫দিন আগে নাসির হাওলাদার নামের এক টমটম চালককে মারধর করা হয়। একদিন আগে লাঞ্ছিত করা হয় আরও একজনকে। চাঁদাবাজদের গডফাদারের নাম সকলের মুখে মুখে শোনা যায়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মুনিবুর রহমান সম্প্রতি দুই দফা হানা দিয়ে ওইচক্রকে ধাওয়া করেছেন। তিনি বৃহস্পতিবার দুপুওে মহাসড়কের শেখ কামাল সেতুর প্রবেশদ্বার দখল করে বাসস্ট্যান্ড করায় অভিযান করেছেন। কলাপাড়া থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম ইতোপুর্বে দুই দফা দুইজনকে আটক করেন। কিন্তু রহস্যজনকভাবে এরা ফের তাদের চাদাবাজী বহাল রাখছে। সাধারণ মানুষের এন্তার অভিযোগ, পুলিশ প্রশাসন ও সরকারি দলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আন্তরিকভাবে উদ্যোগ নিলে এ চাঁদাবাজি বন্ধ হবে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কুয়াকাটাগামী দুরপাল্লার পর্যটক, মালবাহী যানবাহন, যাত্রীবাহী অটো, টমটম, ভাড়াটে মোটরসাইকেল, অটোরিক্সা, লরি, পিকআপ, কাভার্ড ভ্যানসহ সব ধরনের যান থেকে ফি মাসে অন্তত তিন-থেকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। চাঁদাবাজরা ২৪ ঘন্টা থাকছে মহাসড়কে। এরা যানবাহন দেখলেই হায়েনার মতো হামলে পড়ে। মানুষ বর্তমানে এদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন। উপজেলা আইন শৃঙ্খলার মাসিক সভায় বিষয়টি নিয়ে বহুবার উত্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এরা নির্মূল হয়নি। তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেন কলাপাড়া থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম ও ইউএনও মো. মুনিবুর রহমান। স্থানীয় সংসদ সদস্য অধক্ষ মহিব্বুর রহমান বলেন, চাঁদাবাজ যেই হোক তার বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বহু আগেই স্পষ্ট করে বলা হয়েছে।