খবর৭১ঃ
সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত কর্মীকে বলা হয় সাংবাদিক। সাংবদিকের পেশা সাংবাদিকতা। পেশা হিসেবে সাংবাদিক খুবই সম্মানজনক ও ঝুকিপূর্ন একটি পেশা। এই পেশা সততা ও দায়িত্বশীলতা প্রথম ও প্রধান কথা। অসততা ও দায়িত্বহীনতা এ পেশার জন্য যেমন ক্ষতিকর তেমনি দেশ ও জাতীর জন্যেও তা ক্ষতিকর। কিন্তু আজকাল এ পেশায় দায়িত্বহীন লোকের সংখ্যা বেড়ে গেছে আশংকাজনক হারে। যা সাংবাদিকদের পেশা নয়। বন্তুনিষ্ঠ সংবাদ তুলে ধরা সাংবাদিকদের কাজ। সাংবাদিকেদের এই জাতীয় অপরাধমূলক কাজ থেকে দূরে থাকার জন্য পেশা বিষয়ক জ্ঞানার্জনে গুরুত্ব দিতে চাই। সাংবাদিকেদের কাজ হল সংবাদ সংগ্রহ করা। এ সংবাদ জিনিসটি কি? সংবাদ হল ব্যতিক্রম জাতীয় কিছু ঘটে যাওয়া ঘটনা।
যা সংবাদকর্মীকে সংগ্রহ করে সংবাদ তৈরী করা। এই সংবাদই আবার সাধারণত চার প্রকারে হয়ে থাকে। অপরাধ বিষয়ক সংবাদ, উন্নয়নমূলক সংবাদ, পরিবেশ বিষয়ক সংবাদ, দূর্ঘটনা বিষয়ক সংবাদ। সাধারণ অর্থে যে বা তিনি সংবাদের সেবা করে থাকেন তিনিই সাংবাদিক বা সংবাদকর্মী। অন্য অর্থে যিনি সংবাদ লিখেন বা তৈরী করেন তিনিই সাংবাদিক। আধুনিক সাংবাদিকতায় পূর্নাঙ্গ সাংবাদিক হচ্ছেন তিনিই, যিনি রিপোর্টিং, এ্যাডিটিং সহ সাংবাদিকতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল শাখাতেই পারদর্শী। সাংবাদিক কথাটির প্রকৃতপক্ষে ব্যাপক অর্থে এক কথা বলা যায়। কোন সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞায় তাকে আবদ্ধ করা সম্ভব নয় বা করা যায় না। তবে আর.ডি. ব্লুমেন ফেল্ড বলেন, যে ব্যাক্তি সংবাদ সংগ্রহ এবং তাকে সংবাদ উপযোগী করে তৈরী ও প্রকাশ করে তিনিই সাংবাদিক বা সংবাদ কর্মী। টি.এইচ.এস.স্কট সাংবাদিকদের সংজ্ঞা নিরুপন করতে গিয়ে বলেছেন, একটি প্রদেয় লানুযায়ী সাময়িক বিরতিতে লেখার মাধ্যমে যিনি জনমতকে প্রভাবিত করতে চান, তিনি সাংবাদিক। একজন পেশাদার সাংবাদিকের সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে গিয়ে ১৯৪৭ সালে প্রণীত বাংলাদেশ সংবাদপত্র আইনে বলা হচ্ছে, পেশাদার সাংবাদিক হচ্ছে একজন সার্বক্ষনিক সাংবাদিক যিনি একটি সংবাদপত্র বা এতদসংক্রান্ত কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যার অন্তর্ভূক্ত হচ্ছেন সম্পাদক, ফিচার লিখক, বার্তা সম্পাদক, সহ সম্পাদক, রীডার রাইটার, প্রতিবেদক, সংবাদদাতা, অনুলিপি পরীক্ষক, কার্টুনিষ্ট, সংবাদ আলোকচিত্রী ও সম্পাদনা সহকারী। প্রসঙ্গ সাংবাদিকদের গুণাবলী ॥
মানুষ যে যেই পেশায় থাকুন না কেন তার নিজ পরিমন্ডলে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করার জন্য তার কতগুলো গুণ থাকা খুবই আবশ্যক। সাংবাদিকের ক্ষেত্রে ও সেই একই কথা প্রযোজ্য। তবে অন্য যে কোন পেশার তুলনায় সাংবাদিকতার সাথে জড়িত লোকজনের জন্য একটি ভিন্নধর্মী গুনাবলীর প্রয়োজন হয়। সাংবাদিকতায় প্রথম শ্রেণী ডিগ্রি নিয়েও অনেকে পরিপূর্ণ সাংবাদিক হতে পারেন না। আবার এর ঠিক বিপরীত হচ্ছে যেমন অনেকে সাংবাদিকতায় একাডেমিক ডিগ্রি না নিয়েই বিরাট মাপের সাংবাদিক হয়েছেন এমন নজির বহু রয়েছে। বাংলাদেশের একজন বিজ্ঞ সাংবাদিক বলেছেন, সাংবাদিকতায় সাফল্য লাভ করতে হলে কাজের যোগ্যতার পাশাপাশি শারীরিক দিক দিয়েও তাকে পুরোপুরি সমর্থবান হতে হবে। একজন সাংবাদিককে হতে হবে অবশ্যই বুদ্ধিদীপ্ত। সংবাদসূত্র বা সংবাদ বিষয়ে তার ভালো জ্ঞান বুদ্ধি থাকতে হবে। সংবাদ সংগ্রহেও তা প্রকাশের ক্ষেত্রে তাকে প্রজ্ঞতায় পরিচয় দিতে হবে। তাকে হতে হবে যথেষ্ট সাহসী এবং তার নার্ভ থাকবে যথেষ্ট মজবুত। প্রতিনিয়ত তাকে প্রতিকুল অবস্থার মধ্যে দিয়ে কাজ করতে হবে। সাংবাদিকতা করতে হলে জীবনে ঝুকি ও বিপদ বারবার আসতে পারে। সাহসের সাথে তাকে তা মোকাবেলা করতে হবে। যিনি সাংবাদিক হবেন তিনি হবেন সব সময়ই সৌজন্যবাদী বন্ধুভাবাপন্ন, তিনি হবেন শান্ত, ভদ্র।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো সাংবাদিকের কখনও খিটখিটে মেজাজ থাকতে নেই ও গোমড়ামুখী হবেন না। তাহলে তার পক্ষে কাঙ্খিত কাজ করা সম্ভব হবে না। তিনি অহংকারী বা গোমড়ামূখি হবেন না। তিনি তার ব্যক্তিত্ব দ্বারা সবাইকে আকুষ্ট করবেন। তিনি হবে সহনশীল সবার সঙ্গে তার মানিয়ে নেবার ক্ষতা থাকতে হবে। সাংবাদিকের থাকবে তীব্র স্মৃতিশক্তি। প্রখর স্মৃতিশক্তি থাকাটা সাংবাদিকের একটি বড়গুণ। সাংবাদিকের চোখ কান সব সময়ই খোলা থাকতে হবে। যা সংবাদ সংগ্রহের জন্য প্রয়োজন। সাংবাদিক হবেন দল বা গোষ্ঠী নিরপেক্ষ। তবে নিশ্চিত রূপেই একজন আদর্শবাদী। তিনি হবেন রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন। সর্বোপরি সাংবাদিকদের থাকতে হবে নেতৃত্বদান করা ক্ষমতা। তার জন্য চাই সাংগঠনিক শক্তি। জীবনের প্রতিটি স্তরে ও ক্ষেত্রে তাকে তার পরে ও মতের লোকজনদের সমবেত করা এবং নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা। লোকস্বার্থে তাকে সবার প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে, মনে রাখতে হবে একজন সাংবাদিক হচ্ছেন সমাজের প্রতিভূ। সমাজ সেবাই তার মূল লক্ষ। ব্যক্তি মানুষের চেয়ে সমাজের মারুষ হয়ে উঠতে পারাটা তার জন্য বড় কৃতিত্ব।