আত্মনির্ভরশীল নারী মুরাদনগরের পারুল আক্তার

0
602
আত্মনির্ভরশীল নারী মুরাদনগরের পারুল আক্তার

খবর৭১ঃ

মোঃ রাসেল মিয়া, মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ কল্যাণের অগ্রযাত্রা ও আত্মনির্ভরতায় সৃষ্টি ও মমত্বের এক অপূর্ব সংমিশ্রন নারী। নারী অবজ্ঞা, উপেক্ষা বা ফেলে দেওয়ার নয়। দেশ জাতি ও সমাজ নির্মাণে এখন পুরুষের পাশাপাশি সমান তালে নারীরাও এগিয়ে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে আত্মনির্ভরশীল শ্রেষ্ঠ নারী হিসেবে জাতীয় পুরস্কার গ্রহণ ও অসাধারণ জীবনের গল্প রচনা করেছেন যে নারী, তিনি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার নবীপুর পূর্ব ইউনিয়নের বাখরনগর গ্রামের কাউছার আলমের স্ত্রী পারুল আক্তার (৩৫)। ২০০৪ সালে অভাবের সংসারে মাত্র বিশ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে নার্সারির কাজ করে সংসার চালাতে শুরু করেন তিনি। নিজের দক্ষতা ও মেধা দিয়ে কাজের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি শতাধিক নারী-পুরুষকে আত্মনির্ভরশীল ও স্বাবলম্বী করে তুলেছেন তিনি। বর্তমানে তার এ নার্সারির নাম দেন সবুজ নার্সারি। বাখরনগর গ্রামের ইউনুছ মিয়ার মেয়ে পারুল আক্তার। প্রায় ২০ বছর আগে একই গ্রামে বিয়ে হয় পারুলের। বিয়ের পর থেকে স্বামী কোনো কার্জকর্ম করতে না পারায় ছেলে-মেয়েদের দুই বেলা খাওয়ানোর মতো আয় হতো না। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে পারত না। এমনকি না খেয়ে কাটাতে হয়েছে দিনের পর দিন। বর্তমানে তিন বিঘা জমি নিয়ে চলছে তার নার্সারী। এখানে কি পাল, চেড়ি, মিরাক্কেল, এভিলিও, পাসিমন, অলিফ, কিউই, আইনক্রীম ড্রিঙ্কস অরেঞ্জ লংগান, এডোকাডের মতো দেশি-বিদেশি শতাধিক জাতের চারা গাছ রয়েছে। এই নার্সারিতে দৈনিক ১৫ জন লোক কাজ করে। এখন মাসিক আয় তার ৭০/৮০ হাজার টাকা। সংসারে আর নেই কোনো প্রকার সমস্যা। এখন স্বামী সংসার নিয়ে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জন করেছে পারুল। তবে স্থানীয় এনজিও সংস্থা অনেকটাই সহায়ক হিসেবে ভূমিকা রেখেছে তার জীবনে। সে সময় দৃঢ় মনোবল ও সাহসই ছিল তার বড়ো সঙ্গী। পাশাপাশি এলাকার শত শত দুস্থ লোকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তার কাছে কাজ শিখে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেক নারী-পুরুষ। পারুল আক্তার বলেন, ‘নারী হিসেবে ব্যবসা করার বিষয়টি সমাজ খুব সহজভাবে মেনে নেয় না। তাও আবার গ্রামের মতো জায়গা। স্বামী ছাড়া পরিবার থেকে সে সময় কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। স্বামীর তেমন কোনো সম্পদ না থাকায় সে সময় অর্থই বড়ো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।’ ২০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে নার্সারি কাজ করে সংসার চালাতে শুরু করি। আমি কয়েক শতাধিক নারী পুরুষকে কাজ শিখিয়েছি। আজ অনেকে স্বাবলম্বি হয়েছেন। তবে এ ব্যবসাকে আরো বড়ো পরিসরে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। সংগ্রাম করে এ পর্যন্ত এসেছি। বাকি জীবনটাও সংগ্রাম করে কাটিয়ে দেব অসহায়দের পাশে থেকে। সরকার আমার মতো এক নারীকে দেশ সেরা পদক দিয়ে নারী সমাজের সম্মান উজ্জ্বল করেছেন। স্বামী আবু কাউছার বলেন, আমি স্বামী হিসেবে সংসারের দায়িত্ব নিতে পারিনি। আমার স্ত্রী পারুল নিজের কর্মদক্ষতায় আত্মনির্ভরশীল নারী হিসেবে দেশ ও এলাকার মান উজ্জ্বল করেছে। এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here