খবর৭১ঃ এইচএম এরশাদের মৃত্যুর পর দলের নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব-গ্রুপিংয়ের অবসান ঘটাতে তৎপর জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদের। এর অংশ হিসেবে তিনি শনিবার ভাবি ও দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের গুলশানের বাসায় গেছেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা ভাবি-দেবর একান্তে কথা বলেন। দলে ও সংসদে নেতৃত্ব নিয়ে মতবিরোধ কাটাতে সমঝোতায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে এ সময় তারা একটি ফর্মুলা নিয়ে আলোচনা করেন। ফর্মুলা অনুযায়ী সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে এরশাদের স্থলাভিষিক্ত হবেন রওশন। আর দলের চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদেরই দায়িত্ব পালন করবেন।
এরশাদের দিয়ে যাওয়া লিখিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জিএম কাদের বৃহস্পতিবার জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। এতে প্রকাশ্যে বিরোধিতা না করলেও ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে আলোচনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন রওশন। চেয়ারম্যান হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রওশন ইত্তেফাককে বলেছিলেন, ‘বিষয়টা নিয়ে আমি চিন্তা করছি, চিন্তা করে আমি আমার বক্তব্য দেব।’এতে নেতৃত্ব প্রশ্নে ভাবি-দেবরের দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
দ্বন্দ্ব মেটাতে শনিবার বিকাল ৩টার দিকে রওশনের বাসায় যান জিএম কাদের। সেখানে আরও দু’তিনজন যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের সূত্রে জানা গেছে, বাসায় ঢুকে রওশনকে পায়ে ধরে সালাম করেন কাদের। এ সময় জিএম কাদের বলেন, ‘আপনি আমার মাতৃতুল্য, আমাকে দোয়া করে দিন, ভাইকে হারিয়ে আজ আমি অভিভাবক হারা, ভাই নয়-আমি আসলে আমার পিতাকে হারিয়েছি, এখন আপনিই আমার অভিভাবক, আপনার দিকনির্দেশনা নিয়েই আমি ভাইয়ের রেখে যাওয়া দলকে সামনে এগিয়ে নিতে চাই।’ কাদেরের আবেগঘন কথায় আবেগাপ্লুত হন রওশনও। এ সময় তিনি দেবরের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।
এরপর দেবরকে নিয়ে খাওয়ার টেবিলে যান রওশন। তারা একসাথে দুপুরের খাবার খান। তখন জিএম কাদেরকে রওশন একটু বকাঝকাও করেন। বলেন, ‘তুমি এভাবে কাজ করছো কেন, এভাবে কী দল চালানো যায়, তুমি তো আমার সাথে পরামর্শ করতে পারতে।’ জিএম কাদের তখন মৃদু গলায় বলেন, ‘আপনার সাথে আগে কথা বলা উচিত ছিল।’ পরে জিএম কাদের নিজ থেকেই বলেন, ‘ভাইয়ের অবর্তমানে এখন আমাদের পরিবারকে এক থাকতে হবে, দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে, আমরা এক না থাকলে অন্যরা সুযোগ নেবে।’ রওশনকে তিনি বলেন, ‘আপনি আগেও বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন, বিরোধীদলীয় নেতা আপনি হোন-আমার আপত্তি নেই, আমি বাইরে দলের দায়িত্ব পালন করি।’ তখন রওশন বলেন, ‘এটা তো হতে পারে’।
রওশন-কাদেরের আলোচনার ফাঁকে-ফাঁকে যোগ দেন এরশাদের ছেলে সাদ। মা রওশনের সামনে জিএম কাদেরকে সাদ বলেন, ‘চাচা আমি রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনে দাঁড়াতে চাই’। জিএম কাদের তাকে বলেন, ‘এনিয়ে আমরা পরে সিদ্ধান্ত নেব।’
রওশনের বাসা থেকে বেরিয়ে জিএম কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পার্টির বর্তমান কমূসূচি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আমরা আলাপ করেছি। ভাবি আমাকে আশির্বাদ করেছেন, তিনি আমার মাতৃতুল্য ও আমার অভিভাবক। তার পরামর্শে জাপাকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। জাপায় অনৈক্য ও বিভেদের কোনো স্থান নেই। সবাইকে নিয়েই জাপা গণমানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে এগিয়ে যাবে।’
রওশনের বাসায় বৈঠকের পর বাদ আসর বারিধারা জামে মসজিদে মরহুম এরশাদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় আয়োজিত মিলাদ ও দোয়ায় শরিক হন জিএম কাদের। জাপার সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ও সাদ এরশাদ এতে অংশ নেন।
এদিকে, শনিবার সকালে বনানী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জাপার কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভা শেষে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাপায় কোনও বিভেদ ও বিশৃঙ্খলা নেই। পার্টির ৯৯ ভাগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিটি কর্মসূচি এগিয়ে নিচ্ছেন। যৌথ নেতৃত্বে পার্টিকে আরও সুসংহত ও শক্তিশালী করা হবে।’ এই বৈঠকে রওশনসহ দলের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্যদের অনেকেই যাননি। বৈঠকে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান জাপা চেয়ারম্যান। জাপা মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, প্রেসিডিয়াম সদস্য সালমা ইসলাম, আবুল কাশেম, সাহিদুর রহমান টেপা, এসএম ফয়সল চিশতি, সুনীল শুভ রায়, মেজর (অব.) খালেদ আখতার, শেখ সিরাজুল ইসলাম, সোলায়মান আলম শেঠ, সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি, রেজাউল ইসলাম ভুইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন প্রমুখ সভায় উপস্থিত ছিলেন।