খবর৭১ঃ
মঈনুল হাসান রতন, হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার অন্তত ১৪টি বিদ্যালয়সহ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে মানুষ এখনো পানিবন্ধী রয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) খোজ নিয়ে জানা যায়, চুনারুঘাট উপজেলার আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের হাড়াজোড়া, কালামন্ডল, কালিশিরি, দেওরগাছ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল, গাজীপুর ইউনিয়নের পাহাড়ি ছড়া দিয়ে ভারতীয় পানি ঢুকে দুধপাতিল, বনগাও, কোনাগাও, ছনখলাসহ ৭-৮ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।এদিকে করাঙ্গী নদীর বাঁধের উপর দিয়ে পানি প্রবেশ করে উপজেলার রানীগাও, সাটিয়াজুরী ইউনিয়নের অন্তত ১৫-২০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। রানীগাও ইউনিয়নের শাহপুর, আলাপুর, পারকুলসহ ৭-৮ টি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। সাটিয়াজুরী ইউনিয়নের কাজিরখিল, কৃষ্ণপুর, দৌলতপুর, কুনাউড়া, চিলামী, সিরাজনগর, দারাগাও, টিলাগাও, আটালিয়া, বাসুদেবপুরসহ ১২-১৫ টি গ্রাম বন্যার পানিতে নিম্মজিত রয়েছে। এছাড়াও উপজেলার কয়েকটি বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় ছাত্র-ছাত্রী আসতে পারছে না। অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে সাটিয়াজুরি ইউনিয়নের দারাগাও বাগানের রাস্তা ধসে পড়েছে। শ্রীবাড়ি চা বাগান এলাকায় গাছপালা, বাড়িঘর ধসে পড়েছে। ইউপি মেম্বার সন্তুষ তাতি জানান- শ্রীবাড়ি চা বাগান এলাকায় শতাধিক গাছপালা ৪-৫ টি ঘর ধসে পড়েছে।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন ইকবাল জানান- কয়েকদিনের বৃষ্টিতে উপজেলার বিভিন্ন রাস্তা-ঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে উপজেলা প্রশাসনের লোকজন বন্যা কবলিত এলাকার খোজ খবর রাখছেন নিয়মিত। এদিকে নবীগঞ্জে উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কুশিয়ারা ডাইক মেরামতের জন্য আজও কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। বাঁধের সামনের বিকল্প জায়গায় বাঁধ দিয়ে বন্যার পানি আটকানোর চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। মঙ্গলবার সকালে বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্টের (বিপিডিবি) ইঞ্জিনিয়ার সজল বলেন- পাওয়ার প্লান্টের ভেতরে একটু একটু করে বন্যার পানি প্রবেশ করছে। এতে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ পানিতে নিমজ্জিত হচ্ছে। তবে মূল উৎপাদন কেন্দ্রে পানি উঠার সম্ভাবনা নেই। কারণ মূল উৎপাদন কেন্দ্রটি পাওয়ার প্লান্টের ভূমি থেকে অনেক উপরে। খোজ নিয়ে জানা যায়- উপজেলার ইনাতগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, দ্বিগলবাক হাইস্কুল এন্ড কলেজ, আনোয়ারুল উলুম দাখিল মাদরাসাসহ ১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে বন্যার্থ মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছেন। তারা বিভিন্ন উচু স্থানে অস্থায়ী ক্যাম্প করে পরিবার পরিজন নিয়ে অবস্থান করছেন। এখনো সরকারি কোন ত্রাণ সামগ্রী এলাকায় পৌছেনি। সংসদ সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ মিলাদ ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে কিছু ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ করেছেন। কুশিয়ারা ডাইকের ভাঙ্গন পরিদর্শন করেছেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তৌহিদ বিন হাসানসহ সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।এর আগে সোমবার কুশিয়ারা ডাইক ভেঙে উপজেলার, রাজের বন্ধ, জোয়াল ভাঙ্গা হাওর, বেলি বিল, বড় হাওর, ঘুঙ্গিয়াজুরি হাওরের প্রায় ১০ হাজার একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। প্রতি ঘন্টায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের বনগাও, ইসলামপুর, পারকুল, ঢালার পাড়, পাহাড়পুরসহ ১৫টি গ্রাম এবং দীঘলবাক ইউনিয়নের দীঘলবাক, কসবা, কুমারকাঁদা, ফাদুল্লা, রাধাপুর, দুর্গাপুর, জামারগাঁওসহ ২০টি গ্রাম এবং ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের বিবিয়ানা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। ইনাতগঞ্জ বাজারের পার্শবর্তী উমরপুর, ইনাতগঞ্জের বাজারের ছড়া, পুর্ববাজার কলনী, চন্ডিপুর, বটপারা, বাউরকাপন, মোকামপারা, রাজনগরসহ আশপাশের শত শত গরীব পরিবারের বাড়ি ঘরে পানি প্রবেশ করেছে।আউশকান্দি ইউপির চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান হারুন বলেন, কুশিয়ারা ডাইক ভেঙে যাওয়ার ফলে তার ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। জোয়াল ভাঙ্গা হাওর, বেলী বিলের হাওরে কয়েক হাজার একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। এখনো সরকারী ত্রাণ সামগ্রী এলাকায় পৌছেনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ-বিন হাসান জানান, প্রতি ঘন্টায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা আশংকা করছি কুশিয়ারা ডাইক ভেঙ্গে গেছে তাই এটা মেরামত করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, কুশিয়ারা ডাইক হঠাৎ করে ভেঙে যাওয়ার ফলে কয়েকটি হাওরের কয়েক হাজার একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কাজী সাইফুল ইসলাম জানান- বন্যার কারণে উপজেলার ১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ সাদেক হোসেন জানান- বন্যার কারণে উপজেলার দুই উচ্চ বিদ্যালয় ও একটি দাখিল মাদ্রাসা বন্ধ রাখা হয়েছে। পানি বিদ্যালয় থেকে নেমে গেলে পুনরায় ক্লাস শুরু হবে। হবিগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী এম এল সৈকত বলেন, কুশিয়ারা নদীর পানি বর্তমানে বিপদসীমার ৪৫ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভেঙে যাওয়া কুশিয়ারা ডাইকে মেরামতের জন্য আমাদের লোকজন কাজ করছে।