খবর৭১ঃ
মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর থেকেঃ সৈয়দপুরেএকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণী কক্ষ ও শিক্ষক সংকটের কারণে ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে সেখানে মাত্র দুই শিক্ষকের মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। আর শ্রেণীকক্ষের অভাবে শিক্ষার্থীদের বারান্দায় বসে চলছে পাঠদান। তার উপরে চলতি বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়ের প্রবেশপথ ও খেলার মাঠ কাঁদাপানিতে একাকার হয়ে গেছে। মধ্যাহ্ন বিরতিতে শিক্ষার্থীরা মাঠে না থেকে তারা শ্রেণীকক্ষে অলস বসে সময় কাটাচ্ছে। নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর হাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। স্কুলটি সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের খড়খড়িয়া পাড়ায় অবস্থিত। জানা গেছে, বিগত ১৯৯৩ সালে বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের প্রামানিকপাড়ার সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী মরহুম আলহাজ্ব নুরুল হক প্রামানিকের প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে তার নিজস্ব ৩৩ শতক জমির ওপর টিনশেডের স্কুলটি গড়ে তোলেন। শুরু থেকে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী মানসম্মত পাঠদান করার বিষয়টি দ্রুত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে বাড়তে থাকে ছাত্ছাত্রীর সংখ্যা। এরপর সকলের প্রচেস্টায় গত ২০১৪ সালে স্কুলটি জাতীয়করন করা হয়।
বর্তমানে ওই স্কুলে দুই শিফটে শিশু শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ১৫১জন ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ন করছে। এদের মধ্যে ছাত্র ৭৬ জন এবং ছাত্রী ৭৫ জন। বর্তমানে স্কুলটিতে ১৫১ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে রয়েছে শিশু শ্রেণীতে ৩৮ জন, প্রথম শ্রেণীতে ৩০ জন, দ্বিতীয় শ্রেণীতে ২৭ জন, তৃতীয় শ্রেণীতে ২৬ জন, চতুর্থ শ্রেণীতে ১৭ জন এবং পঞ্চম শ্রেণীতে ১৩ জন। তবে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য বর্তমানে মাত্র ৪ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মরত রয়েছেন। এদের মধ্যে প্রধান শিক্ষিকা শাহানারা রাজিয়া নীলফামারীতে পিটিআই প্রশিক্ষণ গ্রহন করছেন। আর সহকারি শিক্ষিকা নিলুফা জেসমিন বগুড়ায় ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন প্রশিক্ষণে রয়েছে। ফলে বর্তমানে মাত্র দুই জন শিক্ষিকা দিয়ে পাঠদান চলছে বিদ্যালয়টিতে। ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে বিঘ্ন ঘটছে। গতকাল রবিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শিফট চলছে। সহকারি শিক্ষিকা সায়রা বাণু ও সাবিনা বেগম দুইজন মিলে এক সাথে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর পাঠদান করছেন। সহকারি শিক্ষিকা সায়রা বাণুর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এক সাথে দুই শ্রেণীর পাঠদানে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। সময় স্বল্পতার কারণে সকল শিক্ষার্থীর প্রতি নজর দেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে, স্কুলটির প্রতিষ্ঠাকালীন একটি সেমিপাকা টিনশেড ঘরের তিনটি কক্ষের মধ্যে একটি অফিস কক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ।
অপর দুইটি কক্ষে দুইটি শ্রেণীর পাঠদান করা হয়। ফলে প্রথম শিফটে একটি শ্রেণীর পাঠদান করতে হয় বিদ্যালয়ের বারান্দায়। একইভাবে দ্বিতীয় শিফটে বিদ্যালয়ের দুইটি শ্রেণী কক্ষে দুইটি শ্রেণীর পাঠদান করা হলেও একটি শ্রেণীর পাঠদান চলে বারান্দায়। বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের চৌমুহনীবাজার থেকে পাবর্তীপুরের বেনীরহাট যাওয়ার পাকা রাস্তার পাশে নিচু এলাকায় স্কুলটির অবস্থান হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে স্কুলের প্রবেশ পথ ও খেলার মাঠে পানি জমে যায়। ফলে মারাত্মক কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। তখন স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাঁদাপানি মাড়িয়ে শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করতে হয়। আর মাঠে কাঁদা-পানির কারণে টিফিন চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলারও সুযোগ না পেয়ে শ্রেণীকক্ষেই অলস বসে সময় কাটাতে হয় তাদের। এ বিষয়ে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. ফজলুল হক মঞ্জু’র সাথে কথা হলে তিনি জানান, বিদ্যালয়ের একটি পাকা ভবন বরাদ্দ দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অনেক দৌঁড়ঝাঁপ করেছি। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। শুরুতেই অনেক টাকা পয়সা খরচ করে বিদ্যালয়ের সেমিপাকা টিনশেড ঘর নির্মাণ ও শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক টিউবওয়েল বসানোসহ আলাদা টয়লেটও স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া স্কুলের মাঠটি উঁচু করতে বেশ কিছু টাকা পয়সা ব্যয় করেছি। এখনও মাঠ ভরাট করতে অনেক অর্থ লাগবে। তারপরেও চেস্টা অব্যাহত রয়েছে। স্কুলটির বর্তমান অবস্থার বিষয় নিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. শাহজাহান মন্ডলের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, গত জুন মাসে আমি সরেজমিনে বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে গিয়েছি। বিদ্যালয়টি জন্য পাকা ভবন নির্মাণ জরুরী। তাই ওই বিদ্যালয়ের পাকা ভবন নির্মাণের জন্য অধিদপ্তরের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন শিগগিরিই বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের অনুমোদন মিলবে