খবর৭১ঃ তিস্তা ব্যারাজ থেকে তিস্তা নদীর বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটেছে। শুক্রবার বিকাল ৬টা থেকে তিস্তা নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। এতে করে দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
টানা বৃষ্টিতে পানি বাড়তে শুরু করেছে উত্তরবঙ্গের নদীগুলিতে। সেখানকার সেচ দপ্তর জানিয়েছে, তাই তিস্তার অসংরক্ষিত এলাকায় (দেমোহনী থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত) জারি করা হয়েছে হলুদ সংকেত।
এর আগে সকাল থেকে তিস্তার পানি বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপরে ছিল। বিকাল ৬টায় আরও ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পায়। এতে করে তিস্তা অববাহিকায় হলুদ সংকেত জারি করেছে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে উজানের ঢল যে হারে ধেয়ে আসছে এতে যে কোনো সময় লাল সংকেত জারি হতে পারে।
নদীর পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার ১৫টি চর গ্রামের ১০ হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুন নাহার জানান, তিস্তা নদীর বন্যা ভয়াবহ ধারণ করায় নদীর চর গ্রামে বসবাসকৃত পরিবারের সদস্যদের সরকারি নৌকায় তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করা হয়েছে। সব ইউপি চেয়ারম্যান তিস্তার উজান ও ভাটিতে নদীর ভেতরে বসবাস পরিবারগুলো নিরাপদ ও উচু স্থানে নিয়ে আসার জন্য ইউপি চেয়ারম্যানদের বলা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন শুকনো খাবার প্রস্তুত করেছে।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) হাফিজুর রহমান চৌধুরী জানান, তিস্তার বন্যায় ডিমলা উপজেলায় প্রাথমিকভাবে ৫০ মেট্রিকটন চাল, ৫০ হাজার টাকা ও ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আমরা সেদিকে সতর্কাবস্থায় রয়েছি।
তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরণ কেন্দ্র সূত্র তিস্তায় ভয়াবহ বন্যার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, বৃহস্পতিবার তিস্তার পানি দুই দফায় বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৭ ও ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শুক্রবার তিস্তা নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পায়। সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার (৫২ দশমিক ৬০ মিটার) ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। কিন্তু বিকাল ৬টায় তা আরও ১১ সেন্টিমিটার বেড়ে গিয়ে ৪৪ সেন্টিমিটার (৫২.৯৫) দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে।
উজানের ঢল সামাল দিতে খুলে রাখা হয়েছে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট। ফলে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তা অববাহিকার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ি ও জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকার ১৫টি চর ও গ্রামের পরিবারগুলো বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এতে প্রায় ১০ হাজার পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।
তিস্তার হিংস্ররূপ এলাকাবাসীকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছে বলে ওইসব এলাকার ইউপি চেয়ারম্যানদের দাবি। এ ছাড়া তিস্তা বিপদসীমায় চলে যাওয়া নদীর বিভিন্ন স্থানের বাঁধে আঘাত করছে। ফলে বাঁধগুলো হুমকির মুখে পড়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, উজানের ঢল ও বৃষ্টিপাতের কারণে শুক্রবার তিস্তা নদীর পানি সকাল ৬টায় ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যারাজের সবকটি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা তিস্তা অববাহিকায় হলুদ সংকেত জারি করে মানুষজনকে নিরাপদে সরে যেতে বলেছি। উজানের ঢল অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। যে কোনো সময় লাল সংকেত জারি করা হতে পারে।