বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্টি হয়েছে বন্যা। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের ১০ জেলা বন্যা কবলিত হয়েছে। আগামী ২৪ থেকে ৭২ ঘন্টায় আরও অন্তত ৩টি জেলা বন্যা আক্রান্ত হতে পারে।
বৃষ্টির বিদ্যমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বানের পানি আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ ঢাকা ও নারায়নগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত করতে পারে।
সিকিম-আসামে ভারী বৃষ্টির কারণে তিস্তা এবং ব্রহ্মপূত্র-যমুনা নদীতে পানি প্রবাহ বেড়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলসহ নেপাল এবং ভারতের বিহারে ভারী বৃষ্টি অব্যাহত আছে। এই বৃষ্টি চলতে থাকলে গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় পানি প্রবাহ বেড়ে যাবে।
এদিকে আসাম-মেঘালয়ে বৃষ্টি হচ্ছে। ওই এলাকার বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে আসছে মেঘনা অববাহিকার বিভিন্ন নদীতে। চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলেও ভারী বৃষ্টি অব্যাহত আছে। এসব মিলে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল বন্যায় ভেসে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা, বগুড়া, নেত্রকোণা, সিলেট, সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার জেলায় বন্যা পরিস্থির অবনতি হয়েছে। আগামী ২৪ থেকে ৭২ ঘন্টায় জামালপুর, সিরাজগঞ্জ এবং মানিকগঞ্জে বন্যা বিস্তৃত হতে পারে।
বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে একটি মাঝারি ধরনের বন্যা চলছে। ইতিমধ্যে মেঘনা এবং ব্রহ্মপূত্র অববাহিকা সক্রিয় হয়েছে। সাধারণত এই দুই অববাহিকা একসঙ্গে সক্রিয় হলে ২৪-২৫টি জেলা বন্যায় আক্রান্ত হয়। তাই আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বড় বন্যা হয় উল্লিখিত দুই অববাহিকার সঙ্গে গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকা সক্রিয় হলে। যদিও ভারতের বিহারে এবং নেপালে বন্যা হচ্ছে। এর কারণে গঙ্গায় পানি বাড়ছে। পদ্মায়ও প্রবাহ বাড়বে। কিন্তু এই বন্যার পানি বাংলাদেশকে আক্রান্ত কতটা করবে সেটার জন্য আরও দুই-আড়াই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। যদি গঙ্গা-পদ্মায়ও বন্যা হয় তাহলে বাংলাদেশে বড় বন্যা হতে পারে। তবে আমি এখন পর্যন্ত তেমন আশঙ্কা দেখছি না।
পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। উজানের এ ঢল সামাল দিতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার শৌলমারী বানপাড়ায় গ্রাম রক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
এদিকে নীলফামারী জেলার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলা ও উপজেলার প্রায় ১৫টি চরের গ্রাম হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। এতে প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রভাষক আব্দুল লতিফ খান জানান, গত দুই দিনের চেয়ে শুক্রবার উজানের ঢলের গতি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এলাকার নিচু স্থানে নদীর পানি প্রবেশ করেছে। চরের গ্রামগুলোর ঘরবাড়িতেও পানি প্রবেশ করেছে। ইতোমধ্যে তার এলাকার ১ হাজার ১৪০ পরিবারের বসতবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। রাস্তার ওপর দিয়ে নদীর পানি প্রবাহিত হওয়ায় এলাকাবাসী বালুর বস্তা দিয়ে পানি ঠেকানোর চেষ্টা করছে।
সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাছাড়া সরকারি হিসাবে বন্যায় সুনামগঞ্জের প্রায় ১৩ হাজার ১০০ পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।
কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ী ঢলের কারণে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় পাঁচটি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের বন্যা পরিস্থিত ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
পূর্বাভাসে বিএমডি বলেছে, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, ঢাকা, ফরিদপুর,মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরসমূহকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।