২৩ বছর পর নতুন চ্যাম্পিয়ন পাচ্ছে ক্রিকেট বিশ্ব

0
856
২৩ বছর পর নতুন চ্যাম্পিয়ন পাচ্ছে ক্রিকেট বিশ্ব

খবর৭১ঃ

অস্ট্রেলিয়াকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে চলে গেছে ইংল্যান্ড। ২২৪ রানের লক্ষ্যে ১০৭ বল বাকি ছিল ইংল্যান্ডের। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে এই প্রথম হারল অস্ট্রেলিয়া।

সেই কবে ১৯৯২ সালে সর্বশেষ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছিল তারা, এরপর আর ওমুখো হয়নি তারা। আজ অস্ট্রেলিয়াকে দুমড়েমুচড়ে উইকেটে হারিয়ে ইংল্যান্ড সত্যিকারের ফেবারিটের মতো ফাইনালে উঠে এল। ঠিক ২৭ বছর পর।

ওদিকে নিরপেক্ষ দর্শকের কাছে অপেক্ষাটা ২৩ বছরের। ১৯৯৬ বিশ্বকাপেই সর্বশেষ নতুন কোনো চ্যাম্পিয়ন পেয়েছিল ক্রিকেট। সবাইকে চমকে দিয়ে শ্রীলঙ্কা শিরোপা নিয়ে উৎসব করেছিল। এর পর আর নতুন কোনো চ্যাম্পিয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাই জাগেনি বহুদিন। প্রতিবারই যে ফাইনাল খেলছিল অন্তত একবার হলেও বিশ্বকাপ জেতা দলগুলো। নতুন কোনো দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ এসেছিল ২০১৫ বিশ্বকাপে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডকে সে ফাইনালে হেসে খেলে হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।

বৃহস্পতিবার ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে প্রথমে ব্যাট করে ২২৩ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া। টার্গেট তাড়া করতে নেমে ১০৭ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটের বিশাল জয়ে বিশ্বকাপের ১২তম আসরের ফাইনালে উঠে যায় ইংল্যান্ড।

আগামী রোববার লন্ডনে বিশ্বকাপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২২৪ রানের মামুলি স্কোর তাড়া করতে নেমে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন ইংলিশ ওপেনার জেসন রয়। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অসিদের বিপক্ষে রীতিমতো ব্যাটিং তাণ্ডব চালান ইংলিশ এ ওপেনার।

উদ্বোধনী জুটিতে জনি বেয়ারস্টোকে সঙ্গে নিয়ে ১৭.২ ওভারে ১২৪ রানের পার্টনারশিপ গড়েন রয়। ৪৩ বলে ৩৪ রান করে ফেরেন জনি বেয়ারস্টো।

৫০ বলে ফিফটি করা রয় একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন। কিন্তু প্যাট কামিন্সের বলে উইকেটকিপার অ্যালেক্স কেরির জোড়ালো আবেদনে সাড়া দিয়ে রয়কে আউট করে দিয়ে মাঠ ছাড়া করেন কুমার ধর্মসেনা ও মারাইস ইরাসমাস।

আম্পয়ারের আউটের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি রয়। তিনি মাঠেই প্রতিবাদ জানান। বারবার দুইহাত প্রসারিত করে বলছিলেন, এটা কটবিহাইন্ড নয়! বরং ওয়াইড। আক্ষেপ নিয়ে জেসন রয় যখন মাঠের সীমানা রশির কাছাকাছি পৌঁছান ঠিক তখন রিভিউতে স্পষ্টই দেখা যায়, বলটি ওয়াইডই ছিল।

আম্পায়ারদের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে তার ক্যারিয়ারের একটি সম্ভাবনাময় সেঞ্চুরির অপমৃত্যু হয়! মাত্র ৬৫ বলে নয়টি চার ও ৫টি দৃষ্টিনন্দন ছক্কায় ৮৫ রান করে ফেরেন জেসন রয়।

এরপর তৃতীয় উইকেটে ইয়ন মরগানকে সঙ্গে নিয়ে ৭৯ রানের অনবদ্য জুটি গড়ে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন জো রুট। দলের জয়ে ৪৬ বলে ৪৯ ও ৩৯ বলে ৪৫ রান করে অপরাজিত থাকেন রুট ও মারগান।

বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমেই ক্রিস ওকস এবং জফরা আর্চারের গতির মুখে পড়ে যায় অসি ব্যাটসম্যানরা।

জিতলে ফাইনালে, হারলে বিদায়। এমন কঠিন সমীকরণের ম্যাচে স্কোর বোর্ডে ১৪ রান জমা করতেই সাজঘরে ফেরেন অসি তিন সেরা ব্যাটসম্যান অ্যারন ফিঞ্চ, ডেভিড ওয়ার্নার ও পিটার হ্যান্ডসকম্ব।

দলের এমন চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ের দিনে উইকেটে নেমেই জফরা আর্চারের বাউন্সারের শিকার হন অ্যালেক্স কেরি। ৭.৬ ওভারে দলীয় ১৪/৩ এবং ব্যক্তিগত ৪ রানে জফরা আর্চারের বাউন্সার সরাসরি অ্যালেক্স কেরির হেলমেটে আঘাত হানে। সঙ্গে সঙ্গে তার থুতনি ফেটে রক্ত পড়া শুরু হয়। সাময়িম শ্রুশ্রষা নিয়ে অনবদ্য ব্যাটিং চালিয়ে যান কেরি।

চতুর্থ উইকেটে স্টিভ স্মিথের সঙ্গে ১০৩ রানের জুটি গড়েন কেরি। অনবদ্য ব্যাটিং করে ফিফটির পথেই ছিলেন তিনি। আদিল রশিদের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ক্যাচ তুলে দেন। তার আগে ৭০ বলে চারটি চারের সাহায্যে ৪৬ রান করেন কেরি।

এরপর অস্ট্রেলিয়ার আবারও ব্যাটিং বিপর্যয়। ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলে ব্যতিক্রম ছিলেন স্মিথ। দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ের দিনে বাড়তি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এ অধিনায়ক। সেঞ্চুরির পথে থাকা স্মিথ ইনিংস শেষ হওয়ার ১৭ বল আগে দুর্ভাগ্যবশত রান আউট হয়ে ফেরেন।

অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরার আগে ১১৯ বলে ছয়টি চারের সাহায্যে ৮৫ রান করেন স্মিথ। তার বিদায়ের পর মাত্র ৬ রানের ব্যবধানে মিচেল স্টার্ক ও জেসন বিহানড্রপের উইকেট হারিয়ে ৪৯ ওভারে ২২৩ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া।

সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ

অস্ট্রেলিয়া: ৪৯ ওভারে ২২৩/১০ (স্মিথ ৮৫, কেরি ৪৬, মিচেল স্টার্ক ২৯, ম্যাক্সওয়েল ২২, ওয়ার্নার ৯, কামিন্স ৬, লায়ন ৫*, হ্যান্ডসকম্ব ৪, বিহানড্রপ ১, ফিঞ্চ ০, স্টইনিস ০; ক্রিস ওকস ৩/২০, আদিল রশিদ ৩/৫৩)।

ইংল্যান্ড: ৩২.১ ওভারে ২২৬/২ (জেসন রয় ৮৫, রুট ৪৯*, মরগান ৪৫*, জনি বেয়ারস্টো ৩৪)।

ফলঃ ইংল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here