খবর৭১ঃ
যানজটে অসহনীয় হয়ে উঠছে রাজধানীর জনজীবন। এসব বিবেচনায় রাজধানীকে যানজটমুক্ত করতে বৃহত্তর পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। ঢাকার চারটি রুটে নির্মাণ করা হবে সাবওয়ে (পাতাল রেল)। এ উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হলে মাটির নিচ দিয়ে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারবে।
ফলে ভূমির ওপরে জনসংখ্যার চাপ কমবে। ফাঁকা জায়গার পরিমাণ বাড়বে। এতে রাজধানীর পরিবেশ আরও উন্নত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এজন্য সেতু কর্তৃপক্ষ ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর কনস্ট্রাকশন অব সাবওয়ে ইন ঢাকা সিটি’ নামের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
এটি ২০২০ সালে শেষ হবে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে সাবওয়ে নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের একটি প্রস্তাব দেয়া হয় পরিকল্পনা কমিশনে। এতে ভেটো দিয়েছে সেতু বিভাগ। ফলে আপাতত এ প্রস্তাবটি বাতিল করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত চারটি সাবওয়ে রুট হচ্ছে- রুট-১ : টঙ্গী-বিমানবন্দর-কাকলী-মহাখালী-মগবাজার-পল্টন-শাপলাচত্বর-সায়েদাবাদ-নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড পর্যন্ত। রুট-২ : আমিনবাজার-গাবতলী-আসাদগেট-নিউমার্কেট-টিএসসি-ইত্তেফাক ও সায়েদাবাদ পর্যন্ত। রুট-৩ : গাবতলী-মিরপুর-১-মিরপুর-১০-কাকলী-গুলশান-২-নতুনবাজার-রামপুরা টিভি ভবন-খিলগাঁও-শাপলা চত্বর-জগন্নাথ হল ও কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত এবং রুট-৪ : রামপুরা টিভি ভবন-নিকেতন-তেজগাঁও-সোনারগাঁও-পান্থপথ-ধানমণ্ডি-২৭, রায়েরবাজার-জিগাতলা-আজিমপুর-লালবাগ ও সদরঘাট পর্যন্ত।
সূত্র জানায়, ঢাকা শহরে বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রায় ৭ হাজার ৯৫০ জন। মোট সড়কের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ২৮৬ কিলোমিটার। সড়কের ঘনত্ব ৯ দশমিক ০১ শতাংশ। অথচ আদর্শমান হচ্ছে ২০-২৫ শতাংশ সড়কের ঘনত্ব। ফাঁকা জায়গা রয়েছে ৩ দশমিক ০৯ শতাংশ, কিন্তু থাকার প্রয়োজন ১৫-২০ শতাংশ। সড়কের বর্তমান সক্ষমতা ৩ লাখ হলেও বিআরটিএর নিবন্ধিত গাড়ি প্রায় ৯ লাখ। ঢাকা শহরে যানজটের কারণে প্রতি বছর প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য সেতু বিভাগ ঢাকা শহরে সাবওয়ে (আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো) নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এক্ষেত্রে বলা হয়েছে, সড়কপথে যেখানে ১০০ বাসে ঘণ্টায় ১০ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারে, সেখানে সাবওয়েতে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রীর চলাচল সম্ভব। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ২৪২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে (সরকারের নিজস্ব অর্থেই) সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে।
এই সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে প্রস্তাবিত সাবওয়ে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের পরিমাণ, সম্ভাব্য উৎস, প্রয়োজনীয় এয়ারফ্লোর ব্যবস্থা, সাবওয়ের জন্য অপসারিত মাটি কোথায় এবং কিভাবে রাখা হবে বা কিভাবে ব্যবহার করা হবে এবং সাবওয়ের অবস্থান, এলাইনমেন্ট ও দৈর্ঘ্য নির্ধারণ, প্রকল্পের বিভিন্ন উপ-অঙ্গে নির্মাণ পদ্ধতি, জিওটেকনিক্যাল ইনভেস্টিগেশন, সিসমিক স্টাডি ও সার্ভে, ট্রাফিক সার্ভে করা হবে।
এছাড়া পরিবেশ ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত সমীক্ষা পরিচালনা ও পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রাথমিক ডিজাইন প্রণয়ন ও এর ভিত্তিতে প্রাক্কলন প্রস্তুত, ভূমি অধিগ্রহণ পরিকল্পনা প্রণয়ন, অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ এবং ক্রয়, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। অন্যদিকে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে ‘ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে সাবওয়ে নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা’ নামের একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয় পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
এ প্রস্তাবের ওপর রোববার প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সেতু বিভাগের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। এ সময় পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তুলে বলা হয়, ঢাকার চারটি রুটে সাবওয়ে নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ চলছে। এসব রুটে টঙ্গী-বিমানবন্দর রয়েছে।