রাকিব হাসান পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ
পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র অভ্যন্তরে বিরাজ করছে কর্মমুখর পরিবেশ। চায়না শ্রমিকরা কাজ করছে। তাদের পদচারনায় বিদ্যুত প্লান্ট অভ্যন্তর মুখরিত হয়ে উঠেছে। কর্মচঞ্চল পরিবেশ বিরাজ করছে। বাঙালি শ্রমিকদের ১৫দিনের ছুটি দেয়া হয়েছে। তবে তাদের ছয় হাজার শ্রমিককে সকল বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই বিসিপিসিএল ফের বাঙালী শ্রমিকদের কাজে নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করবে। বাঙালী শ্রমিকরা কাজ না করলেও প্লান্টের আবাসিক এলাকার অবকাঠামো নির্মাণে শতাধিক শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। দ্রুত পায়রা বিদ্যুত প্লান্ট এলাকা পুরোদমে সচল হয়ে উঠছে। বুধবার দুপুরে পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র অভ্যন্তরে মিডিয়া সেন্টারে বিসিপিসিএল এর প্রকল্প পরিচালক শাহ আব্দুল মাওলা গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। তিনি ১৮ জুন মঙ্গলবার বিকেলে পাওয়ার ব্লকের বয়লারে কর্মরতকালে সেফটি বেল্ট খুলে নিচে পড়ে সাবিন্দ্র দাস নামের এক বাঙালী শ্রমিক নিহতের ঘটনায় সৃষ্ট গুজবকে কেন্দ্র করে অনভিপ্রেত ঘটনার প্রেক্ষিতে বর্তমান সময় পর্যন্ত পাওয়ার প্লান্টের কর্মকান্ড নিয়ে মতবিনিময় করেন। তিনি জানান, বাঙালী ও চায়নীজ শ্রমিকদের মধ্যে নিজস্ব কালচার নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে। চায়নীজরা দক্ষ, আর বাঙালীরা অদক্ষ। বাঙালীদের দক্ষতার উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আহত চায়নীজ শ্রমিকদের ঢাকায় উন্নত চিকিৎসা দেয়ার পরে তারা এখন সুস্থ রয়েছেন। আশঙ্কামুক্ত তারা। প্লান্ট অভ্যন্তরে অফিসের কম্পিউটার, তথ্য ভান্ডার, হাইড্রোলিক মেশিনের কন্ট্রোল সিস্টেমের যে ক্ষতি হয়েছে তা ঠিক করতে ১০/১৫ সময় লাগবে। এরপরেই পুরোদমে কাজ শুরুর কথাও নিশ্চিত করেন পরিচালক শাহ আব্দুল মাওলা। পায়রা তাপ বিদ্যুত কের্ন্দের প্রথম ইউনিট এ বছরের ডিসেম্বরে চালু করতে কোন সমস্যা নেই। বর্তমানে ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ যথাসময় শেষ হব বলেও নিশ্চিত করেন তিনি। ১৮ জুনে শ্রমিকদের মধ্যে অনভিপ্রেত ঘটনা মূলত ভাষাগত কালচার গ্যাপ থেকে হয়েছে বলেও মনে করছেন এ কর্মকর্তা। বর্তমানে বিদ্যুত প্লান্ট এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। পুলিশ, বিজিবি ও এপিপিএন রয়েছে অন্তত ৭০০ জন। দোভাষীসহ একটি মধ্যসত্ত্বভোগী চক্র পাওয়ার প্লান্টের অভ্যন্তরের অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য জড়িত কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে শাহ আব্দুল মাওলা বলেন, বিষয়টি আমরা নিশ্চিত নয়। তবে পুলিশসহ একাধিক সংস্থা তদন্ত করছে। গঠিত তদন্ত কমিটি শীঘ্রই প্রতিবেদন দিলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি বাংলাদেশের মানুষের জন্য করা হচ্ছে। মানুষকে কষ্ট দিয়ে নয়-উল্লেখ করে শাহ মাওলা আরও জানান, শ্রমিকদের ব্যাসিক ভাষা শিক্ষার জায়গাটি আরও সমৃদ্ধ করতে হবে। তাইলে দুই দেশের শ্রমিকদের মধ্যে সম্প্রীতি আরও বাড়বে। শ্রমিকদের কন্ডিশন আরও ভাল হবে। এসময় বিসিপিসিএল এর নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) রেজওয়ান ইকবাল খান, নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) জোবায়ের আহম্মেদ, নির্বাহী প্রকৌশলী (তড়িৎ) মো. তারিক নুর, নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) ওয়াং শিয়াং শি, ম্যানেজার (ফ্যাসিলিটি) মোঃ শহীদ উল্যাহ ভূঁইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বুধবার দুপুরে পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র অভ্যন্তরে দেখা গেছে, শত শত চায়নীজ শ্রমিক কাজে ব্যস্ত রয়েছে। আবাসিক ভবনসহ স্থাপনা নির্মানের কাজ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এনডিইসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের শতাধিক বাঙালী শ্রমিক। ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। পথে পথে পুলিশি চেক পোস্ট বসানো হয়েছে। ক্রমশ আগের মতো প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসছে। গত ১৮ জুন রাতের দ্বিতীয় দফা প্লান্ট অভ্যন্তরে সংগঠিত হামলা ভাংচুরের ঘটনায় দায়ের করা দু’টি মামলায় অজ্ঞাত ১২ শ’ আসামি করা হয়েছে। তবে পুলিশ ১৬ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করলে আদালত জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাপাড়া থানার এসআই শওকত জাহান জানান, ধানখালীর বিভিন্ন বাড়ি এবং কেরানিগঞ্জ থেকে ল্যাপটপসহ বিভিন্ন উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে। এবং গ্রেফতারকৃত ১৬ জনকে জিজ্ঞাসবাদের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। এর মধ্যে ধানখালীর সুজনসহ গ্রেফতার হওয়া চার জনের রিমান্ড আবেদনের শুনানির জন্য আদালত পহেলা জুলাই তারিখ ধার্য রেখেছেন। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধানখালীতে ‘পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র’ নির্মাণের জন্য ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড (বিসিপিসিএল) নওপাজেকো বাংলাদেশ এবং সিমসি চায়নার যৌথ অংশীদারিত্বের কোম্পানি বিদ্যুত প্লান্টটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে। এজন্য ১০০২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত ১৩৫ পরিবারকে ১৬ একর জমির ওপরে স্বপ্নের ঠিকানা পল্লী গড়ে তোলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে এসব পরিবারকে ঘরের চাবি হস্তান্তর করেছেন। কয়লা ভিত্তিক জ¦ালানি দিয়ে এ পকল্পটি চালু করা হবে। ইন্দোনোশিয়া অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা আমদানি করা হবে। সংশ্লিষ্ট সুত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, এ প্রকল্পের সমস্ত সিভিল কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। ইউনিট ১ এবং ইউনিট-২ এর টারবাইন- জেনারেটর বসানো সম্পন্ন হয়েছে। বয়লার ইউনিট-১ এর হাইড্রোটেস্ট সম্পন্ন এবং ইন্সুলাশানের কাজও প্রায় শেষের দিকে। বয়লার ইউনিট-২ এর ইরেকশানের কাজ চলমান রয়েছে। ইউনিট ১ এর ইলেক্ট্রোস্টাটিক প্রেসিপিটেটরের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। ইউনিট ২ এর ইলেক্ট্রোস্টাটিক প্রেসিপিটেটরের কাজ চিমনির সিভিল কাজ চলমান রয়েছে। জেটির সিভিল কাজ সম্পন্ন, ওয়াটার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কোল ডুম, কুলিং টাওয়ার এবং পানি পরিশোধন প্ল্যান্টের কাজ চলমান রয়েছে। কনভেয়ার বেল্টের কাজ চলমান রয়েছে। প্ল্যান্টের বিভিন্ন মর্টারের প্রি-কমিশনের কাজ চলমান রয়েছে। প্রায় নয় হাজার শ্রমিক এ কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে।
যার মধ্যে তিন হাজার চায়নীজ শ্রমিক রয়েছে। বর্তমানে পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্ট এলাকায় নিরিবিলি পরিবেশ বিরাজ করছে। শ্রমিকরা নির্বিঘেœ কাজে মগ্ন রয়েছেন। কলাপাড়া থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম জানান, পাওয়ার প্ল্যান্ট এলাকায় তাঁদের সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে। এছাড়া অতি সম্প্রতি অনভিপ্রেত ঘটনার সঙ্গে কেউ জড়িত থাকে তাকে শণাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ ১৮ জুনের অনভিপ্রেত ঘটনার সঙ্গে ম্যানপাওয়ার কোম্পানির কতিপয় লোক এবং কয়েকজন দোভাষী জড়িত রয়েছে। যারা এর ইন্ধনদাতা বলেও সাধারণ মানুষের অভিযোগ।