সন্তানের স্কুলের সমস্যা ও তার প্রতিকার

0
460

খবর ৭১ঃ

আপনার আদরের সন্তান কি আজকাল প্রায় রোজই স্কুলে গণ্ডগোল বাঁধিয়ে বসছে? যখন তখন কি তার নামে নালিশ আসছে? তাহলে ওকে ডিসিপ্লিন এবং সহবত শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। জেনে নিন বাচ্চাকে সহবত শেখানোর কয়েকটি টিপস।

যখন স্কুলে ভর্তি তখন থেকেই ওর জীবনের একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা। বাড়ির চেনা গণ্ডীর বাইরে সম্পূর্ণ অচেনা মানুষদের সঙ্গে সময় কাটানো, পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলো, ছবি আঁকা, প্রার্থনা করা— এই সবকিছুর মধ্যে দিয়েই শিশুর সামাজিকভাবে মেলামেশার প্রথম পাঠ শুরু হয়। তাই স্কুলজীবন বেড়ে ওঠার একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়। কিন্তু স্কুলের নিয়মকানুন, পরিবেশ, টিচার এমনকী সমবয়সি বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ঠিক মানিয়ে নিতে পারে না অনেক শিশুই। ফলে দেখা দেয় অস্বাভাবিক ব্যবহার। কেউ কেউ স্কুলে প্রচণ্ড দুষ্টুমি করে, অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে মারধোর করে। স্কুল থেকে নিত্যদিন নালিশ যেন বাধা। কোনও কোনও বাচ্চা আবার একটু ইনট্রোভার্ট। এই ধরনের বাচ্চারা অনেক সময় স্কুলে যেতেই ভয় পায় কিংবা স্কুলে ‘বুলি’র শিকার হয়। এই ধরনের সমস্যা কিন্তু পরবর্তী জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই স্কুলের সমস্যাকে অবহেলা করবেন না বা সামান্য ঘটনা ভেবে উড়িয়ে দেবেন না। আপনার কাছে যা নিতান্তই সামান্য সন্তানের কাছে হয়তো সেটাই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চাকে স্কুলের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে স্কুলের ভূমিকা তো থাকবেই, তবে বাবা-মায়ের ভূমিকাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

  • স্কুল থেকে সন্তানের নামে কমপ্লেন এলে বাচ্চাকে মারধোর বা বকাঝকা করবেন না। আগে জানার চেষ্টা করুন ঘটনাটা ঠিক কী ঘটেছে। ছেলেমানুষ হলেও বাচ্চাদের ভাললাগা, ইচ্ছে-অনিচ্ছে, রাগ, বিরক্তির বোধ যথেষ্ট প্রখর। জোর করে সন্তানের উপর নিয়ম জারি করলে হিতে বিপরীত হবে। তাই কিছু বলার আগে ওর কথাটা মন দিয়ে শুনুন। যদি দেখেন সত্যিই আপনার সন্তানের দোষ আছে তাহলে ওর ভুলটা ওকে সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দিন। পাশাপাশি ওর এই ধরনের ব্যবহারে যে আপনারা কষ্ট পান তা বোঝানোর চেষ্টা করুন। সন্তান একটু বড় হওয়ার পর স্কুলের ছোটখাটো সমস্যায় ওকেই সমাধান খুঁজতে বলুন। এতে ও সাবলম্বী হয়ে উঠবে। আপনি বন্ধুর মতো পাশে থাকুন। পরিবারের সাপোর্ট পেলে অনেক সমস্যাই সহজে কাটিয়ে ওঠা যায়।

  • ছোট থেকেই সন্তানের মধ্যে শেয়ার করে নেওয়ার মানসিকতা গড়ে তুলুন। আজকাল বেশিরভাগ বাড়িতেই বাচ্চারা একমাত্র সন্তান। ফলে ভাইবোনদের সঙ্গে খেলনা বা খাবারদাবার ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে বাড়িতে যখন অন্য কোনও বাচ্চা আসবে, খেয়াল রাখুন আপনার সন্তান যেন তার সঙ্গে নিজের খেলনা ভাগ করে নেয়। স্কুলে ভাল কোনও খাবার টিফিন দিলে একটু বেশি করে দিয়ে দিন। বলুন এটা ওর বন্ধুদের জন্য। ছোট থেকে শিশুদের মধ্যে এই ধরনের মূল্যবোধ গড়ে তুলতে পারলে দেখবেন অকারণ দুষ্টুমি করা, বন্ধুদের সঙ্গে মারধোর করা ইত্যাদির প্রবণতা অনেকটাই কমে আসবে।
  • আমাদের জীবনের অনেকটা জায়গা জুড়ে থাকে। বাচ্চা যাতে ছোট থেকেই সকলের সঙ্গে মিশতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখুন। সন্তানের বন্ধুর বাবা মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। ছোটখাটো গেট টুগেদারে বাচ্চাকে নিয়ে যান। এতে ওর অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা করা অনেক সহজ হবে।
  • স্কুলে কোনও সমস্যা হলে সন্তানকে কাছে ডেকে নিয়ে কথা বলুন। একটু বড় হয়ে গেলে বাচ্চারা সাধারণত সব কথা শেয়ার করতে চায় না। এই মানসিক দূরত্ব ঘোচানোর দায়িত্ব কিন্তু আপনারই। সন্তান টিনএজার হলে তাকে জামাকাপড়, পড়াশোনার সময়, বন্ধু বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিন। আপনি ওর উপর বিশ্বাস রাখলে, ও আপনার উপর নির্ভর করে মনের কথা জানাবে।
  • স্কুলের টিচারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। পড়াশোনার বাইরেরও সন্তানের স্বভাব, বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা এইসব দিকগুলো সম্পর্কেও প্রশ্ন করুন। সম্তান যদি স্কুলে যেতে না চায়, কান্নাকাটি করে বা ভয় পায় তাহলে নিজে স্কুলে গিয়ে টিচারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বোঝার চেষ্টা করুন কী সমস্যা হচ্ছে।
  • ও সত্যি কথা না বললে আপনি খুব কষ্ট পাবেন। এভাবে ধীরে ধীরে ওর স্বভাবে পরিবর্তন আসবে।, তখন জোর করে মেরেধরে ওকে দিয়ে সত্যি কথা বলাবার চেষ্টা করবেন না। এতে ওর আরও জেদ চেপে যাবে। বরং সেই সময় বাচ্চার সঙ্গে এই নিয়ে কোনও কথাই বলবেন না। ব্যাপারটা থিতিয়ে গেলে ওকে কাছে ডাকুন। কী ঘটেছিল জানতে চান। মেজাজ না হারিয়ে ওকে বলুন যে, দুষ্টুমি করার পর স্কুলে বা বাড়িতে শাস্তি পাওয়ার ভয়ে অনেক সময় বাচ্চারা মিথ্যে কথা বলে। যখনই এ রকম কোনও ঘটনা ঘটবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here