প্রকৃতির স্নিগ্ধতা নিয়ে হাজির বর্ষা

0
975

খবর ৭১ঃ আজ হঠাৎ করে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি না নামলে, ডায়রিটা এতদিন পর আলমারির তাক থেকে নেমে আসত কিনা জানি না। অনেকদিন সে দরজা বন্ধই ছিল, আজ বৃষ্টি না হলে কি হত বলতে পারব না! কিন্তু এটুকু জানি, বৃষ্টির সঙ্গে সব অভিমান কোথায় যেন ধুয়ে মুছে গেল। এদিকে বাংলা বর্ষপঞ্জিকা জানিয়ে দিল, আজ পয়লা আষাঢ়। আজ থেকে শুরু বর্ষাকাল। আবহমান বাংলার চিরায়ত বর্ষার রূপ-রস আর সৌন্দর্য ও প্রকৃতির বিচারে তাপবিদগ্ধ তৃষিত ধরা নববর্ষার বারিধারায় সিক্ত হওয়ার দিন এল। বাঙালির অতি প্রিয় এই ঋতু রাণীর আগমনে প্রকৃতি তার রূপ ও বর্ণ বদলে ফেলে।

বর্ষা মৌসুম ছাড়া বাঙালি জীবন অকল্পনীয়। বাঙালির রোমান্টিকতায় বৃষ্টি আর বিকেল – দুটোই কোনোদিন ফুরবে বলে তো মনে হয় না। বর্ষার দিনে টিনের চালে ঝাপুর ঝুপুর, গাছের ডালে টাপুর টুপুর, পুকুর জলে রিনিঝিনি বৃষ্টির ছন্দে উদাস হয় মন। বৃষ্টি ঝরে হাটে-মাঠে-নদী ও পাহাড়ে। প্রাণ ফিরে পায় প্রকৃতি। হেসে ওঠে সবুজরঙা গাছপালা, ডেকে ওঠে কোলাব্যাঙ, পুকুর জলে টুপ টুপ ডুব দিয়ে আনন্দে খেলা করে হাঁসের ছানা।

টইটম্বুর পানিতে ঢেউ ওঠে ছলাৎ ছলাৎ। চারিদিকে থৈ থৈ পানি। যেন নতুন সমুদ্র জেগেছে গ্রামজুড়ে। দুষ্টু ছেলেরা কলাগাছ কেটে ভেলা বানায়। কলার ভেলায় চড়ে আনন্দে মেতে ওঠে দুরন্ত কিশোরের দল। ঝাঁপ দেয় পানিতে, ডুব সাঁতারে হার মানায় পানকৌড়িকেও। কেউ কেউ গাছে চড়ে লাফ দেয় দীঘির পানিতে। বড়দের শাসানি পেয়ে বাড়ি ফেরে অবশেষে। ঘরের দাওয়ায় বসে বৃষ্টির ঝরে পড়া দেখতে বেশ ভালোই লাগে। এ সময় দাদিরা গল্পের ঝুলি খোলেন। ছোটদের জড়ো করে রূপকথার রাজ্য, দৈত্য-দানব-ডাইনী বুড়ি আর রাক্ষসের গল্প শোনান কেউ কেউ।

তবে বর্ষা এলে নগরজীবনে ভোগান্তিও বেড়ে যায়। জলাবদ্ধতা একটি ভয়াবহ দুর্যোগ হওয়ায় এজন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি। কার্যকর উদ্যোগ ও যথাযথ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে ঢাকা শহর হতে পারে পৃথিবীর অন্যতম সৌন্দর্যমণ্ডিত শহর। আমরা চাই বর্ষা যেন নগরজীবনেও কাব্যের আমেজ আনে। কদম ফুলের হাসি-ঘ্রাণে কিছুটা সময়ের জন্য হলেও যেন জীবনের দুঃখ-যন্ত্রণা ভুলে থাকতে পারি। অন্যদিকে দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে রয়েছে বর্ষাকে ঘিরে নানা আয়োজন। কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায় বর্ষাকে বরণ করে ভিন্ন মাত্রায়। প্রতি বছর তারা কক্সবাজর সমুদ্র সৈকতে মাসব্যাপী বর্ষাবরণ উৎসবের আয়োজন করে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকেরা এ বর্ষাবরণ উৎসবে যোগ দেয়।

আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, এবার আষাঢ়ের শুরু থেকেই দেখা মিলবে বৃষ্টির দেখা মিলবে। আকাশের ভাষাও তাই। তবে মনে রাখবেন, কদম হচ্ছে বর্ষার দূত! এবছর বর্ষার আগমনের আগেই গাছে গাছে স্বর্ণগোলক কদম ফুটেছে প্রকৃতির নিয়মে। বর্ষা এবং কদম ফুলের প্রসঙ্গ এলেই যেন এগুলোর সঙ্গে একাকার হয়ে মিশে থাকে রবীন্দ্রনাথ! তিনি লিখেছেন- ‘বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছো দান, আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান, মেঘের ছায়ায় অন্ধকারে রেখেছি ঢেকে তারে, এই-যে আমার সুরের ক্ষেতের প্রথম সোনার ধান।’

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here