আপনার সন্তান কি পড়াশোনায় ইদানীং মনোযোগ হারিয়ে ফেলছে? তাহলেই তো মুশকিল! বাচ্চার মনোযোগ বাড়িয়ে তোলার সহজ কিছু টিপস।
ছোটদের মন খুবই চঞ্চল। খুব বেশিক্ষণ কোনও একটা বিষয়ে ওরা মন দিয়ে করতে পারেন না। তা সে পড়াশোনা হোক বা গানবাজনা কিংবা ছবি আঁকা। আসলে ছোটরা বড়দের চেয়ে অনেক বেশি কৌতূহলী। সবকিছু ওরা জানতে চায়, বুঝতে চায়। তাছাড়া ছোটদের এনার্জিও অনেক বেশি। তাই চুপ করে বেশিক্ষণ বসতে হলেই ওরা অস্থির হয়ে ওঠে। অথচ কোনও কিছু শেখার জন্য মন স্থির করে মনোঃসংযোগ করা খুবই জরুরি। ঠিকমতো মন না দিলে কোনও কিছুই ঠিকভাবে শেখা হয়ে ওঠে না। ছোটবেলাতেই আমাদের শেখার মূল ভিতটা তৈরি হয়। তাই তা শক্তপোক্ত, মজবুত করে তুলতে চান সব বাবা-মায়েরাই। কিন্তু বাড়ির খুদে দস্যিটাকে ধরেবেঁধে বসানোটাই বেশ কঠিন কাজ। যদি বা বসল, পাঁচ মিনিট অন্তর অন্তর নানা অজুহাতে উঠে পড়া লেগেই থাকে! ফলে শুরু হয় চিৎকার, বকাঝাকা, কান্নাকাটি। এবং ওখানেই পড়াশোনার ইতি। সব বাড়িতে দৈনিক রুটিনটা মোটামুটি এরকমই। এতে সমস্যার সমাধান তো হয়ই না, উলটে বাচ্চা কোনও কিছু শেখার প্রতি আগ্রহটাই হারিয়ে ফেলে। এক্ষেত্রে বাবা মায়ের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই বাচ্চার মনোঃসংযোগ বাড়াতে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখুন।
১. ছোটবেলা থেকেই সন্তানকে সময়ের কাজ সময়ে করার উপর গুরুত্ব দিন। সম্ভব হলে বাচ্চা জন্য সময় ধরে সারাদিনের একটা রুটিন করে দিন। খেয়াল রাখবেন পড়াশোনা এবং খেলাধুলোর বা অন্যান্য রিক্রিয়েশনের মধ্যে যেন একটা ব্যালেন্স থাকে। তাই বলে ওদের খুব বেশি নিয়মের বেড়াজালে বেঁধে ফেলবেন না। একদিন একটু বেশি টিভি দেখলে ক্ষতি নেই। তবে খেয়াল রাখুন ওর কাজটা যেন সময়ে শেষ করে। ছোটদের টানা এক ঘণ্টার বেশি পড়তে বাধ্য করবেন না। বাচ্চাকে কোনও অনেকটা পড়া একসঙ্গে না দিয়ে ছোট ছোট করে ভেঙে দিন। যেমন ধরুন তিনটে বিষয়ে হোমওয়র্ক একসঙ্গে করতে না দিয়ে আলাদা আলাদা ভাবে করতে দিন। একটা হোমওয়র্ক শেষ হওয়ার পর অন্যটা করতে দিন। এতে বাচ্চারা সময়ে কাজ শেষ করতে পারবে। একটা কাজ শেষ করার পর বাচ্চার প্রশংসা করুন। কাজ শেষ করা বা কাজে মুভমেন্ট থাকলে বাচ্চারা পরবর্তী কাজ করতে উৎসাহ পাবে। টিভি দেখা বা কম্পিউটার গেমস খেলার সময় নির্দিষ্ট করে দিন। দিনের যেটুকু সময় ফাঁকা থাকবে, সেই সময়টুকুতে বাচ্চাকে সৃজনশীল কাজ যেমন ছবি আঁকা, গানবাজনা করা বা গল্পের বই পড়ার মতো কাজ করতে উৎসাহিত করুন। উইক এন্ড বা ছুটির দিনগুলো রুটিনের আওতা থেকে বাইরে রাখুন।
২. মন দিয়ে পড়াশোনা করার জন্য বাড়ির পরিবেশটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চা পড়ার সময় যাতে বাড়িতে টিভি না চলে সেদিকে খেয়াল রাখুন। সন্তানের পড়ার ঘর নির্দিষ্ট করে দিন। খেয়াল রাখুন বাড়িতে হঠাৎ করে কেউ এলে সন্তাকে যেন উঠতে না হয় বা ওর পড়ার ক্ষতি না হয়। সন্তান যখন পড়াশোনা করবে আপনিও ওর পাশে বসে কোনও বই বা খবরের কাগজ পড়ুন। ওই সময়ে আপনি যদি সোশাল সাইটে ব্যস্ত থাকেন বা গেম খেলেন তাহলে কিন্তু সন্তান পড়ায় মন দিতে পারবে না। সন্তান পড়তে বসলে শুরুতেই কঠিন কোনও বিষয় না দিয়ে হালকা কোনও বিষয় দিয়ে শুরু করতে পারেন। এতে মনোঃসংযোগ করা সহজ হবে।
৩. পড়াশোনা বা নতুন কিছু শেখাটা ছোটদের কাছে ইন্টারেস্টিং করে তুলুন। পড়াশোনাকে কোনও গুরুগম্ভীর বিষয় করে তুলবেন না। আজকাল ছোটদের জন্য নানা ধরনের রঙিন খেলনা পাওয়া যায়। খেলার ছলে চটজলদি কিছু সেখার জন্য এগুলি দারুণ সহায়ক। যেমন ধরুন একদম ছোটদের জন্য রয়েছে অ্যাবাকাস। এর সাহায্যে বাচ্চারা খুব সহজেই গুণতে এবং সহজ অঙ্ক শিখতে পারে। একটু বড় হলে বাচ্চাকে জিগ স পাজ়ল সলভ করতে পারেন। এই ধরনের খেলায় মনোঃসংযোগ বাড়ে। এছাড়া ছোট থেকেই সন্তানের মধ্যে দাবা, স্ক্র্যাবল, সুদোকু, ক্রসওয়র্ড পাজ়লের মত মজার পাসটাইমের সঙ্গে ওর পরিচয় করিয়ে দিন। প্রথমদিকে নিজে সাহায্য করুন, তারপর নিজে নিজেই খেলতে দিন। অবসর সময়ে পরিবারের সকলে মিলে ধাঁধা বা ওয়র্ড গেম খেলতে পারেন।
৪. ছোটবেলা থেকেই সন্তানের মধ্যে কিছু সুঅভ্যাস গড়ে তুলুন। যেমন নির্দিষ্ট সময় ঘুম থেকে ওঠা, শুতে যাওয়া, হোম ওয়র্ক সময়ে শেষ করা ইত্যাদি। সন্তানকে কোনও কাজ একবার শুরু করলে, সেটা শেষ করে তবেই উঠতে পরামর্শ দিন। তা সে হোমওয়র্কই হোক বা পাজ়ল সলভিং। সামনে লক্ষ্যমাত্রা স্থির থাকলে মনোঃসংযোগ করা সহজ হয়। তবে শুধুমাত্র সন্তানের উপর নিয়ম জারি করলে কিন্তু চলবে না। আপনাদেরও এই নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে। পরিবারের সদস্যরাই ছোটদের রোল মডেল। তাই আপনারাও ডিসিপ্লিন মেনে চলুন যাতে আপনাকে দেখে সন্তান শিখতে পারে।
৫. বাচ্চারা যাতে প্রতিদিন দিনের কোনও একটা সময়ে অন্তত ছোটাছুটি করে খেলতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখুন। ছোটাছুটি করে খেলাধুলো বাচ্চাদের বড় হয়ে ওঠা এবং মানসিক বিকাশের জন্য খুবই জরুরি। করলে এতে শরীর-মন তরতাজা হয় এবং মনোঃসংযোগ বাড়ে।