মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর :
নীলফামারীর সৈয়দপুরে অন্য সময়ের মত ঈদের ছবিতেও দর্শক আসছেনা সিনেমা হলে। অথচ এবারের ঈদে ভালো ব্যবসা হবে এ আশা নিয়ে সৈয়দপুরে চালু থাকা একমাত্র প্রেক্ষাগৃহ তামান্না সিনেমা হলে ‘পাসওয়ার্ড’ ছবিটি প্রদর্শনের জন্য নিয়ে এসেছিলেন হল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আশানুরূপ দর্শক সিনেমা হলমুখী হচ্ছে না। ফলে গত ঈদের মতো এবারও ঈদের ছবিতে মোটা অংকের টাকা লোকসান গুণতে হবে হল বলে আশঙ্কা করছেন সিনেমা হলটির পরিচালক মো. মাহবুব আলী ঝন্টু।
এক সময়ে নীলফামারী জেলার বাণিজ্য প্রধান ও শ্রমিক অধ্যুষিত উপজেলা শহর সৈয়দপুরে বিজলী, লিবার্টি, গ্যারিসন ও তামান্না নামে চারটি সিনেমা হল ছিল। ইতোমতো দর্শকের অভাবে লোকসান সইতে না পেরে শহরের তিনটি সিনেমা হল বন্ধ করে দেন মালিক পক্ষ। সে সময় শহরের অভিজাত সিনেমা হল ছিল ‘বিজলী টকিজ’। কিন্তু দর্শক সংকটে বিজলী টকিজ বন্ধ করে সেখানে গড়ে তোলা হচ্ছে চৌধুরী টাওয়ার নামে অত্যাধিক সুপার মার্কেট ।
একই অবস্থা লিবার্টি সিনেমা হলেরও। এটি শহরের প্রাচীনতম ও ঐহিত্যবাহী সাহিত্য- সাংস্কৃতিক সংগঠন সৈয়দপুর শিল্প সাহিত্য সংসদের। তবে সেটি ভাড়ায় নিয়ে সিনেমা হল হিসেবে চলতো। বর্তমানে সেখানেও গড়ে তোলা হয়েছে অত্যাধুনিক সৈয়দপুর শিল্প সাহিত্য সুপার মার্কেট।
আর সৈয়দপুর সেনানিবাসের গ্যারিসন সিমেনা হলটিও বন্ধ করে সেখানে সেনা কমিউনিটি সেন্টার করা হয়েছে। গত ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ওই তিনটি সিনেমা হল একে একে বন্ধ হয়ে পড়ে লোকসানের কারণে। ডিজিটাল যুগে বর্তমানে ‘সবে ধন নীল মনি’ হয়ে আছে জেলার একমাত্র সৈয়দপুর শহরের শের-এ-বাংলা সড়কের তামান্না সিনেমা হলটি। এটি ভাড়ায় নিয়ে চালাচ্ছেন মাহবুব আলী ঝন্টু নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি পরিবার দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সিনেমা হল ব্যবসা পরিচালনায় জড়িত।
গত মঙ্গলবার রাতে সিনেমা হলের অফিস কক্ষে তাঁর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এবারে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সাকিব খানের ‘পাসওয়ার্ড’ ছবি এনেছি। ঈদের দিন থেকে ওই নতুন ছবির প্রদর্শন চলছে। আশা ছিল এবারের ঈদে ভাল ব্যবসা হবে। কিন্তু সে আশা একেবারে ‘গুড়ে বালি। ‘ শুধুমাত্র ঈদের দিন চারটি শো- এ লক্ষাধিক টাকার টিকিট বিক্রি হয়। এর পরদিন থেকে হলে ক্রমান্বয়ে দর্শক কমতে থাকে। গত মঙ্গলবার (১১জুন) সান্ধ্যাকালীন ৬ টার শো এ মাত্র চার হাজার টাকার মতো টিকিট বিক্রি হয়েছে। ছবিটি গত দুই সপ্তাহ যাবৎ হলে চলছে। অথচ সিনেমা হলে তেমন আশানুরূপ দর্শক আসছেন না।
কারণ হিসেবে তিনি জানান, এখন চলছে বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা। আর যে বয়সের মানুষ সিনেমা হলে আসেন, এখন তারা মূলতঃ বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা নিয়ে মেতে আছেন। তাছাড়া আমার ভাড়ায় নেওয়া সিনেমা হলের বসার আসনগুলো আরামদায়ক নয়। লোহার আসন। ফলে দর্শকরা সিটে বসে আরাম অনুভব করেন না। সেই সঙ্গে এখন জ্যৈষ্ঠ মাসের ভ্যাপসা গরম। ফলে হলে বসে মানুষ স্বস্তিমতো সিনেমা দেখতে পান না।
তিনি বলেন, হলে যদি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকতো তা দর্শকরা অনেক আরাম আয়েশে বসে সিনেমা দেখার সুযোগ পেতো। তিনি আরো জানান, গত ঈদুল আযহায়ও শাকিব খানের ‘ক্যাপ্টেন খান’ ছবি এনেছিলাম। তাতেও লোকসান শুনতে হয়েছে।
তিনি জানান, সিনেমা হলে মাসিক ভাড়া চল্লিশ হাজার টাকার ওপরে; স্টাফ আছেন ১২জন। এরপরে বিদ্যুৎ বিল, কাস্টমস্ ভ্যাট, পৌর কর ও কর্মচারি বেতন রয়েছে।গত রমজান মাসে লোকসানে হল চালিয়েছি। আশা ছিল এবারের ঈদের ছবিতে হয়তরা আগের লোকসান উঠে আসবে। কিন্তু এখন যে অবস্থা; তাতে মনে হয় এ ছবিতেও লোকসান গুণতে হবে। কারণ শাকিব খানের এ ছবিটি মোটা অংকের টাকায় আনা হয়েছে।
তিনি বলেন এভাবে লোকসান দিয়ে কি আর হল ব্যবসা করা সম্ভব?
ভাল মানের ছবি তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করে চলচ্চিত্র ও সিনেমা হল ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সরকারকে সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। এক সময় নিয়মিত ছবি দেখতেন শাহিদ,সালাম কুদ্দুসসহ অনেকেই। তারা বলেন, দেশীয় চলচ্চিত্রে এখন ভালোমানের গল্প নির্ভর ছবি তৈরী হয়না। এ কারণে দর্শক হল বিমুখ হয়েছেন তাছাড়া অসংখ্য বিদেশী এবং দেশী চ্যানেলে প্রতিদিনই বাংলা, হিন্দি,উর্দু ছবি প্রচার করায় দর্শক সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
সৈয়দপুরের সংস্কৃতিকর্মী শেখ রোবায়েতুর রহমান রোবায়েত বলেন, সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখবেন সে অবস্থা আর এখন আর নেই? এখনকার বাংলা চলচ্চিত্রগুলোতে কোন ভাল কাহিনী নেই। মানুষের জীবন ঘনিষ্ঠ ও কাহিনী নির্ভর ছবি তৈরি হচ্ছে না। ফলে আগের মতো পরিবার পরিজন নিয়ে সিনেমা হলে গিয়ে এখন আর ছবি দেখা সম্ভব হয় না। ফলে মানুষ সিনেমা হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেনন