খবর ৭১ঃ ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গোয়ায় একটি গ্রাম বছরের ১১ মাসই থাকে পানির নিচে। মাত্র এক মাসের জন্যই পানি ওপরে ভেসে ওঠে গ্রামটি। তবে কারদি নামের গ্রামটি যখন পানির উপর ভেসে উঠে তখন সেখানকার বাসিন্দারা আবারো তাদের ভিটে মাটিতে ফিরে যায়, আর উদযাপন করে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনার শুরু ১৯৮৬ সালে। তখন থেকেই এই গ্রামের বাসিন্দারা জানতেন যে গ্রামটির আর কোনো চিহ্ন থাকবে না। ওই বছরই রাজ্যে প্রথম বাঁধ নির্মাণ করা হয় এবং এর পরিণতিতে গ্রামটি সম্পূর্ণ পানিতে তলিয়ে যায়।
গ্রামটি এক সময় দক্ষিণ- পূর্ব গোয়ার একটি সমৃদ্ধশালী গ্রাম ছিল। তবে প্রতিবছর মে মাসে পানি সরে গেলে দেখা যায় গ্রামটিতে কী কী রয়ে গেছে। কাদামাটি, গাছের গুড়ি, ক্ষয়প্রাপ্ত ঘরবাড়ি, ভেঙে পড়া ধর্মীয় উপাসনালয়, গৃহস্থালির নানা জিনিস আর পরিত্যক্ত বিরান ভূমি– সবই দেখতে পাওয়া যায় পানি সরে গেলে।
এই গ্রামের জমিতে ফলন বেশি হয় এমন কথা প্রচলন ছিল। তিন হাজার মানুষের বাস ছিল এখানে। ধান চাষ, আর গ্রামকে ঘিরে রাখতো নারকেল গাছ, ক্যাসুনাট, আম এবং কাঁঠাল গাছে। হিন্দু, মুসলমান ও খ্রিষ্টান– এই তিন ধর্মের মানুষ এখানে বসবাস করতো। তবে দৃশ্যপট নাটকীয়ভাবে বদলে যায়, যখন ১৯৬১ সালে গোয়া পর্তুগিজদের থেকে স্বাধীন হয়ে যায়।
রাজ্যের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী গ্রামবাসীদের জানান, বাঁধটি নির্মাণ করা হলে দক্ষিণ গোয়ার সবাই উপকৃত হবে। এছাড়া কারদি গ্রামের সবাইকে পাশের গ্রামে সরিয়ে নেয়া হয় এবং সেখানে অনেক সুযোগ-সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। সে অনুযায়ী তাদের ভূমি ও ক্ষতিপূরণও দেয়া হয়। এরপর থেকেই কারদি’র বাসিন্দারা অপেক্ষায় থাকেন মে মাসের। এই মাসে পানি নেমে গেলেই তারা তাদের হারিয়ে যাওয়া গ্রামে ফিরে যান, নিজের ঘরবাড়ি ধংসাবশেষ দেখেন, ভেঙে পড়া প্রার্থণালয়ে গিয়ে প্রার্থনা ও স্মৃতিচারণ করেন।