শেখ কাজিম উদ্দিন, বেনাপোল : দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ৬টি সিঅ্যান্ডএফ লাইসেন্স সাময়িকভাবে বাতিল ঘোষণা করেছেন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এসকল ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লাইসেন্স রুলের শর্ত ভঙ্গ ও রাজস্ব ফাঁকিসহ বিভিন্ন অনিয়মের সত্যতা মেলায় প্রাথমিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
বাতিল হওয়া লাইসেন্স গুলো হলো- মেসার্স রহমান এন্ড সন্স, আজিম এন্টারপ্রাইজ, রিমু এন্টারপ্রাইজ, নিয়ন এন্টারপ্রাইজ, এনেক্স ইন্টারন্যাশনাল ও রাফিন এন্টারপ্রাইজ।
স্থানীয় সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীরা জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে দীর্ঘদিন যাবত আমদানি-রপ্তানি বানিজ্য বৃদ্ধি পেলেও বাড়ছেনা সরকারের রাজস্ব। যার কারণ খুজলে পাওয়া যাবে, বেনাপোল কাস্টমস ও বন্দরের এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কিছু অসাধু সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীরা হাত মিলিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে দুর্নীতি কার্যক্রম করে রাতারাতি কেবল নিজেরাই কোটিপতি বনে যাচ্ছেন আর তাদের কালো থাবায় প্রতি বছর শত শত কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীরা আরো জানান, বেনাপোল স্থলবন্দরে গত এক বছরে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দুই শতাধিক পণ্য চালান আটক হয়। কিন্তু আটকের পর এসব চালানের অধিকাংশই কাস্টমস কর্মকর্তারা গোপন সমঝোতায় ছেড়ে দিয়েছেন। সম্প্রতি বেনাপোল বন্দরে সবচেয়ে বড় শুল্কফাঁকির ঘটনা ঘটে মার্বেল পাথর আমদানিতে। যার সিএন্ডএফ এজেন্ট ছিল মেসার্স বেঙ্গল এজেন্সি আর আমদানিকারক ছিলেন যশোরের হোটেল জাবের প্যারাডাইস লিমিটেড। গোপনে যিনি কাজ করেছিলেন তিনি প্রভাবশালী এক দূণীতিবাজ ও চাটুকর সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান মতি। এখানে ১২০ টন মার্বেল পাথর আমদানিতে ৬৪ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়েছিল। যা বিভিন্ন পত্রিকায় ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হলেও অজ্ঞাত রহস্যে নামমাত্র রাজস্ব দেখিয়ে চালানটির খালাস দেওয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে। যা বর্তমানে বিভিন্ন সিএন্ডএফ এজেন্ট কাস্টমস ও বন্দরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারিদের সাথে সিন্ডিকেট তৈরি করে রাজস্ব ফাঁকির মহাৎসবে লিপ্ত রয়েছেন। সম্প্রতি দেড় কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বন্দর অভ্যন্তর থেকে পণ্য পাঁচারের অভিযোগে মামলাও হয়েছে। আটকও হয়েছেন কয়েকজন।
বেনাপোল কাস্টমস সুত্রে জানাগেছে, গত ৪ বছর পর এবার ২০১৬-১৭ অর্থ বছর বেনাপোল বন্দরে ৩৭৬০ কোটি ৩০ লাখ টাকার বিপরীতে ৩৮০৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। সেখানে গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০৩ কোটি, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ১৩৪ কোটি ৭৩ লাখ, ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ৪৫২ কোটি ৮৯ লাখ এবং ২০১১-১২ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ১৯৪ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার-১, জাকির হোসেন জানান, ‘এসকল সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ৬টি লাইসেন্সের কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। পাথর আমদানিতে শুল্ক ফাঁকির বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ওই সিএন্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্সের বিন লক রাখা হয়েছে। এছাড়া সঠিক নিয়মে সরকারের রাজস্ব আদায়ের জন্য তারা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এসাথে এ বন্দরের সকল দূর্নীতির বিরুদ্ধে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
খবর৭১/এস: