মঈনুল হাসান রতন ,হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ ছোট তিন শিশুকে নিয়ে জীবনযুদ্ধে নেমেছেন জেসমিন। রাস্তা কিংবা হাট-বাজারে মানুষের কাছে হাত পেতে যা কিছু পান তা দিয়েই তিন শিশু সন্তানের মুখে আহার তুলে দিচ্ছেন তিনি। স্বামী তাকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে বাড়ি থেকে চলে যাবার পরই উপায়ান্তর না পেয়ে এক প্রতিবন্ধি শিশুসহ ৩ শিশু সন্তানকে নিয়ে এ পথে নামতে বাধ্য হয়েছেন জেসমিন। সেই হতভাগীর বাড়ি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার জালালাবাদ গ্রামে। তার স্বামীর বাড়ি চুনারুঘাট উপজেলার গেড়ারুক গ্রামে। স্বামীর নাম সজল হক।
জেসমিন জানান, তার বয়স যখন মাত্র ১৩ বছর তখন আনোয়ার নামের এক ঘটকের মাধ্যমে তার বিয়ে হয় চুনারুঘাট উপজেলার গেড়ারুক গ্রামের আব্দুল হকের পুত্র সজল হকের সাথে। বিয়ের প্রথম বছরই ওই কিশোরী মা বনে যান। জন্ম নেয় শারিরিক প্রতিবন্ধি ইয়াসিন। পরে একে একে জন্ম নেয় জিহাদ ও নিশু।
তিনি বলেন, বিয়ের পরের বছরই প্রতিবন্ধি হয়ে জন্ম নেয় ইয়াসিন। পরবর্তীতে আরো দুই সন্তান জন্ম নেয়। বিয়ের ৯ বছরে একে একে তিন সন্তান জন্ম নেয়। ছোট সন্তান গর্ভে আসার পরই তাকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে সন্তানদের রেখে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় স্বামী সজল হক। ইয়াসিনের প্রতিবন্ধিতাকে সহজভাবে মেনে নেয়নি সজল হক। এ নিয়ে সজল হক স্ত্রীর সাথে ঝগড়ার মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এক সময়। সজল বখাটে প্রকৃতির বলে জানান এলাকাবাসি। প্রতিবন্ধি ইয়াসিনের জন্ম নেয়াটাকে সে স্ত্রীর উপর চাপিয়ে দেয়। এক সময় বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যায় সজল। বেচারী জেসমিন প্রতিবন্ধি ইয়াসিন (৮) জিহান (৪) এবং দেড় বছরের নিশু কন্যাকে নিয়ে পড়ে যান বিপাকে। প্রথমে এ বাড়ি ও বাড়ি গিয়ে ঝি এর কাজ করে ৩ সন্তানের ভরণ-পোষন চালান। এখন আর চলেনা। তাই প্রতিবন্ধি ইয়াসিনকে বাজারে তোলতে বাধ্য হয়েছেন।গায়ে-গতরে জেসমিন যে বেশ সুন্দরী ছিলো তা বুঝা যায় এখনো তবে দারিদ্রের ছাপ- গায়ে-মুখে। শরীরে ঘামাছি উঠেছে। স্বাস্থ্যেও ঘটেছে অবনতি। কাপড়-চোপড় ময়লা-দুর্গন্ধময়।জেসমিনের সাথে সেদিন কথা হয় স্থানীয় আমুরোড বাজারে। প্রতিবন্ধি ইয়াসিনকে মাটিতে শুয়ে রেখেছেন। ফুটফুটে জিহান মা’য়ের পাশেই ঘুরাঘুরি করছে। আর নিশু মায়ের কোলে দিব্যি আরামে ঘুমাচ্ছে। জেসমিন বলেন, উপায় না দেখে বাজারে হাত পাততে বাধ্য হয়েছি। অসহায় সন্তানের মুখে কয়েক মুঠো খাবার দিবো বলেই ভিক্ষার হাত আজ আপনাদের কাছে। তিনি বলেন, স্থানীয় ময়-মুরব্বী,চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে নালিশ করে কোন বিচার না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ভিক্ষার হাত বাড়াই। যা পাই তা দিয়ে ৩ সন্তানের মুখে আহার দিচ্ছি। আপনি কি রোজা রেখেছেন ? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আল্লাহ’র ফরজ রোজা না রাখলে গোনা হবে তাই রোজা রেখেছি। সেহরী কি দিয়ে খেয়েছেন ? ভাত আর আলুর ভর্তা। পাশের একটি খাবারের দোকান দেখিয়ে বললেন, তিনি আজ ইফতার করাবেন। হতভাগি জেসমিনের সন্তানের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। অবহেলা আর অনাদরে বেড়ে উঠছে ওই সন্তান ৩ জন।