খবর৭১ঃদাররা অনন্য মর্যাদায় অভিষিক্ত। তাদের সম্মান ও প্রতিদান অন্য আমলকারীদের চেয়ে অনেক বেশি। হাদিস শরিফে রোজা ও রোজাদারের যে ফজিলত বর্ণিত হয়েছে, অন্য কোনো ইবাদতের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে রোজার বিধিবিধান স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। এত স্পষ্টভাবে অন্য কোনো বিধান নিয়ে পবিত্র কোরআনে আলোচনা করা হয়নি। এমনকি নামাজ, হজ ও জাকাত সম্পর্কেও নয়।
হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে নেকির প্রত্যাশায় রমজানে রাত জেগে ইবাদত করে, তার অতীতের গুনাহগুলো মাফ করে দেওয়া হয়।’ (বুখারি, হাদিস নং: ৩৭)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক আদমসন্তানের নেক কাজের প্রতিদান দশ গুণ থেকে সাত শ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়। আল্লাহ বলেন, রোজা এর মধ্যে গণ্য হবে না। কেননা রোজা শুধু আমার জন্য। আমিই এর পুরস্কার দেব। আমার জন্য বান্দা পানাহার ও যৌনবাসনা পরিহার করে। রোজাদারের আনন্দ দুটি। একটি হলো ইফতারের সময়। দ্বিতীয়টি হলো আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের আনন্দ। রোজাদারের মুখের ঘ্রাণ আল্লাহর কাছে মিশকের সুগন্ধির চেয়েও সুগন্ধিময়।’ (মুসলিম, হাদিস নং: ১১৫১, তিরমিজি, হাদিস নং: ৬৫৯)
হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য; শুধু রোজা ছাড়া। কারণ, তা আমার জন্য। তাই আমি নিজে এর পুরস্কার দেব। রোজা ঢালস্বরূপ। রোজা রেখে তোমাদের কেউ যেন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করতে চায়, তাহলে সে যেন বলে, আমি রোজাদার। যে মহান সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ! অবশ্যই (অনাহারের কারণে সৃষ্ট) রোজাদারের মুখের ঘ্রাণ আল্লাহর কাছে মিশকের সুগন্ধির চেয়েও সুগন্ধিময়…।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস : ১৯০৪, মুসলিম শরিফ, হাদিস : ২৭৬২)
মহানবী (সা.) অন্য হাদিসে বলেছেন, ‘রমজান মাসের প্রথম রজনীতে শয়তানদের মজবুতভাবে বেঁধে রাখা হয় এবং অবাধ্য জিনদেরও বন্দি করে রাখা হয়। দোজখের সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কোনো দরজা পুরো রমজান মাসে খোলা হয় না এবং জান্নাতের সব দরজা খুলে দেওয়া হয়। একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। সঙ্গে সঙ্গে একজন আহ্বানকারী আহ্বান করতে থাকেন—হে সাওয়াবপ্রত্যাশীরা, অগ্রসর হও। হে পাপিষ্ঠরা, পাপ থেকে হাত গুটিয়ে নাও। আল্লাহ তাআলা এই পবিত্র মাসের সম্মানার্থে অনেক পাপিষ্ঠকে ক্ষমা করে দেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। আর এটা রমজানের প্রতি রাতেই হয়ে থাকে।’ (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৫৯৭-৯৮)
প্রিয় নবী (সা.) আরো বলেছেন, ‘জান্নাতের একটি দরজাকে বলা হয় রাইয়ান। কিয়ামতের দিন এই দরজা দিয়ে শুধু রোজাদাররা প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া এই দরজা দিয়ে অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। বলা হবে, রোজাদাররা কোথায়? তখন রোজাদাররা দাঁড়াবে। তাদের প্রবেশ করতে আদেশ দেওয়া হবে। তারা প্রবেশ করার পর দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। এরপর এই দরজা দিয়ে অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস : ১৮৯৬)
বিপুল সওয়াব ও পুণ্য লাভের পাশপাশি রোজাদার এভাবেই অনন্য মর্যাদায় অভিষিক্ত হন। রোজার পবিত্রতা রক্ষা করে মহান আল্লাহ আমাদের রমজানের রোজাব্রত পালনের তাওফিক দান করুন।