খবর৭১ঃ স্বাধীন ফিলিস্তিনি ও দখলদার ইহুদিবাদী ইসরায়েল নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথিত ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ ফাঁস হয়েছে। ইসরায়েলের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ‘ইসরাইল হায়োম’ নথির অংশবিশেষ ফাঁস করেছে। নথিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভয়ঙ্কর রূপ ও পরিকল্পনাই ফুটে উঠেছে।
ইসরায়েল প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ এই গণমাধ্যমের খবর বলা হয়েছে, ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’তে ইসরাইল, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএলও) ও হামাসের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর বর্তমানে দখলকৃত পশ্চিম তীর ও গাজা তীর নিয়ে একটি নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে, যার নাম হবে ‘নয়া ফিলিস্তিন’।
নয়া ফিলিস্তিনের কোনো সেনাবাহিনী থাকবে না। শুধু পুলিশ বাহিনী থাকবে। নয়া ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে একটি সুরক্ষা চুক্তি সই হবে। এই চুক্তি অনুযায়ী নয়া ফিলিস্তিনকে বৈদেশিক আক্রমণ থেকে রক্ষা করবে ইসরাইল। বিনিময়ে ইসরাইলকে অর্থ পরিশোধ করবে ফিলিস্তিন। প্রয়োজনে আরব দেশগুলোও ইসরাইলকে অর্থ পরিশোধ করবে।
ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বিতরণ করা নথির বরাতে পত্রিকাটি বলছে, এই নথিতে থাকা শর্তাবলীর অংশবিশেষ ইসরাইলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলাপে উল্লেখও করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের জামাই ও মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার ও ইসরাইল বিষয়ক উপদেষ্টা জ্যাসন গ্রিনব্ল্যাট। এই দু’ জনের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ সস্পর্ক রয়েছে নেতানিয়াহুর।
চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে হামাস ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ নিজেদের সমস্ত অস্ত্র মিশরের কাছে জমা দেবে। হামাস নেতাদের বিনিময়ে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে ও মাসিক বেতন দেবে আরব রাষ্ট্রগুলো। ইসরাইলি টার্মিনাল ও ক্রসিং-এর মাধ্যমে গাজার সীমান্ত বহিঃর্বিশ্বের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে একটি সমুদ্র ও বিমানবন্দর নির্মিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলি সমুদ্র ও বিমান বন্দর ব্যবহার করতে পারবে। এক বছরের মধ্যে একটি নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তী ৩ বছরের মধ্যে ইসরাইল ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেবে।
কঠোর হুঁশিয়ার দিয়ে ফাঁস হওয়া নথিতে বলা হয়েছে, পিএলও ও হামাস এই চুক্তি সই না করলে তাদেরকে শাস্তি পেতে হবে। সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এমন সব প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করবে ও অন্যদেরও বন্ধ করতে বলবে যেখান থেকে ফিলিস্তিনিরা লাভবান হয়। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের বিশেষ সংস্থা ও জেরুজালেমে ফিলিস্তিনি হাসপাতালে অর্থায়ন বন্ধ করেছে। যদি পিএলও চুক্তি সই করে, কিন্তু হামাস ও ইসলামি জিহাদ উভয়েই চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করবে ইসরাইল, যাতে পূর্ণ সমর্থন থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের। ইসরাইল এই চুক্তি সই না করলে, যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে দেওয়া সকল আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দেবে।
নথিতে অনেকটাই অস্পষ্ট রয়ে গেছে জেরুজালেম ইস্যুটি। ২০১৭ সালেই জেরুজালেমকে ইসরাইলি রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। তবে নথিতে বলা হয়েছে, জেরুজালেম এখনকার মতো অবিভক্তই থাকবে। তবে শহরের দায়িত্ব ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে। ইসরাইল শহরের সাধারণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। জেরুজালেমে বসবাসরত ৪ লাখ ৩৫ হাজার ফিলিস্তিনিরা হবেন নয়া ফিলিস্তিনের নাগরিক। তবে জেরুজালেমে ইসরাইলি পৌরসভা শহরের জমি সংক্রান্ত দায়িত্বে থাকবে। নয়া ফিলিস্তিন ইসরাইলি পৌরসভাকে কর দেবে। বিনিময়ে ফিলিস্তিনিদের শিক্ষাদীক্ষার দায়িত্বে থাকবে তারা।
জেরুজালেমের পবিত্র নগরীর বিদ্যমান অবস্থা বহাল থাকবে। ইহুদী ইসরাইলিরা সেখানে জমি কিনতে পারবেন না। তেমনি ফিলিস্তিনিরাও তাদের কাছ থেকে জমি কিনতে পারবেন না। অপরদিকে পশ্চিমতীরে থাকা ইসরাইলি বসতি, যা আন্তর্জাতিক আইনানুসারে অবৈধ ধরা হয়, সেগুলো ইসরাইলের অংশ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হবে।
নথি মোতাবেক, গাজা তীরের জন্য অতিরিক্ত ভূখ- দেবে মিশর। সেখানে বিমানবন্দর, কারখানা, বাণিজ্যিক ও কৃষি কেন্দ্র থাকবে। তবে সেখানে ফিলিস্তিনিরা বসবাস করতে পারবেন না। এ বিষয়ে পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বর্তমানে একে অপরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন গাজা তীর ও পশ্চিম তীরের মধ্যে সংযোগের জন্য ইসরাইলের ভেতর দিয়ে মাটি থেকে ৩০ মিটার ওপরে সংযোগ সড়ক নির্মিত হবে। এই মহাসড়কের ৫০ শতাংশ ব্যয় বহন করবে চীন। দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ ১০ শতাংশ করে ব্যয় করবে।
ফাঁস হওয়া এই নথিতে ইঙ্গিত মিলছে যে, এই চুক্তিতে অর্থায়ন করবে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ ও অজ্ঞাত কিছু উপসাগরীয় দেশ। নয়া ফিলিস্তিনে বিভিন্ন অবকাঠামো খাতে ব্যয়ের জন্য ৫ বছরে ৩০০০ কোটি ডলার দেওয়া হবে। এই অর্থের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ২০ শতাংশ, ইইউ ১০ শতাংশ ও উপসাগরীয় দেশগুলো ৭০ শতাংশ বহন করবে।