খবর ৭১: শবে বরাত কবে হবে সে সিদ্ধান্ত জানা যাবে ১৭ এপ্রিল। শবে বরাতের তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে শনিবার জরুরি সভায় বসে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। সভায় ৬ সদেস্যের নতুন কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ১৭ এপ্রিল তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বায়তুল মুকাররম সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি শেখ মো. আব্দুল্লাহ।
প্রসঙ্গত, গত ৬ এপ্রিল শনিবার সন্ধ্যার পর জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় আগামী ২১ এপ্রিল রাতে শবে বরাত পালনের সিদ্ধান্ত হয়। সারা দেশের কোথাও শাবান মাসের চাঁদ দেখা না যায়নি জানিয়ে সেদিন সভাশেষে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী জানান, ১৪ শাবান রাত অর্থাৎ ২১ এপ্রিল রাতে শবে বরাত পালন করা হবে। তবে ‘মজলিসু রুইয়াতুল হিলাল’ নামের একটি সংগঠনের নেতারা বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, গত ৬ এপ্রিল শাবানের চাঁদ দেখা গেছে এবং সে বিষয়ে প্রশাসনকে অবহিত করা হলেও সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হয়নি।
যে কারণে বিভ্রাট
বাংলাদেশের আকাশে ৬ এপ্রিল হিজরি শাবান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি বলে ঘোষণা দিয়েছিল জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। সেদিন সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মুকাররম সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা শেষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি ও ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ জানিয়েছিলেন, ২১ এপ্রিল দিবাগত রাতে সারাদেশে পবিত্র লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাত পালিত হবে।
তবে, মজলিসু রুইয়াতিল হিলাল নামের একটি সংগঠন দাবি করছে, ৬ এপ্রিল বাংলাদেশের আকাশে শাবান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। সংগঠনটি বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ‘ভুল তারিখে পবিত্র শবে বরাতের তারিখ ঘোষণার সিদ্ধান্তে অটল থাকায় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির পদত্যাগ করা উচিত। তারা দেশের কোটি কোটি মুসলমানের বিশ্বাস রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে।’
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আকরাম খাঁ হলে এক সংবাদ সম্মেলন করে মজলিসু রুইয়াতুল হিলাল। সংগঠনটির সভাপতি আন্তর্জাতিক চাঁদ গবেষক আবুল বাশার মুহম্মদ রুহুল হাসান বলেন, ‘প্রত্যক্ষদর্শীরা ২৯ রজবুল হারাম শরীফ দিবাগত রাতে খাগড়াছড়ি ডিসি সাহেবকে ফোন করলে ডিসি সাহেব প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিতও হয়েছেন। কিন্তু, রাত ১১টার দিকে ডিসি সাহেব প্রত্যক্ষদর্শীদের আবার ফোন করে বলেছেন, ‘চাঁদ দেখার ঘোষণা হয়ে গেছে, চুপ করে যান।’
জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সামলোচনা করে আবুল বাশার মুহম্মদ রুহুল হাসান বলেন, ‘মাগরিবের ওয়াক্ত শুরু ৬টা ২২ মিনিটে, নামাজ শুরুর ৫ মিনিট পর ৬টা ২৭ মিনিট। নামাজ যদি ৬টা ৪০ মিনিটে শেষ হয়, তাহলে চাঁদ দেখা কমিটির মিটিং শুরু ৬টা ৪৫ মিনিটে। অথচ মিডিয়ায় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির প্রেস রিলিজ পাঠানো হয় ৭টা ১০ মিনিটে। আর ৭টা ১৯ মিনিটে চাঁদ দেখতে না পাওয়ার সংবাদও মিডিয়াতে চলে আসে। তাহলে প্রশ্ন জাগে ৬টা ৪৫ থেকে ৭টা ১০ মিনিট, এই ২৫ মিনিটের মধ্যে ৬৪ জেলার চাঁদের রিপোর্ট এতো তাড়াতাড়ি এলো কি করে? ১ মিনিট লাগলেও তো ৬৪ মিনিট লাগার কথা। তাহলে পর্যালোচনার সময় গেলো কোথায়? সম্প্রতি জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির ভুল সিদ্ধান্ত ও একগুয়েমি আচরণের কারণে এতদিনের প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ও বিশ্বাস ক্ষুণ্ন হচ্ছে। জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির ভুল তারিখে শবে বরাত পালনের সিদ্ধান্তের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভে সঞ্চার হয়েছে, কারণ পবিত্র শবে বরাত রাতটি ভাগ্য রজনী। যে দিবসে দ্বীনদার মুসলমানরা সারা রাত জেগে ঈবাদত বন্দেগি করেন এবং দিনের বেলায় রোজা রাখেন। কিন্তু, ভুল তারিখ ঘোষণার কারণে দেশে কোটি কোটি দ্বীনদার মুসলমানরা পবিত্র শবে বরাত নষ্টের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ন হবে। তাই বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
সংগঠনটির দাবির পর ফের বৈঠককে বসছে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৪৪০ হিজরি সনের শাবান মাসের চাঁদ দেখার সংবাদ পর্যালোচনা এবং এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের নিমিত্ত ৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মুকাররম সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় দেশের সকল জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়গুলো, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের সকল কার্যালয় এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, বাংলাদেশের আকাশে কোথাও শাবান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। সে হিসাব মতে, আগামী ২১ এপ্রিল রবিবার দিবাগত রাতে সারাদেশে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে মর্মে গণমাধ্যমে সিদ্ধান্ত পাঠানো হয়। উক্ত সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমে প্রচারের পর বিভিন্ন ব্যক্তি ও মহল থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রচারণার পর জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। উক্ত বিভ্রান্তি নিরসন কল্পে ১৩ এপ্রিল সকাল ১১টায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মুকাররম সভাকক্ষে এক বিশেষ সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সদস্যরা এবং দেশের খ্যাতনামা আলেম-ওলামাগণ উপস্থিত থাকবেন। এ সভায় সংশ্লিষ্ট সকলকে এবং যারা চাঁদ দেখেছেন মর্মে দাবি করেছেন তাদেরকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো।