খবর ৭১: ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবা ব্যারেজের সবকটি জলকপাট খুলে দেওয়ায় আকষ্মিকভাবে পানি বেড়েছে ভাটির দেশ বাংলাদেশ অংশের তিস্তা ব্যারেজের নীলফামারী পয়েন্টে। তিস্তার পানি সোমবারের চেয়ে কিছুটা কমলেও এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে তিস্তার পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
উজানের ঢল আর ভারি বর্ষণের কারণে তিস্তা নদী বেষ্টিত ১০ ইউনিয়ন এবং ২০টি চরে বন্যা দেখা দিয়েছে। খাদ্যাভাব এবং নানা সঙ্কটে পড়েছেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।
ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে শুরু করেছে প্রশাসন। তিস্তার পানি পর্যবেক্ষণ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়নে সার্বিক মনিটরিং করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, সোমবার বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও বিকেলের পর থেকে পানি কমতে থাকে। যা আজও অব্যাহত রয়েছে। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, পরিস্থিতি আরো কয়েকদিন এভাবে থাকতে পারে।
পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান জানান, নদী বেষ্টিত ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকায় পানি প্রবেশ করায় ঘর বাড়ি হাঁটু পানিতে তলিয়ে গেছে।
তিনি জানান, গতকাল (সোমবার) খাদ্যাভাবে পড়েছেন ইউনিয়নের অন্তত ১০ হাজার মানুষ। দ্রুত শুকনো খাবার বিতরণ করা প্রয়োজন। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়ন করে প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন চেয়ারম্যান।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি, ঝুনাগাছ চাপানি, খালিশা চাপানি, পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি এবং জলঢাকা উপজেলার গোলমুণ্ডা, শৌলমারী, কৈমারী ও ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত টেপাখড়িবাড়ি ও ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের মানুষ।
ক্ষতিগ্রস্ত ১০ ইউনিয়নে জনসংখ্যা ৮ লাখ ৫৪ হাজার ৬৫৬ জন। আর বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৭০৬টি পরিবার।
নদীবেষ্টিত আশপাশ এলাকা পরিদর্শন করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানান জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ খালেদ রহীম। তিনি বলেন, এখনো সব এলাকায় বন্যা শুরু হয়নি। কিছু মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সেটা দেখা হচ্ছে। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রণ সেল খুলেছি এবং বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছি সময় মতো।
বন্যাকবলিত এলাকায় ৪০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া রয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালেদ রহীম।
এদিকে পানি বাড়ায় হুমকির মুখে পড়েছে টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ি গ্রামের স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত বালু বাঁধটি। যেকোনো মুহূর্তে ধসে গেলে পানিতে তলিয়ে যাবে চারটি ওয়ার্ড।
জানতে চাইলে টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন বলেন, ‘সংসদ সদস্য, স্থানীয়দের সহযোগিতা এবং পরিষদের সহযোগিতায় বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সেটি স্থায়ী নয়। পানির স্রোত বেড়ে গেলে বাঁধটি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হাফিজুল ইসলাম জানান, মূলত উজানের ঢলের কারণে পানি বেড়েছে তিস্তায়। তাছাড়া ভারি বৃষ্টিপাতও রয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকবে আরো কয়েক দিন।
ভারতের গজলডোবা ব্যারেজের সবকটি জলকপাট খুলে দেওয়ায় পানির প্রবাহ বেড়ে যায় তিস্তা নদীতে। সেখান থেকে বাংলাদেশ অংশে তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে আসতে সময় লাগে ১২ ঘণ্টা। বিষয়টি জানার পর সার্বিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারেজের সবকটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রেখেছি আমরা। নজর রয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, অ্যাপ্রোচ বাঁধ, গাইড বাঁধ, স্পার রক্ষায়’ যোগ করেন তিনি।
তবে পানি বাড়লেও তেমন খারাপ কোনো পরিস্থিতি এখনও সৃষ্টি হয়নি বলে জানান হাফিজুল ইসলাম।
এদিকে তিস্তা ছাড়াও পানি বেড়েছে জেলার উপর দিয়ে বহমান বুড়ি তিস্তা, চারালকাটা, বুড়িখোড়া, যমুনেশ্বরী, খড়খড়িয়া, দেওনাই, খেড়ুয়া, শালকি, নাউতারা, কুমলাই, ধুম, ধাইজান ও চিকলি নদীতে।
খবর ৭১/ইঃ