খবর৭১ঃ আমাদের ভবনে আগুন লেগেছে। এই মুহূর্তে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। এখান থেকে বেরুতে পারবো কি না জানি না। আমার জন্য সবাইকে দোয়া করতে এবং মাফ করে দিতে বলো।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে আটকা পড়ার পর টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের নাহিদুল ইসলাম তুষার তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার নদীকে ফোনে একথাগুলো বলেন।
নাহিদুল ইসলাম তুষার উপজেলা গোড়াই ইউনিয়নের ভানুয়াবহ গ্রামের মো. ইছাক আলীর ছেলে। তিনি ওই টাওয়ারের দশ তলায় অবস্থিত হ্যারিটেজ ট্রাভেলস এজেন্সিতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। চার বছর আগে মাহমুদা আক্তার নদীর সঙ্গে তুষারের দাম্পত্য জীবন শুরু হলেও তাদের কোন সন্তান ছিলোনা।
বৃহস্পতিবার ভবনে আটকা পড়ার পর মোবাইল ফোনে তুষার তার বাবা এছাক আলী, মা নুরুন্নাহার, বড় ভাই তুহিন ও ছোট ভাই শিশিরের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেন। এ সময় তাকে বাঁচানোর জন্য তাদের কাছে সাহায্য চান। কিন্ত কেউ তার এই করুণ আর্তনাদে সারা দিতে পারেননি। এর পর বেলা দুইটার দিকে তুষারের মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়।
ভয়াবহ আগুনের লেলিহান শিখায় অন্যদের সাথে তুষারের জীবনপ্রদীপও মুহূর্তের মধ্যেই নিভে যায়। শুক্রবার ভোরে তুষারের লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌছালে সেখানে শতশত মানুষ ভীড় জমায়। এসময় সেখানে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ভাইয়ের লাশ সামনে রেখে নিশ্চিত মৃত্যু পথযাত্রী ভাইকে বাঁচাতে না পারায় বড় ভাই তুহিনের আহাজারীতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে। উপস্থিত সকলেই তখন অশ্রুসজল হয়ে ওঠেন। শুক্রবার সকাল দশটায় গ্রামের বাড়িতে তার নামাজে জানাজা শেষে সামাজিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। জানাজায় শতশত মানুষ অংশ নেন।