নৃশংস হামলায় নিউজিল্যান্ডের মুসলমানরা হতভম্ব

0
380

খবর৭১ঃভয়াবহ হামলার পর দেশটির মুসলমানদের মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও আতঙ্ক। ছবি: সংগৃহীত

নৃশংস হামলায় নিউজিল্যান্ডের মুসলমানরা হতভম্বঅবস্থায় রয়েছে।নিউজিল্যান্ডে মুসলমানরা শান্তিপূর্ণ ও সহানুভূতিশীল হিসেবেই পরিচিত। শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে ভয়াবহ হামলার পর দেশটির মুসলমানদের মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও আতঙ্ক।

জুমার নামাজের সময় বন্দুকধারীর হামলায় ৪৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২৭ জন। নৃশংস এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে সারা বিশ্ব।

বিশ্বের অনেক দেশের মতো নিউজিল্যান্ডে বর্ণবাদের সমস্যা তেমন ছিল না। শান্তিপূর্ণভাবেই বিভিন্ন জাতি দেশটিতে বসবাস করত।

নিউজিল্যান্ডে বসবাসরত এক আরব সাংবাদিকের বরাতে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনাদলুজানায়, হঠাৎ কেন এমন নৃশংসতার স্বীকার হতে হলো, নিউজিল্যান্ডের মুসলমানরা এখনও বিষয়টি বুঝে উঠতে পারছে না। এ হামলার যে ধরন তাতে স্পষ্ট যে, এটি একটি পরিকল্পিত আক্রমণ।

হামলাকারী মানসিকভাবে অসুস্থওনয়; কারণ তিনি পেশাদার অস্ত্র ব্যবহার করছেন এবং তার সময় নির্ধারণটাও পরিকল্পিত।

নিউজিল্যান্ডে বসবাসরত আসমা শুকরা নামের ওই আরব সাংবাদিক বলেন, ক্রাইস্টচার্চে নৃশংস এ হামলার পর নিউজিল্যান্ডের মুসলমানরা এখন চরম আতঙ্ক ও শোকাবহ অবস্থায় রয়েছে।

জুমার নামাজের সময় যা ঘটেছে তা এখনও নিউজিল্যান্ডের মুসলমানরা বিশ্বাস করতে পারছেন না জানিয়ে আসমা বলেন, নিউজিল্যান্ডের মতো শান্ত দেশে এমন নৃশংস ঘটনা ঘটবে,তা মুসলমানদের ধারণাতেও ছিল না। এরপরও শান্তি ও সহানুভূতির সঙ্গেই মুসলমানরা তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম ও ধর্মীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে উদাহরণস্বরূপ আসমা জানান, প্রতিদিন তিনি সাধারণ পরিবহনেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। এতে কোনও সমস্যার সম্মুখীন হন না। যদিও তিনি হিজাব পরেন, কিন্তু কখনও বিরূপ কোনো পরিস্থিতির শিকার হতে হয়নি তাকে। অথচ ইউরোপ ও আমেরিকাতেও মুসলমানরা বর্ণবাদী হামলার শিকার হয়।

স্থানীয় মিডিয়া বিষয়টিতে সক্রিয় আছে জানিয়ে মুসলিম এ নারী সাংবাদিক বলেন, আক্রমণের বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে তারা কভারেজ করেছে, যা নতুন ছিল। এটি একটি অসাধারণ ঘটনা, প্রায় ৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার একটি ছোট দেশে এমন ঘটনা সব মতাবলম্বীদের জন্যই দুঃখজনক।

প্রসঙ্গত, নিউজিল্যান্ডে বিভিন্ন জাতির মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে। ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পর ইউরোপ, এশিয়া, মিডলইস্ট ও আফ্রিকাসহ নানা দেশের বহু মানুষ এখানে এসে বসতি স্থাপন করে। দেশটিতে ইসলাম ধর্মের বিকাশ শুরু হয় ১৮৭০ সালে।

নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের দেশটিতে ইসলামের প্রচার ও প্রসার হয় মূলত অভিবাসীদের মাধ্যমে। সে সময় স্বর্ণ অনুসন্ধানকারী পেশার ১৫ জন চীনা মুসলমান জীবিকার অন্বেষণে পাড়ি জমিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডে। ওটাগোর ডানস্টানের স্বর্ণক্ষেত্রে তারা কাজ করতেন।

পরে ১৯০০ সালের শুরুর দিকে গুজরাটের তিনটি মুসলিম পরিবার সেখানে বসতি স্থাপন করে। তারপর ১৯৬০ সাল পর্যন্ত সময়ে পূর্ব ইউরোপ এবং ভারত থেকে আসা আরও কিছু অভিবাসী মুসলমান সেখানে বসবাস শুরু করে স্থায়ীভাবে।

নিউজিল্যান্ড সরকারের হিসাবমতে, ১৯৫০ সালে নিউজিল্যান্ডে মুসলমান অধিবাসী ছিল মাত্র ১৫০ জন। ১৯৬০ সালে এ সংখ্যা উন্নীত হয় ২৬০-এ।

অভিবাসী মুসলমানদের বড় আকারে বসতি স্থাপন শুরু হয় ১৯৭০ সালে। সে সময় ফিজি থেকে আসা ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলমানরা নিউজিল্যান্ডে বসতি স্থাপন শুরু করে। তাদের অনুসরণ করে ১৯৯০ সালের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত অনেক দেশের উদ্বাস্তু মুসলমানরা পাড়ি জমায় নিউজিল্যান্ডে। এরপর থেকেই নিউজিল্যান্ডে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকে।

বর্তমানে নিউজিল্যান্ডে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় লাখের কাছাকাছি। যাদের মাঝে অনেক যোগ্য ও অভিজ্ঞ আলেমও রয়েছেন। যাদের অনেকেই ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করে এ দেশে এসেছেন। তারা নিউজিল্যান্ডে ইসলাম প্রচার ও সেখানকার মুসলিমদের ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করার পেছনে দিন রাত শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here