খবর৭১ঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একসময় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো। বলা হতো জ্ঞানের মন্দির, মুক্তচিন্তার লালনভূমি। এখন আর তা কেউ বলে না। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড কথাটা মানুষ ভুলে গেছে অনেক বছর আগেই।
একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুকে বলা হতো সেকেন্ড পার্লামেন্ট। জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সব শোষণ, নিপীড়ন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে বটতলা থেকে আন্দোলন সংগ্রামে গতিপ্রবাহ নির্ধারণ হতো। জাতির ভাগ্য নির্ধারণের ঘোষণা আসত এখান থেকে।
সামরিক শাসনকবলিত বাংলাদেশে বার বার ডাকসুর নেতৃত্বে এই বটতলার ডাকে গোটা বাংলাদেশের তারুণ্য জেগেছে। ষাটের দশকে এখান থেকে রেনেসাঁ বা বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটেছে। গণজাগরণ ঘটেছে।
এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস-ঐতিহ্যের গৌরবময় যৌবনে উত্তাল সংগ্রামের ভিতর দিয়ে ডাকসু ভিপি তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে জাতির জীবনে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এসেছে। লৌহমানব-খ্যাত সেনানায়ক আইয়ুব খানের পতন ঘটেছে।
বিসুবিয়াসের মতো জ্বলে ওঠা তারুণ্যের আগুন গণআন্দোলন ও গণসংগ্রামের ঢেউ তুলেছে। ফাঁসির মঞ্চ থেকে সেদিন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান মুক্ত হয়ে লাখো মানুষের সমাবেশে ডাকসু ভিপি তোফায়েলের কণ্ঠে জনগণের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। এখান থেকে ডাকসু ও ছাত্রলীগ মিলে গঠিত স্বাধিকার স্বাধীনতার পথ ধরে তরঙ্গের মতো সারা বাংলার মানুষের হৃদয়ে হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের জায়গাটি আস্থা-বিশ্বাসের পরম আশ্রয় হয়ে উঠেছিল। সত্তরের নির্বাচনে জনগণ তাঁকে ব্যালট বিপ্লবে বাঙালি জাতির ভাগ্য নির্ধারণের একক নেতৃত্বের মঞ্চে বসিয়েছিল। ২৪ বছরের শোষণ-বঞ্চনার পর পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী সেই নির্বাচনে পরাজিত হয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করা দূরে থাক, স্বাধীনতাকামী মানুষের ওপর আক্রমণের প্রস্তুতি নিয়েছিল।
সেদিন বঙ্গবন্ধুর পর এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উঠে আসা যুব ও ছাত্র নেতারাই কার্যত মানুষের নয়নের মণি ও বঙ্গবন্ধুর শক্তির উৎস হয়ে উঠেছিলেন। ডাকসু ও ছাত্রলীগের নেতৃত্বে এখান থেকেই স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বের গণবিস্ফোরণ ঘটেছিল। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ, আদেশ ও ডাক সেদিন গোটা জনগণ চিন্তা-চেতনা ও হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করেছিল।
এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আ স ম আবদুর রবের হাত ধরে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলিত হয়েছিল। সেদিনের ছাত্রলীগ সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ, ডাকসু ভিপি আ স ম আবদুর রব ও ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক অকালপ্রয়াত আবদুল কুদ্দুস মাখনকে বীর বাঙালি ভালোবেসে চার খলিফা বলে ডেকেছিল। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী পল্টনে লাখো মানুষের সমাবেশে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভা থেকে স্বাধীনতার ইশতেহারই পাঠ করা হয়নি, বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন রাষ্ট্রের পিতা বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।
খবর৭১/এসঃ