খবর৭১ঃনাগরিকদের বাকস্বাধীনতা ও অবাধ মতামত প্রকাশের ওপর আরও কঠোর হল রাশিয়া। সরকারের শাসন কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালনা করতেই বৃহস্পতিবার এ আইন পাস করেছে দেশটির নিম্নকক্ষ দুমা।
আসছে সপ্তাহেই উচ্চকক্ষ উতরে গেলেই এ আইনে স্বাক্ষর করবেন পুতিন। নতুন আইনে বলা হয়েছে – ‘দেশ, সমাজ, সরকার এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরদ্ধে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি করা যাবে না, সমালোচনাও না।
সরকারি কোনো কর্মচারী-কর্মকর্তাকে অসম্মান করা যাবে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো পোস্ট বা মন্তব্য করা যাবে না।সরকারের এ আইন না মানলে তার বিরুদ্ধে জরিমানারও বিধান রাখা হয়েছে। এমনকি ১৫ দিনের জেল পর্যন্ত হতে পারে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
নতুন আইন অনুযায়ী, অনলাইন ইউজারদের ১ লাখ রুবেলস (১,১৫৫ পাউন্ড) পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে জরিমানার পরিমাণ দ্বিগুণ হবে। ইতিমধ্যে এ বিলের বিপক্ষে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সমালোচকরা বলছেন এর মাধ্যমে ক্রেমলিন ক্ষমতা জোরদারে বিরোধীদের টুঁটি চেপে ধরতে চাইছে।
দেশটিতে জনপ্রিয় কমিউনিস্ট আইনপ্রণেতা আলেক্সি কুরিন্নাই সাবধান করে বলেছেন, এ আইনের মাধ্যমে সরকার সমালোচকদের দমন করার চেষ্টা করবে। তিনি বলেন, নিজেদের জিজ্ঞেস করুন, কেন মানুষ তথাকথিত গুজবে বিশ্বাস করবে? কারণ তারা সরকারকে বিশ্বাস করে না। সরকার নিজেই মিথ্যা বলে আসছে। কিন্তু এসব মিথ্যা কখনও বিচারের মুখোমুখি হবে না।
এছাড়া অন্যান্য বিরোধী দলগুলোও এ আইনের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মস্কোর শোভা সেন্টারের প্রধান আলেকজান্ডার ভারকোভস্কি মন্তব্য করেন, রাশিয়ার পার্লামেন্ট নিয়ে ঠাট্টাতামাশা করলে বা প্রেসিডেন্ট পুতিনকে নিয়ে কোনো অশ্রদ্ধাসূচক মন্তব্য করলে তাকে অভিযুক্ত করা হবে। ভারকোভস্কির এই মন্তব্যে দেশজুড়ে ব্যাপক শোরগোল শুরু হয়েছে।
নতুন আইনটিতে অস্পষ্টতা রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। কারণ এ আইনের অপব্যবহার করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। আইন অনুযায়ী, অনলাইনে সরকারি কর্মকর্তাদের সমালোচনা করলে তা অসম্মানজনক বলে ধরে নেয়া হতে পারে। নতুন আইনে সরকারি কর্মকর্তারা কোনো সংবাদ ‘ফেক’ মনে করলে সেই মাধ্যমকে ব্লক করে দিতে পারবেন।
এ আইন কার্যত সেন্সরশিপ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এই আইন পাস হওয়ার পর যে সংগঠনটি সংবাদমাধ্যমের অধিকার নিয়ে বরাবর সরব হয়ে এসেছে সেই রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স জানিয়েছে, ‘এটা সেন্সরশিপের চেয়েও ভয়ংকর।’ নতুন এ আইনটি পাস হতেই পুতিনের ৩৩ শতাংশ সর্মথন কমে গেছে। গত ১৩ বছরের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় ধস।
এদিকে ‘রাশিয়ার নারীরা সুন্দরী, প্রতিভাবান আর মনোমুগ্ধকর’ -আন্তর্জাতিক নারী দিবসে রুশ নারীদের প্রশংসা করেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। নারী দিবস উদযাপন করতে গিয়ে শুক্রবার রাষ্ট্রীয় টিভিতে ভাষণ দেন তিনি। ভাষণে নারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘ঘর-গেরস্থালির সবকিছু তোমরাই সামলাও। এত ধকলের পরও তোমরা অনেক সুন্দর।’ ঘরের বাইরে সকল কাজে মানিয়ে নেয়া আর পরিবারের যত্ন নেয়ায় রুশ নারীদের প্রশংসা করে পুতিন বলেন, ‘আমাদের পুরুষদের খোলাখুলি স্বীকার করতেই হবে যে, কিছুক্ষেত্রে তোমাদের যোগ্য হওয়া আমাদের পক্ষে একেবারের সহজ ব্যাপার নয়।
খবর৭১/ইঃ