খবর৭১:হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।
সোমবার (৪ মার্চ) সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদারের রাজনৈতিক এই প্রতিপক্ষ একথা জানান।
রিজভী আহমেদ বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। আল্লাহ যেনো তাকে দ্রুত সুস্থ করে দেন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার কথা শুনছি। আমরা আগেই বলেছি বিএসএমএমইউ উন্নত চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট নয়। বেগম খালেদা জিয়া বিদেশ যেতে চাননি। দলের পক্ষ থেকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার দাবি জানানো হয়েছে।’
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আগামী ৬ মার্চ মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করে রিজভী বলেন, ‘গতকাল রবিবার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে অস্থায়ী আদালতে এসে খালেদা জিয়া বলেছেন, আমার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। খুবই অসুস্থ আমি। চিকিৎসকরা দরকারি চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন না।’
রিজভী বলেন, ‘দেশবাসীর প্রাণপ্রিয় নেত্রী নিজের মুখে এই প্রথম এমন ভয়াবহ অসুস্থতার কথা বললেন। তাঁর স্বাস্থ্যের চরম ক্রমঅবনতিতে দেশবাসীর মতো আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। এক পয়সাও তসরুপ না হলেও দুই কোটি টাকার সাজানো মিথ্যা মামলায় এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে বন্দি রেখে আর কত প্রতিহিংসার জ্বালা মেটানো হবে?’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন নানাভাবে আহবান এবং দাবি করে আসছি-দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তাঁর পছন্দমতো বিশেষায়িত হাসপাতালে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। তাঁকে জামিনে মুক্তি দিন। তাঁকে জেলে নেয়ার পর থেকে তিনি প্রচণ্ড অসুস্থ। দেশবাসী জানেন তিনি হাঁটতে পারছেন না। পা ফুলে গেছে। হাত অবশ। পুরনো রোগগুলো বেড়ে গেছে। চোখেও প্রচণ্ড ব্যথা। নির্যাতন সহ্য করতে গিয়ে তাঁর পূর্বের অসুস্থতা এখন আরও গুরুতর রূপ ধারণ করেছে। সার্ভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিসের জন্য কাঁধে প্রচণ্ড ব্যথা, হিপ-জয়েন্টেও ব্যথার মাত্রা প্রচণ্ড। ঝুঁকিপূর্ণ শরীর। প্রতি মুহূর্তে আমরা তাঁকে নিয়ে আশঙ্কায় থাকি।’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিএনপির পক্ষ থেকে বলবো- ৩ বার সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শুধু প্রতিহিংসাবশত: এমন নিষ্ঠুর বর্বরতম আচরণের অবসান ঘটান। তাঁকে মুক্তি দিন। জামিনে আর বাধা দিবেন না।’
রিজভী বলেন, ‘বেগম জিয়া বিদেশে চিকিৎসা নিতে যেতে চাননি, শুধু চেয়েছেন বাংলাদেশে বিশেষায়িত হাসপাতাল ও ব্যক্তিগত চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা নিতে। অথচ সেই সুযোগটুকুও তাঁকে দেয়া হয়নি। লোক দেখানোর জন্য তাঁকে কদিন পিজি হাসপাতালে রাখা হয়েছিল। কিন্তু বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘন করে প্রচণ্ড অসুস্থ বেগম জিয়াকে সুস্থ বলে ফেরত পাঠিয়েছে অন্ধকার কারাগারে।’
তিনি বলেন, ‘২৯ ডিসেম্বর মিডনাইট নির্বাচনের পর বাংলাদেশের দিকে সারাবিশ্বের নজর কাড়ছে এখন একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবিশ্বাস্য উত্থানে। ভোট ডাকাতির নির্বাচনে তথাকথিত নির্বাচিত সংসদ সদস্যরাও মাঝে মাঝে গণতান্ত্রিক পরিবেশের কথা বলে ফেলেন। তাদের মধ্যে মহাজোটের শরীক কোনো কোনো গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলছেন ‘নির্বাচনী ব্যবস্থাকে যথাযথ মর্যাদায় ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশে এখন গণতান্ত্রিক কোনো স্পেস নেই, গণতান্ত্রিক স্পেস তৈরি করতে হবে। আগের রাতে ভোট দেয়ায়, প্রার্থীদের বাধা দেয়ায়, মনোনয়ন পত্র ছিঁড়ে ফেলায়, উর্দ্ধ মহলের ক্লিয়ারেন্স আছে কিনা প্রার্থীদের নিকট এমন প্রশ্নও করেছে পুলিশ, টাকা ছড়ানো হচ্ছে-এই হলো বর্তমান ভোটের অবস্থা, ভোটের প্রতি এখন মানুষের কোনো আগ্রহই নেই।’
রিজভী বলেন, ‘এই বক্তব্যগুলো বিএনপি বা জোটের কোনো নেতার বক্তব্য নয়, এই বক্তব্য জাতীয় সংসদের আওয়ামী জোটের একজন বড় নেতার বক্তব্য। এখন প্রধানমন্ত্রী কি বলবেন? আমরা বারবার যে বলেছি-দুঃশাসনের কুয়াশা এসে ঢেকে দিয়েছে জনগণের শাসনকে-সেটি কি মিথ্যে? এখন আপনাদের ভেতর থেকেই কেউ কেউ বিবেকের তাড়নায় আসল সত্যটি প্রকাশ করে ফেলছেন। আপনি বন্দুকের শাসনে সমগ্র বাংলাদেশকে হতভাগাদের বসতি বানিয়েছেন। আপনার মতো নির্বাচনের স্টাইলগুলোকে এখন আন্তর্জাতিকভাবে বলা হচ্ছে-‘নির্বাচনী কর্তৃত্ববাদ’। ’
খবর৭১/জি