খবর ৭১ঃ রাজধানীর মানুষগুলো মৃত্যুর সঙ্গে বসবাস করছেন সরকার ব্যস্ত অবৈধ মসনদ সুরক্ষায় এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, ‘পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ ও বিভিষিকাময় অগ্নিকাণ্ডে নিহত প্রায় একশত মানুষের মৃত্যুতে গোটা জাতির সাথে আমরাও শোকাহত। আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে শনিবার সারা দেশে শোক দিবস পালন করছি। এখনো নিখোঁজ ১৫ জনের অধিক। হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে দগ্ধরা কাতরাচ্ছে। স্বজনদের কান্না আর বুক ফাটা আহাজারিতে আশপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। এই মিডনাইট অবৈধ সরকার পুরান ঢাকার মৃত্যুপুরির মৃত্যুর মিছিল নিয়ে কেবল বাগাড়ম্বর করছে। ভোট ডাকাতির সরকারের জনগণের প্রতি কোনো জবাবদিহিতা না থাকায় খামখেয়ালি আচরণ করছে। এখনো সরকারের পক্ষ থেকে কোনও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, তারা শুধু কথাই বলে যাচ্ছে। আগুন লাগা থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত তাদের আচরণ হলো ‘রোম যখন পুড়ছিল নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল’ অবস্থার মতো। পুরান ঢাকায় মৃত্যুর সঙ্গে বসবাস করছেন বাসিন্দারা। আর সরকার নিজেদের অবৈধ মসনদ সুরক্ষায় গ্রেফতার-মামলা-অত্যাচারে ব্যস্ত। তথাকথিত উন্নয়নের নামে পকেট ভারি করা হয়েছে, অথচ জনগণের জন্য বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়নি।’
রবিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
‘পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ ও বিভিষিকাময় অগ্নিকাণ্ডে বিএনপির সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখা উচিত’- তথ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, ‘এই ধরনের উদ্ভট লোককে তথ্যমন্ত্রী করে আমার মনে হয় সরকার অন্যায় করেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচিত তাকে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই প্রধান করা।’
চকবাজারের চুড়িহাট্টায় আগুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেগম জিয়াকে কেরানিগঞ্জে স্থানান্তর করা হতে পারে এ বিষয় দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে রিজভী বলেন, ‘আমাদের প্রিয় নেত্রী একটি ভুয়া মামলায় কারাগারে আছেন, স্থানান্তর নয় এই মুহূর্তে তাকে মুক্তি দিতে হবে। আমরা তার নিঃশর্ত মুক্তি চাই।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমি গভীর উদ্বেগ-উৎকন্ঠা এবং আতঙ্কের সঙ্গে বলছি- আমাদের প্রাণপ্রিয় দেশনেত্রী, বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা বেগম খালেদা জিয়াকে যে পরিত্যক্ত কারাগারে অবরুদ্ধ রাখা হয়েছে তার চারপাশে রাসায়নিক বিস্ফোরকের ডিপো। চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানসন থেকে নাজিমউদ্দিন রোডে দেশনেত্রীর কারা প্রকোষ্ঠের দূরত্ব মাত্র দেড় থেকে দুই শত মিটার। খুব কাছে হওয়ায় এই কারাগারের পুকুরে পাম্প বসিয়ে অগ্নিকাণ্ডের রাতে সেখান থেকে পাইপে নন্দ কুমার দত্ত রোড দিয়ে চুড়িহাট্টায় পানি নিয়েছিলো দমকল বাহিনী। বুধবার রাতভর আগুনের লেলিহান শিখা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পর বিস্ফোরণ ঘটেছে। আতঙ্কিত মানুষ দ্বিগবিদিক ছুটেছে। চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানসন থেকে আশপাশের আর ৫/৬টি ভবনে যখন আগুনের বিস্তৃতি ঘটেছে, দোকানপাট পুড়েছে তখন আতঙ্ক আরও বাড়তে থাকে। আগুনের ভয়াবহ লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের সড়কেও।’
‘সড়কে গাড়িতে যারা ছিলেন, রিকশায় যারা ছিলেন তারা দগ্ধ হয়েছেন। কেউ অঙ্গার হয়েছেন, কেউ আগুনে ঝলসে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। পুরো এলাকার বাসিন্দারা উৎকন্ঠা-আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান। আগুনে পুড়ে এবং ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হয়ে শতাধিক মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়ি পরিত্যক্ত কারাগারে একমাত্র বন্দি দেশনেত্রীকে নিয়ে। তিনি গুরুতর অসুস্থ। বসতে পারছেন না। হাঁটা চলা করতে পারছেন না। তাঁকে যখন কারাগারে নেয়া হয় তখন তিনি হেঁটে কারাগারে ঢুকলেন আর এখন তিনি হুইল চেয়ারে করে আদালতে আসছেন। সরকারের কি ভয়ঙ্কর নির্মমতা! চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের দিন সারারাত চারদিকে বিকট শব্দ, মানুষের আর্তচিৎকার, রাসায়নিক বিস্ফোরণের ভয়ঙ্কর ও বিকট শব্দ গ্রাস করেছিল আশপাশের সকল এলাকা। অল্প দূরত্বে নির্ঘুম উৎকণ্ঠায় কেটেছে চরম অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়ার। আর আমরা গভীর উৎকণ্ঠা নিয়ে মহান আল্লাহর কাছে তাঁর নিরাপত্তার জন্য দোয়া করেছি। তাঁকে এক অশুভ উদ্দেশ্যে ভয়াবহ বিপজ্জনক পরিবেশে বন্দি করে রেখেছে অবৈধ শাসকগোষ্ঠী।’
রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলতে চাই- দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কেন এধরনের শ্বাসরোধী পরিবেশে আটকে রেখেছেন? কেন তাঁর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন? আপনাকে এরকম বিস্ফোরন্মুখ বারুদের মাঝে বন্দি রাখা হলে কেমন লাগতো? কেন আপনি ৭৩ বছরের গুরুতর অসুস্থ তিন বারের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বন্দি করে রেখেছেন? কেন আপনি বিদ্বেষ-বুদ্ধি নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে আছেন? আপনি এবার প্রতিহিংসার আগুন থেকে নিবৃত্ত হোন। দেশনেত্রীকে মুক্তি দিন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেছেন, ‘সরকার চকবাজার ট্রাজেডির দায় এড়াতে পারে না।’ আমি সরকারকে বলবো এই ঘটনার দায় যেহেতু স্বীকার করেছেন এখন পদত্যাগ করুন। স্বচ্ছ ভোট জালিয়তির সাফল্যের মৌতাতে বুঁদ হয়ে থাকবেন না। দেশবাসীকে দয়া করে রেহায় দিন। পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য দেশে এই বিভীষিকাময় ঘটনা ঘটলে দায় স্বীকার করে সরকার পদত্যাগ করতো।’
সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস-চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, আহমেদ আযম খান, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ।